‘হয়রানি করছে পুলিশ’, এই নির্বাচনের অর্থ কী ‘জানতে চান’ খসরু
২১ জানুয়ারি ২০২১ ১৭:৩৯
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি নেতাকর্মীদের বাসায়-বাসায় গিয়ে পুলিশের হয়রানির অভিযোগ এনে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, ‘এই নির্বাচনের তো আর কোনো প্রয়োজন নেই, এই নির্বাচনের অর্থ কী?’
বিএনপির বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ ও মামলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘নেতাকর্মীরা যেখানে বাসায় থাকতে পারছে না, সেখানে হামলা করবে কিভাবে?’ বৃহস্পতিবার (২১ জানুয়ারি) নগরীর নুর আহমদ সড়কে নাসিমন ভবনে দলীয় কার্যালয় প্রাঙ্গনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে বিএনপি নেতাকর্মীদের হয়রানির অভিযোগ করে ক্ষুব্ধ আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘গত ২-৩ দিন ধরে শহরের পতেঙ্গা থেকে কালুরঘাট পর্যন্ত বিএনপির নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি হানা দিচ্ছে পুলিশ। বাড়িতে ঢুকে নেতাকর্মীদের হেনস্থা করছে, তাদের স্ত্রী-সন্তান, স্বজনদের হেনস্থা করছে। বাড়ি ঘেরাও করছে, বাড়ি ছেড়ে যেতে হুমকি দিচ্ছে। আমাদের সিনিয়র নেতা যারা আছে, সবার বাসায় পুলিশ গেছে। গতকাল একদিনে প্রকৃতপক্ষে চট্টগ্রাম শহরকে তছনছ করে ফেলেছে। কাউন্সিলর প্রার্থীদের বাড়ি গিয়ে বলছে এলাকা ছেড়ে চলে যেতে। প্রত্যেক কাউন্সিলর প্রার্থীর বাড়িতে পুলিশ গেছে।’
‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্ব হচ্ছে জনগণকে সুরক্ষা দেওয়া, নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি করা, সবাইকে সমান চোখে দেখা। কিন্তু তার বিপরীতে তারা নির্বাচন কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করছে। পদে পদে নির্বাচন যাতে সফল হতে না পারে তার জন্য কাজ করছে। সংবিধানে পরিস্কার বলা আছে, জনগণের প্রতিনিধি দেশ পরিচালনা করবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাজ হচ্ছে জনগণ যাতে নির্বিঘ্নে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারে সেই পথ তৈরি করা। অথচ আজ তারা জনগণ যাতে নির্বাচন করতে না পারে সেই পথ তৈরি করছে। এতে পরিস্কারভাবে তারা সংবিধানের বিরোধিতা করছে’, বলেন বিএনপির এ নেতা।
হামলার ঘটনা সাজিয়ে মামলা দেওয়া হচ্ছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘গতকাল ২০-৩০ হাজার লোকের মিছিল হয়েছে বিএনপির। রাতের মধ্যে ১০ জনকে তুলে নেওয়া হল। মিছিল কেন করল এটাই অপরাধ। আবার ষড়যন্ত্র করে মামলা দিচ্ছে। ঘটনাই হয়নি কিন্তু তারা ঘটনা সাজিয়ে মামলা দিচ্ছে। কারা মিছিলে আক্রমণ করছে, কারা বাড়িঘরে গিয়ে হুমকি দিচ্ছে, কারা হামলা চালাচ্ছে আর কারা মামলার আসামি হচ্ছেন…। বিএনপি হামলা করতে পারে এটা বাংলাদেশের কোনো লোক বিশ্বাস করতে পারে ? বাসায় থাকতে পারছে না, বাসার বাইরে গেলে হামলা-গ্রেফতারের শিকার হচ্ছে, বিএনপি কিভাবে হামলা করবে?’
তিনি আরও বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কিন্তু পরিকল্পিতভাবে নিরাপত্তাহীনতার পরিবেশ তৈরি করছে যাতে নির্বাচন থেকে মানুষ আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। যাদের সংবিধান, জনগণের ভোট, জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কথা, তারা যদি সেই পথটা বন্ধ করে দিতে চায়, তাহলে তো নির্বাচনের নামে প্রহসন করে কোনো লাভ নেই। এই নির্বাচনের তো আর কোনো প্রয়োজন নেই, এই নির্বাচনের অর্থ কি ? যারা ক্ষমতা দখল করতে পারে, দেশ দখল করতে পারে তাদের কাছে সিটি করপোরেশন নির্বাচনের কি কোনো দরকার আছে?’
সরকারকে ‘অনির্বাচিত’ এবং নির্বাচন কমিশনকে ‘তাঁবেদার’ উল্লেখ করে খসরু বলেন, ‘নাগরিকদের তাদের প্রতিনিধিত্ব নির্বাচনের যে ইচ্ছা, সেটা যাতে বন্ধ হয়ে না যায় সেজন্য দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও বড় দল হিসেবে আমরা নির্বাচনে এসেছি। বিএনপি অব্যাহতভাবে চেষ্টা করছে যাতে নির্বাচন ব্যবস্থা সচল থাকে। কিন্তু আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বী যারা, তারা কিন্তু নির্বাচন চায় না। বরং তারা নির্বাচনকে প্রতিরোধ করতে চায়। সেজন্য তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে পুরোপুরি ব্যবহার করছে। নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করতে গিয়ে তারা সাধারণ মানুষকে নির্যাতন করছে, বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর আঘাত হানছে।’
শেষপর্যন্ত বিএনপি নির্বাচনে থাকবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা এখনও নির্বাচনি কর্মকাণ্ড চালানোর চেষ্টা করছি। নির্বাচনের আর যে কদিন আছে, পরবর্তী দিনগুলো কিভাবে কাটবে সেটা আমাদের কাছে পুরোপুরি অনিশ্চিত। যেখানে পার্টি অফিসের ভেতরে লাঠিসোঠা নিয়ে ঢুকে হামলা করে, আগুন দেয়, বোমাবাজি করে, সিনিয়র নেতাদের গাড়ি ভাঙে সেখানে আগামী দিনে আরও কি কি হতে পারে, সেটা আমরা এখনও জানি না। আমাদের প্রার্থী শাহাদাত হোসেনের গাড়ি ভেঙেছে, সিনিয়র নেতা আবু সুফিয়ানের গাড়ি ভেঙেছে।’
‘তবে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের পর বাংলাদেশে আর কোনো নির্বাচন হবে কি না সন্দেহ আছে। বাংলাদেশের মানুষ আর নির্বাচন গ্রহণ করবে কি না সেটা নিয়েও সন্দেহ আছে’, বলেন আমীর খসরু।
সাংবাদিকদের সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়ে খসরু বলেন, ‘অনির্বাচিত লোক চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন দখল করলে লাভ কি হবে আপনারাই ভেবে দেখুন। আপনাদের সোচ্চার হতে হবে। না হলে দিনশেষে আপনারাও আক্রান্ত হবেন। আপনারাও রক্ষা পাবেন না। অনেক সাংবাদিক দেশ ছেড়ে চলে গেছেন। অনেকে মামলার আসামি হয়েছেন, জেলে গেছেন। অনেকে দেশ থেকে চলে যাবার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। যারা এখনও সাংবাদিকতা করছেন আপনারা লিখতে পারছেন না। আপনারা মূলত ম্যানেজারের কাজ করছেন, কেরানির কাজ করছেন। যারা ক্ষমতা দখল করে তারা চায় না মিডিয়া স্বাধীনভাবে কাজ করুক, টিকে থাকুক। তারা শুধু চায় তাদের পক্ষে যারা লিখবে তারা টিকে থাকুক।’
বিএনপি নির্বাচনকে বিতর্কিত করতে চায়, আওয়ামী লীগের এমন সমালোচনার জবাবে খসরু বলেন, ‘নির্বাচন বিতর্কিত হওয়ার কি আর কিছু বাকি আছে বাংলাদেশে? বিএনপির কি প্রয়োজন আছে, বাংলাদেশের প্রত্যেকটি মানুষের মনেই তো নির্বাচন বিতর্কিত। যে চুরি করছে সেও জানে এই নির্বাচন বিতর্কিত, যার ভোট চুরি হচ্ছে সেও জানে এই নির্বাচন বিতর্কিত। বাংলাদেশে নির্বাচনের আর কোনো গ্রহণযোগ্যতা নেই।’
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়েছে, বুধবার সন্ধ্যার পর থেকে চট্টগ্রাম নগর বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক এস কে খোদা তোতন, এস এম সাইফুল আলম, শফিকুর রহমান স্বপন, বিএনপি প্রার্থীর মিডিয়া সেলের সদস্য ইদ্রিস আলী, মনজুর আলম মনজুসহ অনেক নেতার বাসায় অভিযান চালায় পুলিশ।
এছাড়া বুধবার রাতে নগরীর নাসিমন ভবনে বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে ছাত্রলীগের পরিকল্পিত হামলার অভিযোগ করা হয় সংবাদ সম্মেলনে। এসময় বিএনপির মেয়র প্রার্থী শাহাদাত হোসেন, নগর কমিটির সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর, দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহবায়ক আবু সুফিয়ান, সাবেক মন্ত্রী জাফরুল ইসলাম চৌধুরীসহ দলটির সিনিয়র নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
সারাবাংলা/আরডি/এমও