Wednesday 11 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

লকডাউনের ১ বছর: উহানের কী অবস্থা?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
২২ জানুয়ারি ২০২১ ২২:৫৪

বিশ্বে প্রথমবারের মতো ২৩ জানুয়ারি ২০২০ সালে চীনের হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহান শহর লকডাউন ঘোষণা করা হয়। এ শহর থেকেই করোনা মহামারির সংক্রমণ শুরু হয়। সে সময়ে একেবারে নতুন ধরনের কঠোর বিধিনিষেধ এবং তার কঠোরতর বাস্তবায়নের সামরিক/আধা সামরিক মহড়া দেখে হতবিহবল হয়ে পড়ে বিশ্ববাসী।

চীনের কর্তৃপক্ষ জনগণের ওপর কর্তৃত্ব জারি রাখার সর্বোচ্চ নিদর্শন দেখিয়ে, জানুয়ারির শেষ দিক থেকে জুন পর্যন্ত উহানকে দেশটির অন্যান্য অঞ্চল থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন করে রাখে।

যদিও সর্বপ্রথম চীনের লকডাউনের সিদ্ধান্তের কারণে বিশ্ববাসীকে চরম মূল্য দিতে হয়েছে। কিন্তু দিন শেষে করোনা সংক্রমণ মোকাবিলার সবচেয়ে সফল কৌশল হিসেবে বিশ্বের সবখানেই লকডাউনের পরামর্শই এসেছে। এই বছরব্যাপী করোনা সংক্রমণ মোকাবিলায় চীনের মডেলকে প্রায়ই আদর্শ হিসেবে ধরা হয়েছে।

করোনা মোকাবিলার চীনা মডেল

২০১৯ সালের শেষের দিকে যখন প্রথম করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হয় তখন দেশটির কর্তৃপক্ষ ‘রহস্যময় অসুস্থতা’ উল্লেখ করে ‘ধীরে চলো’ নীতিই নিয়েছিল। ২০২০ সালের জানুয়ারির শেষ দিকে ছিল চীনাদের সবচেয়ে বড় উৎসব চন্দ্র নববর্ষ, চীনের কর্তৃপক্ষ উহান বাদে সবখানে তার নির্বিঘ্ন উদযাপন হতে দিয়েছে।

এ ব্যাপারে, চলতি সপ্তাহের শুরুর দিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) তদন্ত দল করোনার উৎস অনুসন্ধানে উহানে পৌঁছে একট অন্তর্বর্তীকালীন প্রতিবেদনে বলেছে, কর্তৃপক্ষ প্রথম পদক্ষেপ নিতে ধীর গতিসম্পন্নতার পরিচয় দিয়েছে। তারা সেই সময়কার সরকারি পদক্ষেপের সমালোচনা করে বলেছে – চীন চাইলে প্রথম থেকেই জনস্বাস্থ্যের এই ইস্যুতে নাগরিকদের ওপর বাধ্যবাধকতা আরোপ করতে পারতো।

কিন্তু, যখনই চীন বুঝতে পারে সমস্যা গুরুতর তখনই কঠোরভাবে মোকাবিলা করার সিদ্ধান্ত নেয়।

জানুয়ারির ২৩ তারিখ

চন্দ্র নববর্ষ উদযাপনের দুই দিন আগে উহানের রাস্তা জনশূন্য হয়ে পড়ে। ১১ মিলিয়ন মানুষকে বাধ্যতামূলক কঠোর কোয়ারেনটাইনে পাঠানো হয়। অতি জরুরি প্রয়োজনে বাইরে গেলেও মুখে মাস্ক এবং শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা আবশ্যক করা হয়। বিশ্ববাসীকে অবাক করে দিয়ে তারা মাত্র কয়েকদিনের মধ্যে করোনা আক্রান্তদের পুরোপুরি আলাদা রেখে চিকিৎসার স্বার্থে বিশাল ফিল্ড হাসপাতাল তৈরি করে ফেলে।

পরে, উহানে যে কৌশলে ভাইরাস মোকাবিলা করা হয়েছিল। চীনের অন্যান্য বড় শহর বেইজিং এবং সাংহাইয়েও সেই একই কৌশল তাৎক্ষণিক লকডাউন এবং ব্যাপকহারে করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়।

ইতোমধ্যেই, আন্তর্জাতিক সীমান্ত অতিক্রম করে চীনে প্রবেশের ক্ষেত্রে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয় সেই সঙ্গে বিমানবন্দর থেকেই বাধ্যতামূলক কোয়ারেনটাইনের ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু, প্রথম দিকে ভাইরাস সংক্রমণের খবর যেন ছড়িয়ে না পড়ে, সে ব্যাপারেও ছিল কঠোর অবস্থানে ছিল চীনের কর্তৃপক্ষ।

যেসব চিকিৎসক একে অপরকে সতর্ক করার চেষ্টা করেছিল, তাদের মুখ বন্ধ করতে রাষ্ট্র কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছিল। এদের মধ্যে একজন ছিলেন ডা. লি ওয়েনলিয়াং যিনি পরে করোনা সংক্রমণে মারা যান। সংবাদ মাধ্যমগুলো প্রাথমিকভাবে কিছু প্রতিবেদন করতে পারছিলেন। কিন্তু স্বাধীন নাগরিক সাংবাদিক যারা উহান থেকে খবর দিচ্ছিল তাদেরকে চুপ করিয়ে দেওয়া হয়। সম্প্রতি তাদের একজনকে চার বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

করোনা মোকাবিলায় চীনের পদক্ষেপের কার্যকারিতা

যদিও, চীনের লকডাউনের পদক্ষেপ মানুষের কাছে প্রথম দিকে কঠোর মনে হয়েছিল। কিন্তু এক বছর পর অফিসিয়াল তথ্যে দেখা যাচ্ছে, লকডাউনের পদক্ষেপ নেওয়ায় তুলনামূলক কম মৃত্যু হয়েছে এবং শনাক্তের হার অনেকটাই কমে এসেছে।

চীনে করোনায় মোট আক্রান্ত হয়েছেন এক লক্ষ মানুষ আর মৃত্যু হয়েছে চার হাজার আটশ মানুষের। অন্যান্য দেশের মত প্রাথমিক সংক্রমণের পর সংখ্যাটা একেবারে কমে আসে এবং সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ প্রায় দেখাই যায়নি। তবে, চীন সরকারিভাবে যে হিসাব দিয়েছে সেখানে উপসর্গবিহীন করোনা আক্রান্তদের ব্যাপারে কোন তথ্য দেয়নি, তাই কিছু পর্যবেক্ষক এই তথ্যের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

এখন উহানের কী অবস্থা?

এক বছর পর এখন উহানে জীবন অনেকটাই স্বাভাবিক। গত সপ্তাহেই বিবিসির সাংবাদিক উহানে গিয়েছিলেন, মানুষের কাছে তিনি জানতে চেয়েছিলেন তাদের জীবন এখন কেমন – বিধিনিষেধ থাকার কারণে উহান এবং চীনের অন্যান্য অংশের পূর্ণাঙ্গ চিত্র পাওয়া কঠিন ছিল।

তবে, এটা নিশ্চিত হওয়া গেছে যে, ২০২০ সাল মানুষকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করেছে। আবার, উহানের অধিবাসীদের সঙ্গে সম্প্রতি কথা বলতে গিয়ে বিবিসি’র সংবাদদাতা দেখেছেন তাদের কেউ কেউ আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে শঙ্কা বোধ করছে।

হ্যান মেইমেই নামে উহানের এক বাসিন্দা বিবিসি চাইনিজকে বলেছেন, মহামারি নিশ্চিতভাবেই পেছনে কিছু অভিজ্ঞতা ফেলে যাচ্ছে, যেগুলো হয়ত সামগ্রিকভাবে দৃষ্টি এড়িয়ে যাবে।

এত কিছুর পরও, বেইজিংয়ের কয়েকজন অধিবাসী বিবিসিকে জানিয়েছেন, তারা মনে করেন সরকার মহামারি ভালোভাবেই সামাল দিয়েছে।

কিন্তু, নাগরিকদের জন্য মহামারি ছিল পারস্পারিক ঐক্য এবং যোগাযোগের নতুন ধারণা তৈরির হাতিয়ার। উহানের একজন ছাত্র, যিনি নিজেকে লি সি বলে পরিচয় দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, মহামারির আগে সবাই খুব বদমেজাজী আর দৌড়ের ওপর থাকতো, কিন্তু মহামারির পর তারা জীবনের প্রতি আরও বেশি কৃতজ্ঞ এবং অনেক বেশি আন্তরিক হয়েছে। এই ধরণের বিপর্যয় মানুষকে আরও কাছাকাছি নিয়ে এসেছে বলেও মত দিয়েছেন অনেক চীনা নাগরিক।

সারাবাংলা/একেএম

উহান করোনাভাইরাস কোভিড-১৯ চীন টপ নিউজ লকডাউন


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর