Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘স্বপ্নের বিরিয়ানি’ খাওয়াতে চান না রেজাউল, সেবার জন্য ৩৭ দফা

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২৩ জানুয়ারি ২০২১ ১৪:৩৭

চট্টগ্রাম ব্যুরো: ১৯৯৪ সালে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচনে ২৮ দফা উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি নিয়ে ভোটের মাঠে লড়েছিলেন এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী। ১১ বছর পর ২০১৫ সালে ৩৫ দফা উন্নয়নের স্বপ্ন দেখিয়ে ভোটের মাঠে লড়েছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা আ জ ম নাছির উদ্দীন। মহিউদ্দিন-নাছিরের উত্তরসূরী রেজাউল করিম চৌধুরী দিয়েছেন ৩৭ দফা উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি।

শনিবার (২৩ জানুয়ারি) সকালে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে দলের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে নিয়ে নির্বাচনি ইশতেহার ঘোষণা করেন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরী।

বিজ্ঞাপন

ইশতেহারে ঘোষিত ৩৭ দফায় ‘সাড়া জাগানো’ তেমন কোনো প্রতিশ্রুতি নেই, স্বপ্ন দেখানোর ‘বাড়াবাড়ি’ও নেই— লিখিত বক্তব্যে সেটি অকপটে স্বীকার করে নিয়েছেন নৌকার মেয়র প্রার্থী রেজাউল করিম। তিনি বলেন, ‘অঙ্গীকারের স্বপ্নের কাচ্চি বিরিয়ানি নয়, নগরের বিপুল জনগোষ্ঠীকে ন্যূনতম সেবা দিতে পারাটাই আসল যোগ্যতা। সবার সহযোগিতা পেলে যোগ্যতার পরীক্ষায় জিতব বলে আন্তরিকভাবে বিশ্বাস করি‌।’

ইশতেহার পাঠ করেন প্রার্থী নিজেই। এসময় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য শিক্ষাবিদ অনুপম সেন, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন, উত্তর জেলা কমিটির সভাপতি এম এ সালাম, নগর কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন, দক্ষিণ জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।

ইশতেহারে রেজাউল করিম নগর উন্নয়ন ও পরিচালনায় ৩৭ দফা প্রতিশ্রুতির মধ্যে প্রধান হিসেবে গুরুত্ব দিয়েছেন জলাবদ্ধতা নিরসনকে। উল্লেখ করেছেন ১০০ দিনের অগ্রাধিকার কর্মসূচিও। তবে এই অগ্রাধিকার পরিকল্পনায় নেই নগরীর এই মুহূর্তে দৃশ্যমান সবচেয়ে বড় সমস্যা মশার উৎপাত নিরসনের কথা। বিষয়টি নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখেও পড়েন রেজাউল। জবাবে তিনি বলেন, ‘মশার অত্যাচারের কথাটা সত্য। সবার সঙ্গে পরামর্শ করেই সমস্যার সমাধান করা হবে। এই শহর যেমন মেয়রের, এই শহর একজন সাংবাদিকেরও, একজন ডাক্তারেরও। এটুকু বলতে পারি, কারও সঙ্গে পরামর্শ না করে কোনো সিদ্ধান্ত নেব না।’

বিজ্ঞাপন

৩৭ দফা প্রতিশ্রুতিতে আরও আছে— যানজট সমস্যা থেকে উত্তরণ, সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা, নালা-নর্দমা ও খাল-নদী দখলদার উচ্ছেদ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, পর্যটন রাজধানী হিসেব চট্টগ্রামকে গড়ে তোলা, হোল্ডিং ট্যাক্স এবং চলমান উন্নয়ন প্রকল্পে সমন্বয়কের ভূমিকা পালনের প্রতিশ্রুতি দেন মেয়র প্রার্থী রেজাউল করিম।

জলাবদ্ধতা নিরসনে চলমান মেগা প্রকল্পগুলো ঠিকমতো বাস্তবায়নেই সর্বোচ্চ মনযোগ দেওয়ার কথা বলেন রেজাউল। নগরীর দখল হয়ে যাওয়া খাল-নালা-নদী পুনরুদ্ধার ও পানি নিষ্কাশনের উপযোগী করতে ১০০ দিনের মধ্যে সব ত্রুটি ও প্রতিবন্ধকতা চিহ্নিত করে তা নির্মূলে আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করবেন বলেও জানান তিনি।

যানজট নিরসনে সংশ্লিষ্ট সবপক্ষের সঙ্গে বসে যত দ্রুতসম্ভব তা দূর করার দিকে মনযোগ দেবেন বলে রেজাউলের আশ্বাস। সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে ডিজিটাল ট্রাফিক সিস্টেম ও নিরাপদ পথচারী পারাপারে আন্ডারপাস চালু করতে চান রেজাউল। নালা, খাল, নদীর দখলদার উচ্ছেদে অভিযান চালানোর পাশাপাশি খাল নদীর নাব্যতা ফেরাতে চান রেজাউল করিম।

বর্জ্য অপসারণে নজরদারি বাড়ানো, পলিথিন ও প্লাস্টিক বর্জ্যের ডাম্পিং ইয়ার্ড করে রিসাইক্লিং প্ল্যান্ট তৈরির আশ্বাস দেন তিনি। পর্যটন সুবিধা কাজে লাগিয়ে ও সৈকত পর্যটনের আধুনিক সুবিধা যোগ করে নগর উন্নয়নে বাড়তি আয়ের ওপর জোর দিতে চান তিনি।

২০১৫ সালে মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী গৃহকর বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছিলেন। তখন এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন। গৃহকর নিয়ে বিতর্ক এড়াতে রেজাউল ডিজিটাল গৃহশুমারির প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, বাড়িওয়ালা-ভাড়াটিয়া কেউ যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হন, সেভাবে যৌক্তিক হারে গৃহকর নির্ধারণ করা হবে। নাগরিক সেবা চালু রাখতে করদাতাদের স্বচ্ছতা দায়বদ্ধতাও পূর্বশর্ত বলে তিনি মন্তব্য করেন।

অপরিকল্পিত স্থাপনা তৈরি, সড়ক ও ফুটপাত দখল কঠোরভাবে নিরুৎসাহিত করার কথাও জানান রেজাউল। স্বল্প খরচে শিক্ষার মানসম্মত বিকাশে সর্বোচ্চ মনযোগ দেয়ার কথা জানান তিনি।

আওতার বাইরে স্বাস্থ্যসেবা সিটি করপোরেশনের ওপর বাড়তি চাপ তৈরি করে দাবি করে রেজাউল এই খাতে নগরীর ধনাঢ্য ব্যক্তি এবং করপোরেট গ্রুপগুলোকে যুক্ত করার ইচ্ছার কথা জানান। এছাড়া আর্থিক সহায়তা পেলে সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে মেডিকেল কলেজ ও পাঁচশ শয্যার হাসপাতাল চালুর ‘বড়’ প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন তিনি।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সব কার্যক্রমকে ডিজিটাল নেটওয়ার্কের আওতায় আনারও প্রতিশ্রুতি রেজাউলের। ইশতেহারে বলা হয়, রাজস্বসহ সব সেবা খাতে পূর্ণাঙ্গ ডাটাবেজ তৈরি করে সব সেবাকে ওয়ানস্টপ ডিজিটাল সার্ভারের আওতায় আনা, সমন্বয় করে নগরীর সব উন্নয়ন ও সেবাখাতকে এক ছাতার নিচে আনার ব্যবস্থা করা, সাইবার দূষণ ও আসক্তি নির্মূলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে খেলার মাঠ রাখার ওপর জোর দেওয়া, রাস্তায় যত্রতত্র পার্কিং ও ফুটপাত দখল নিয়ন্ত্রণ, খেলা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড বাড়ানো, পাহাড় কাটা বন্ধ ও জলাধার-পুকুর দিঘী ভরাট কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ, কিশোর অপরাধ গ্যাং, মাদক ও অপরাধের আখড়া গুঁড়িয়ে দেওয়া এবং নাগরিক তথ্যসেবাসহ সব সেবা কেন্দ্রীয় সার্ভার নেটওয়ার্কের আওতায় থাকবে।

নগরীতে রাত ১০টার পর মাইকের ব্যবহার বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন রেজাউল। এছাড়া কর্ণফুলী ও হালদা নদী দখল ও দূষণ থেকে রক্ষা করে লঞ্চ-স্টিমার চালুর আশ্বাসও দিয়েছেন তিনি।

অতীতের সব ভুল ছুঁড়ে ফেলে চট্টগ্রামকে সর্বাধুনিক বাস উপযোগী বিশ্বমানের উন্নত ও নান্দনিক নগর হিসেবে গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী। তিনি বলেন, ‘অতীতে অনেকে অনেক পদক্ষেপ নিয়েছে, উনাদের চিন্তার সঙ্গে আমার চিন্তা নাও মিলতে পারে। হোল্ডিং ট্যাক্স মওকুফ নয় সহনীয় রাখা যায়। সব মতের মানুষের মতামত নিয়ে অতীতকে ফেলে নতুনের দিকে এগুতে চাই। এই চট্টগ্রাম প্রত্যেকের। সবার সঙ্গে পরামর্শ করে সবার মেধাকে কাজে লাগাব। সেই পরামর্শ যদি মানুষের উপকারের হয়, টেকসই হয়, বাস্তবায়নযোগ্য হয় তাহলে সব কাজে লাগাব।’

চসিকের ১২০০ কোটি টাকার দেনা নিয়ে রেজাউলকে করা সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। তিনি বলেন, ‘দেনা ১২০০ কোটি টাকা না, এক হাজার কোটি টাকার মতো। বারবার শুধু এক কথা বলেন, দেনা। আপনাদের জানতে হবে যে সিটি করপোরেশনের একটা ম্যাচিং ফান্ড আছে। অর্থাৎ প্রকল্প গ্রহীতাকে প্রকল্প ব্যয়ের সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ বহন করতে হয়। বাস্তবতা হচ্ছে, সিটি করপোরেশন সেই ম্যাচিং ফান্ড দিতে সক্ষম নয়। এটা নিয়ে এত অস্থির হওয়ার কিছু নেই। সরকার অবগত আছে।’

ইশতেহার ঘোষণার আগে দেওয়া বক্তব্যে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বলেন, ‘নেত্রী নৌকা প্রতীক যাকে দিয়েছেন তিনি চট্টগ্রামের মানুষের কাছে একজন সৎ, সাদামনের মানুষ। তিনি মুক্তিযোদ্ধা। ছাত্রজীবনে তিনি জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে নানা দায়িত্ব পালন করেছেন। প্রয়াত নেতা মহিউদ্দিন চৌধুরী যেভাবে চট্টগ্রামকে গড়ে তোলার চেষ্টা করেছেন, সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখে নগরীকে আধুনিক চট্টগ্রাম হিসেবে গড়ে তুলবেন। আশা করি চট্টগ্রামবাসী নৌকার পক্ষে রায় দেবে।’

ছবি: শ্যামল নন্দী

সারাবাংলা/আরডি/টিআর

৩৭ দফা টপ নিউজ নির্বাচনি ইশতেহার নৌকার মেয়র প্রার্থী মেয়র প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরী

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

কানপুরে প্রথম দিনে বৃষ্টির দাপট
২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৬:৩৫

সম্পর্কিত খবর