কাশিমপুরে নারীসঙ্গ নতুন নয়, বাবাও হয়েছেন ২ কয়েদি!
২৬ জানুয়ারি ২০২১ ১১:৪১
ঢাকা: সম্প্রতি গাজীপুর কাশিমপুর কারাগারে হলমার্কের জিএম তুষার আহমেদের সঙ্গে এক নারীর অন্তরঙ্গ সময় কাটানোর ঘটনায় নড়েচড়ে উঠেছেন সংশ্লিষ্টরা। এই ঘটনাকে ‘জঘন্য’ বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। সমালোচনায় মুখর হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার রত্না রায়, জেলার, ডেপুটি জেলারসহ পাঁচ কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। গঠন হয়েছে তদন্ত কমিটিও। কিন্তু এই ধরনের ঘটনা কি কারাগারে এই প্রথম? সূত্র বলছে, এমন ঘটনা আগেও ঘটেছে ব্যাপক হারে। বরং বর্তমানে কারাগারে সিসিটিভি স্থাপনের ফলে কমে গেছে এসব অবৈধ কর্মকাণ্ড।
কারাগারের উর্ধ্বতন এক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সেখানে এরকম ঘটনা আগেও ঘটেছে। সবাইকে ম্যানেজ করেই প্রভাবশালী আসামিরা করেছেন মনোরঞ্জনের ব্যবস্থা। কোনো কোনো ঘটনা জানাজানি হলে গঠন করা হতো নামকাওয়াস্তে কমিটি। কিন্তু কারো শাস্তির নজির নেই। তবে সিসি ক্যামেরা লাগানোর পর থেকেই বিষয়গুলো সামনে চলে আসে।
ওই কর্মকর্তা জানান, সিসি ক্যামেরা লাগানোর পর ভিন্ন উপায়ে চলছে এই বাণিজ্য। আদালতে হাজিরা শেষে কয়েদীদের বাসায় যাওয়ার সুযোগও করে দিয়েছে কিছু অসাধু পুলিশ সদস্য। বাসার বাইরে চলেছে পুলিশ প্রহরা। যানজটের অজুহাতে রাতের কোনো এক সময়ে কারাগারে পৌঁছেছে তারা।
জানা গেছে, প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে শীর্ষ সন্ত্রাসী ইয়াসীন খান পলাশ ওরফে কাইল্যা পলাশ। অথচ ৮ বছর আগে তার একটি মেয়ে সন্তান হয়। তার স্ত্রী মাহমুদা খানমের দাবি, ওই সন্তানের বাবা কারাগারে থাকা পলাশ। ঢাকার আদালতে যখন হাজিরা দিতে আসতেন তখন রামপুরার বাসায় ঢুকতেন। কখনো দুই চার ঘণ্টা আবার কখনো পুরো দিন কাটাতেন। কাশিমপুর, রাজশাহী, দিনাজপুর ও মুন্সিগঞ্জ কারাগার ঘুরে এখন তিনি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে থাকেন। ২০০২ সালের ২৯ মে রামপুরায় যুবদল নেতা মিজানকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় ২০০৩ সালে গ্রেফতারের পর থেকেই কারাগারে রয়েছেন পলাশ। ওই ঘটনায় আদালত মৃত্যুদণ্ডের রায় দেন। পরে উচ্চ আদালতে আপিল করা হলে সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন হয় তার। ২০১২ সালে তার একটি মেয়ে সন্তান হয়। অন্যদিকে ঠিক একই ঘটনা ঘটেছে ঢাকার আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাসের ক্ষেত্রেও। প্রায় ১৬ বছর ধরে কারাবন্দি তিনি। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, ৪ বছর আগে ছেলে সন্তানের বাবাও হয়েছেন তালিকাভুক্ত ২৩ শীর্ষসন্ত্রাসীর অন্যতম কিলার আব্বাস।
ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ আদালত ভবনের সামনে এবং রাজধানীর কাফরুল থানাধীন কচুক্ষেত এলাকায় প্রকাশ্যে দুই ব্যবসায়ীকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় হওয়া মামলায় ২০০৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি গ্রেফতার হয়েছিলেন ছাত্রলীগের সাবেক এ নেতা। সেই থেকে কারান্তরীণ। বর্তমানে তিনি গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে (পার্ট-২) আছেন।
আব্বাসের স্ত্রী হামিদা বেগমের দাবি, তার ছেলের বাবা কারাগারে থাকা আব্বাস। তিনি পুলিশকে ম্যানেজ করে মিরপুরের বাসায় আসতেন। দীর্ঘ সময়ও কাটাতেন। ছেলের বয়স এখন প্রায় ৬ বছর। তার ক্যান্সার হয়েছে। বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ডের একাধিক হাসপাতালে তার ছেলের চিকিৎসা চলছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোমিনুর রহমান মামুন সারাবাংলাকে বলেন, কাইল্যা পলাশ ও কিলার আব্বাসের সন্তানের বাবা হওয়ার বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে তুষার আহমেদের নারীসঙ্গর বিষয়টি এরইমধ্যে নজরে এসেছে। এ ঘটনায় একটি কমিটি তদন্ত করছে। তদন্তের স্বার্থে এরইমধ্যে সিনিয়র জেল সুপার রত্না রায়, জেলার, ডেপুটি জেলারসহ পাঁচ কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করে অধিদফতরে সংযুক্ত করা হয়েছে। কমিটি প্রতিবেদন দিলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সারাবাংলা/ইউজে/এএম