যে কারণে তালিকায় থেকেও প্রথম দিন ভ্যাকসিন পেলেন না এমপিসহ ৬ জন
২৮ জানুয়ারি ২০২১ ০১:০৬
ঢাকা: দেশে নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে ভ্যাকসিন প্রয়োগ কর্মসূচি। রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে প্রথম দিন মোট ৩২ জনকে এই ভ্যাকসিন দেওয়ার কথা ছিল। তবে তালিকা থেকে ভ্যাকসিন পেয়েছেন ২৬ জন। অর্থাৎ বাদ পড়েছেন ছয় জন। এর মধ্যে অনুপস্থিত থাকায় দুই জনকে ভ্যাকসিন দেওয়া যায়নি। শারীরিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এই তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে বাকি চার জনকে।
বুধবার (২৭ জানুয়ারি) বিকেলে রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে আনুষ্ঠানিকভাবে ভ্যাকসিন প্রয়োগ কর্মসূচির উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি গণভবন প্রান্ত থেকে ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে যুক্ত ছিলেন। আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণার পর প্রথম পাঁচ জনকে ভ্যাকসিন প্রয়োগের পুরোটা সময়ই তিনি সবার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, তাদের সাহস জুগিয়েছেন।
আরও পড়ুন-
আরও পড়ুন-
- ভ্যাকসিন প্রয়োগে প্রস্তুত ৫ হাসপাতাল
- এ ভ্যাকসিন সবচেয়ে নিরাপদ: স্বাস্থ্যমন্ত্রী
- প্রথম যে ৫ জন পেলেন করোনার ভ্যাকসিন
- দেশে করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরু
- ‘ভ্যাকসিন নিতে ব্যথা পাইনি, খারাপও লাগছে না’
- ‘লক্ষ্য ছিল জনগণের সুরক্ষা, সেভাবেই ভ্যাকসিন পেয়েছি’
- প্রধানমন্ত্রীকে দেখে সব ভয় কেটে গেছে— রুনু ভেরোনিকা কস্তা
- ‘জয় বাংলা’য় উজ্জীবিত ভ্যাকসিন হিরোরা, প্রধানমন্ত্রীর অভিবাদন
- ‘ভালো না লাগা’ রোগের ভ্যাকসিন আছে কি না জানি না: প্রধানমন্ত্রী
- জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতেই ভ্যাকসিন নিয়েছি— ট্রাফিক সার্জেন্ট দিদারুল
ভ্যাকসিন প্রয়োগের সূচনা হয় হাসপাতালটির সিনিয়র স্টাফ নার্স রুনু ভেরোনিকা কস্তাকে ভ্যাকসিন দেওয়ার মাধ্যমে। এরপর একই হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. আহমেদ লুৎফুল মোবেন, স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক মতিঝিল বিভাগের কর্মকর্তা দিদারুল ইসলাম ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম ইমরান হামিদকে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়।
এরপর আরও ২৭ জনকে ভ্যাকসিন দেওয়ার কথা ছিল কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে। তবে এখানে ভ্যাকসিন প্রয়োগ কর্মসূচির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নিউরোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. মো. মেহেদী হাসান সারাবাংলাকে জানিয়েছেন, বয়স ও শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় চার জনকে এই ভ্যাকসিন দেওয়া যায়নি। বাকি দু’জন এদিন আসেননি ভ্যাকসিন নিতে। যাদের ভ্যাকসিন দেওয়া যায়নি, তাদের শারীরিক সমস্যার কথা অবশ্য সুনির্দিষ্টভাবে বলতে রাজি হননি ডা. মেহেদী।
এখানকার ভ্যাকসিন প্রয়োগে দায়িত্বপ্রাপ্ত আরেক চিকিৎসক নাম প্রকাশ না করার শর্তে সারাবাংলাকে বলেন, মোহাম্মদ শাহজাহান ও রফিকুল আলমের নাম তালিকায় থাকলেও তারা দু’জন অনুপস্থিত ছিলেন। বাকিদের মধ্যে তালিকায় থাকা প্রথম সাত জনকেই ভ্যাকসিন দেওয়া হয়। তালিকার ৮ নম্বরে থাকা আবদুল মালেককে ভ্যাকসিন দেওয়া সম্ভব হয়নি শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা থাকার কারণে। সুনির্দিষ্টভাবে বললে তার অ্যাজমা রয়েছে। একইভাবে অ্যাজমাজনিত সমস্যা থাকায় এনামুল হাসান নামের একজনকেও ভ্যাকসিন দেওয়া হয়নি। উনি একদম শেষ মুহূর্তে এসে এই সমস্যার কথা জানিয়েছিলেন। তাকে বুঝিয়ে বলা হয়েছে, এ সমস্যার কারণে এখনই ভ্যাকসিন পাবেন না তিনি।
প্রথম দিনেই ভ্যাকসিন নেওয়ার তালিকায় ছিলেন সিলেট-৫ আসনের সংসদ সদস্য হাফিজ আহমেদ মজুমদারও। তবে বয়স ও শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় আগ্রহ থাকলেও ভ্যাকসিন নেননি তিনি।
কুর্মিটোলা হাসপাতালের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই চিকিৎসক বলেন, সংসদ সদস্য হাফিজ আহমেদ মজুমদার ভ্যাকসিন নিতে এসেছিলেন। তিনি ফরমও পূরণ করেছিলেন। কিন্তু পরে তার সহকারী সহকারী (এপিএস) আমাদের জানান, তিনি ভ্যাকসিন নেবেন না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির চেয়ারম্যান হাফিজ আহমেদ মজুমদার সারাবাংলাকে বলেন, ‘হ্যাঁ, আমি ভ্যাকসিন নিতে আগ্রহী ছিলাম। তাই আমার নামও অন্তর্ভুক্ত করা হয়। কিন্তু শেষ মুহূর্তে আমার ব্যক্তিগত চিকিৎসক আমাকে ভ্যাকসিন নেওয়ার আগে কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে বলেন। কারণ আমার ডায়াবেটিস আছে। সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রণে থাকলেও সেটি একবার পরীক্ষা করিয়ে নিতে বলেছেন আমার ব্যক্তিগত চিকিৎসক। একইসঙ্গে আমার হার্টেরও সমস্যা আছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে কোনো সমস্যা দেখা দেয়নি। লিভারের কিছু সমস্যা থাকলেও সেগুলো এখন নিয়ন্ত্রণে আছে। তারপরও চিকিৎসক বলেছেন, সবগুলো টেস্ট করে রিপোর্ট পেয়ে তারপর ভ্যাকসিন গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিতে। সে কারণেই আজ আর ভ্যাকসিন নেইনি।’
হাফিজ আহমেদ আরও বলেন, আমি মনে করি শারীরিকভাবে আমি যে রোগগুলোতে ভুগছি, সেগুলো নিয়ন্ত্রণে থাকায় ভ্যাকসিন নিলে কোনো সমস্যা হবে না। একইসঙ্গে আমি ভ্যাকসিন নিতে বেশি আগ্রহী। কারণ দেশের মানুষের মধ্যে ভ্যাকসিন নিয়ে এক ধরনের ভয় কাজ করছে। আমি মানুষের সেই ভয় কাটাতে চাই। মানুষকে বোঝাতে হবে যে এই কোভিড-১৯ মহামারি থেকে মুক্ত হতে গেলে ভ্যাকসিন নিতেই হবে।
ভ্যাকসিন নিয়ে বিভ্রান্ত না হওয়ার আহ্বান জানিয়ে এই সংসদ সদস্য বলেন, ভ্যাকসিন নেওয়া তো আমাদের দেশে নতুন কিছু না। আর তাই এটা নিয়ে বিভ্রান্ত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। সিরাম ইনস্টিটিউট একটি বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান, যারা দীর্ঘদিন ধরে ভ্যাকসিন উৎপাদনের সঙ্গে যুক্ত। তার ওপর তারা উৎপাদন করছে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন। ফলে এর মান নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই। আমিও নির্দ্বিধায় এই ভ্যাকসিন নিতে চাই। তবে প্রথম দিন চেয়েও পাইনি বলে আমি হতাশ নই। চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে সবগুলো পরীক্ষা করে রিপোর্ট নিয়েই আমি ভ্যাকসিন নিতে যাব।
কুর্মিটোলা হাসপাতাল সূত্র বলছে, হৃদরোগজনিত সমস্যায় ভোগার কারণে তারা মিয়া নামে একজনকেও ভ্যাকসিন দেওয়া হয়নি।
এই ছয় জনকে বাদ দিয়ে বাকি যে ২১ জনকে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে তারা হলেন— মো. মাজেদুল ইসলাম, সানজিদা সুলতানা, মো. আব্দুল হালিম, মো. এনামুল হক, মোহাম্মদ হামজা, শাম্মী আক্তার, ডা. আল মামুন শাহরিয়ার সরকার, ডা. ফরিদা ইয়াসমিন, ডা. আফরোজা জাহিন, ডা. অরূপ রতন চৌধুরী, অধ্যাপক ডা. আব্দুল কাদের খান, মেজর জেনারেল মাহবুবুর রহমান, মো. আব্দুর রহিম, কাজী জসিম উদ্দিন, মোশারফ হোসেইন, মাসুদ রায়হান পলাশ, মোহাম্মদ আল মাসুদ মোল্লা, আমিরুল মোমেনিন, সোহেলী ফেরদৌস জুই, আশিকুল ইসলাম ও দেওয়ান হেমায়েত হোসেন।
সারাবাংলা/এসবি/টিআর
করোনাভাইরাস করোনার ভ্যাকসিন কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন ভ্যাকসিন প্রয়োগ