Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

দুদকের ‘ভুল’ তদন্ত: দণ্ড বাতিল, আইও’র বিরুদ্ধে ব্যবস্থার নির্দেশ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
২৮ জানুয়ারি ২০২১ ১৪:২৩

ফাইল ছবি

ঢাকা: দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তদন্ত করতে গিয়ে ‘সরল বিশ্বাসে’ যে ভুল করেছিল, সেই ভুল তদন্তের ওপর ভিত্তি করে দেওয়া সাজা বাতিল করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে বিষয়টি খতিয়ে দেখে দুদকের তদন্ত কর্মকর্তার (আইও) বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে দুদককে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

দুই পক্ষের আইনজীবী বলছেন, এই রায়ের ফলে নোয়াখালী সদর উপজেলার সুধারামপুর থানার পূর্ব রাজারামপুরের কামরুল ইসলামকে এর আগে দেওয়া ১৫ বছরের সাজা বাতিল হলো। ওই একই উপজেলার পশ্চিম রাজারামপুরের কামরুল ইসলামের বদলে পূর্ব রাজারামপুরের কামরুলকে তদন্তে দোষী করেছিল দুদক।

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন- দুদকের ‘ভুলে’ অপরাধ না করেও ১৫ বছরের সাজার মুখে!

বৃহস্পতিবার (২৮ জানুয়ারি) হাইকোর্টের বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ রায় দেন।

আদালতে দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সারোয়ার হোসেন বাপ্পী। অন্যদিকে রিট আবেদনকারীর পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী মিনহাজুল হক চৌধুরী।

আদেশের বিষয়টি সরাবাংলাকে নিশ্চিত কর দুদকের আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান বলেন, ‘আসামি কামরুল ইসলামের সাজা বাতিল করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। এ বিষয়ে ক্ষতিপূরণের জন্য আসামি কোনো লিখিত আবেদন করেনি। তবে দুদকের তদন্ত কর্মকর্তার যদি কোনো ভুল থেকে থাকে, সে বিষয়টি খতিয়ে দেখে ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।’

জানা যায়, নোয়াখালী সদর উপজেলার সুধারামপুর থানার পূর্ব রাজারামপুরের মো. আবুল খায়েরের ছেলে কামরুল ইসলাম নোয়াখালী জজ কোর্টের কর্মচারী। কোনো ধরনের অপরাধ না করেও এক মামলায় দুদকের তদন্তে দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন তিনি। কারণ, প্রকৃত অপরাধীর নামও কামরুল ইসলাম, বাবার নামও একই— আবুল খায়ের। জেলা, উপজেলা পর্যন্ত এক। তবে অপরাধী কামরুলের বাড়ি পশ্চিম রাজারামপুরে। এই পূর্ব ও পশ্চিমের পার্থক্য ধরতে না পারার কারণেই পশ্চিম রাজারামপুরের কামরুলের জায়গায় পূর্ব রাজারামপুরের কামরুলের ১৫ বছরের সাজা হয়।

বিজ্ঞাপন

পরে এ বিষয়ে কামরুল উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হলে দুদক তাদের ‘ভুল’ স্বীকার করেছে। দুদক বলছে, গ্রামের নামেও মিল থাকায় পূর্ব ও পশ্চিমের পার্থক্য করতে না পারায় তাদের ভুলটি হয়েছে ‘সরল বিশ্বাসে’। অবশেষে আজ কামরুল অথচ তাদের এই ‘সরল বিশ্বাসে’র কারণে ১৫ বছরের শাস্তির মুখে পড়তে হয়েছিল কামরুলকে। অবশেষে আজ (২৮ জানুয়ারি) কামরুল ইসলামের সাজ বাতিল করে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট।

মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০০৩ সালের সালের জানুয়ারিতে দুর্নীতি দমন ব্যুরোর কুমিল্লা অঞ্চলের প্রসিকিউটিং পরিদর্শক মো. শহীদুল আলম একটি এজাহার দায়ের করেন। মামলায় বলা হয়, নোয়াখালী সদর থানার পূর্ব রাজারামপুর গ্রামের আবুল খায়েরের ছেলে কামরুল ইসলাম নোয়াখালী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ৫৭৬ নম্বর পেয়ে দ্বিতীয় বিভাগে এসএসসি পাশের জাল/ভুয়া মার্কশিট ও প্রশংসাপত্র সৃজন/সংগ্রহ করে ১৯৮৯-৯৯ সেশনে মাইজদী পাবলিক কলেজে ভর্তি হন।

মামলাটি তদন্ত করেন দুদক নোয়াখালীর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক মাহফুজ ইকবাল। পরে ২০১৩ সালের ২৮ নভেম্বর তিনি এই মামলার অভিযোগপত্র জমা দেন। মামলার বিচার শেষে নোয়াখালীর বিশেষ জজ শিরীন কবিতা আখতার ২০১৪ সালের ২৬ নভেম্বর রায় দেন। রায়ে কামরুল ইসলামকে পেনাল কোডের ৪৬৭ ধারায় ৫ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড, ৪৬৮ ধারায় ধারায় পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড এবং ৪৭১ ধারায় পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দেন।

রায়ে বলা হয়, সব কারাদণ্ড একসঙ্গে চলবে, কিন্তু অর্থদণ্ড পৃথক পৃথকভাবে পরিশোধ করতে হবে। অনাদায়ে ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে।

সরাবাংলা/কেইআইএফ/টিআর

তদন্ত কর্মকর্তা দুদক ব্যবস্থার নির্দেশ ভুল তদন্ত সরল বিশ্বাস সাজা বাতিল

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর