Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

দ্বিতীয় দিনে ৫ হাসপাতালে ভ্যাকসিন নিলেন ৫৪১ জন

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
২৮ জানুয়ারি ২০২১ ২১:০৯

ঢাকা: নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে ভ্যাকসিন প্রয়োগের দ্বিতীয় দিনে দেশের পাঁচ হাসপাতালে ৫৪১ জন ভ্যাকসিন নিয়েছেন। এদিন রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) চারটি, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চারটি, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চারটি, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে চারটি ও কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালে একটি বুথে ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হয়।

বিজ্ঞাপন

বৃহস্পতিবার (২৮ জানুয়ারি) স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এ বি এম খুরশীদ আলম সারাবাংলাকে বলেন, সকাল ৯টা থেকে রাজধানীর পাঁচটি হাসপাতালের স্বাস্থ্যকর্মীদের ওপর ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরু করা হয়। উৎসবমুখর পরিবেশে সারাদিন ৫৪১ জন ভ্যাকসিন নিয়েছেন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ)

সকাল ৯টায় রাজধানীর বিএসএমএমইউয়ে চারটি বুথে ভ্যাকসিন কার্যক্রম শুরু করা হয়। এদিন বুথে প্রথম ভ্যাকসিন নেন প্রতিষ্ঠানটির উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া। এরপর পর্যায়ক্রমে পরিচালক (হাসপাতাল) বিগ্রেডিয়ার জেনারেল ডা. মো. জুলফিকার আহমেদ আমিন, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমানসহ হাসপাতালের চিকিৎসক-নার্সরা ভ্যাকসিন নেন।

ভ্যাকসিন নিয়ে অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া বলেন, ভ্যাকসিন প্রয়োগ আমাদের দেশে কোনো নতুন কিছু না। মহামারি নিয়ন্ত্রণে ভ্যাকসিন নেওয়াটা আমার সামাজিক, রাষ্ট্রীয় ও ব্যক্তিগত দায়িত্ব। কারণ আমাকে দেখে মানুষ আস্থা পাবে, সাহস পাবে। এখানে আজ অনেক লোক জড়ো হয়েছেন। গতকাল পর্যন্ত মানুষের মনে সংশয় ছিল ভ্যাকসিন নেবেন কি না। এটা কেটে যেতে শুরু করেছে। আমরা এটাই চাই, আমাদের দেখে মানুষ আস্থা পাক।

এরপর অন্যদের ফরম পূরণ করার পরে ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরু হয়। সকাল ১১টার দিকে এখানে ভ্যাকসিন নেন সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক। দেশের প্রথম সংসদ সদস্য ও সরকারের মন্ত্রিসভার সদস্য হিসেবে তিনিই প্রথম ভ্যাকসিন নেন। পরে সাবেক যোগাযোগ মন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. আবদুল মান্নান, তথ্য সচিব খাজা মিয়া ভ্যাকসিন নেন।

বিজ্ঞাপন

ভ্যাকসিন নেওয়ার পর সাংবাদিকদের আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক বলেন, ভ্যাকসিন সম্পর্কে প্রথমে যে ধরনের মিথ্যা, গুজব ও ষড়যন্ত্র চলছিল, সেগুলো মিডিয়ার কল্যাণে আমরা অনেকটাই প্রতিরোধ করতে পেরেছি। এর মাধ্যমে আমরা আমাদের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে পেরেছি।

তিনি বলেন, আমি আপনাদের সামনেই ভ্যাকসিন নিয়েছি। ভ্যাকসিন নেওয়ার সময় ও পরে কোনো ধরনের সমস্যা হয়নি। গতকাল আমাদের যারা ভ্যাকসিন নিয়েছেন, তাদেরও কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়নি। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একধরনের গুজব ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে।

সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বিএসএমএমইউ কেন্দ্রে ভ্যাকসিন গ্রহণ নেন অর্থনীতির অধ্যাপক ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ।

এদিন বিএসএমএমইউয়ে ভ্যাকসিন নেন ১৪২ জন চিকিৎসক, ৪ জন নার্স ও ৪৮ জন অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী। বিএসএমএমইউ’র পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জুলফিকার আহমেদ আমিন সারাবাংলাকে বলেন, প্রথম দিন দুপুর ২টা পর্যন্ত ভ্যাকসিন প্রয়োগ কার্যক্রম চলে। এ দিন মোট ১৯৮ জনকে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল

ঢামেক হাসপাতালে সকাল ৯টা ৪৫ মিনিটের দিকে ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরু হয়। এদিন উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা। এ দিন সবার আগে ভ্যাকসিন নেন ঢাকা মেডিকেলের নাক, কান, গলা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক শেখ নুরুল ফাত্তাহ রুমি।

ভ্যাকসিন নেওয়ার পর ডা. রুমি বলেন, হাসপাতালের প্রথম দিনের কার্যক্রমে ভ্যাকসিন নিতে পেরে ভালো লাগছে। খুবই ভালো বোধ করছি। আল্লাহর রহমতে কোনো ব্যথা, জ্বর, শ্বাসকষ্ট, টিকার জায়গা ফুলে যাওয়া— এমন কিছু হয়নি। তবে করোনার ভ্যাকসিন নেওয়া মানেই ১০০ ভাগ নিরাপদ হলাম, তা নয়। সবসময় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।

প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজমুল হক জানান, আমাদের লক্ষ্য ছিল প্রথম দিন ১০০ জনকে ভ্যাকসিন দেওয়া। পরে আগ্রহীদের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার কারণে ১২০ জনকে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ২০ জন নারী ও ১০০ জন পুরুষ। ১২০ জনের মধ্যে চিকিৎসক ৫৪ জন, হাসপাতালের কর্মচারী-কর্মকর্তা ৪৩ জন, নার্স ৭ জন ও ১৫ জন আনসার সদস্যকে টিকা দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, ভ্যাকসিন প্রয়োগ শেষে সবাইকে ৩০ মিনিট পর্যন্ত আমাদের পোস্ট ভ্যাকসিনেশন জোনে রাখা হয়। এরপর তাদের সবাইকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত ভ্যাকসিন গ্রহণকারীদের মধ্যে কেউ অসুস্থ বা কোনো অস্বস্তি বোধ করেননি। স্বাভাবিক ও উৎসবমুখর পরিবেশেই আমাদের ভ্যাকসিন প্রয়োগ কার্যক্রম শেষ হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, যারা প্রথম ডোজ নিয়েছেন তাদের শরীরে অ্যান্টিবডি নাও হতে পারে। দ্বিতীয় ডোজ দেওয়ার পর প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে। ৮ থেকে ১২ সপ্তাহ পর তাদের দ্বিতীয় ডোজ নিতে হবে। তবে যারা আজ ভ্যাকসিন নিলেন, তাদের সবাইকেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে বলা হয়েছে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ১০০ জন পুরুষ ও ২০ জন নারীকে করোনার ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে। সরকারের মন্ত্রিসভার সদস্যদের মধ্যে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ এ হাসপাতালে করোনার ভ্যাকসিন নিয়েছেন।

কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল

২৭ জানুয়ারি দেশে ভ্যাকসিন প্রয়োগ কার্যক্রম শুরু হয় কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে। পরদিন ২৮ জানুয়ারি এই প্রতিষ্ঠানে ১০০ জনকে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়। এদের মধ্যে চিকিৎসক ৫০ জন, নার্স ১৩ জন এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী আছেন ৩৭ জন।

মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল

রাজধানীর মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রথম দিন চিকিৎসক, নার্স, পরিচ্ছন্নতা কর্মীসহ ৬৫ জনকে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়। এই প্রতিষ্ঠানে প্রথম ভ্যাকসিন নেন ডা. নন্দিতা পাল।

ভ্যাকসিন নেওয়ার পর ডা. নন্দিতা বলেন, এই ভ্যাকসিন অন্যান্য সাধারণ ভ্যাকসিনের মতোই। তবে আগে থেকেই এক ধরনের নেতিবাচক কথাবার্তার কারণে মানুষের মধ্যে কিছুটা ভীতি ছিল। তবে আমি ভ্যাকসিন নেওয়ার আগে যেমন ছিলাম, এখনো তেমনই মনে হচ্ছে। আমরা যে ৬৫ জন ভ্যাকসিন নিয়েছি, তাদের কারও কোনো সমস্যার কথা এখন পর্যন্ত শুনিনি।

প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক ডা. অসীম কুমার নাথ বলেন, আজ প্রথম দিন উৎসবমুখর পরিবেশে সবাই ভ্যাকসিন নিয়েছেন। এখানে চিকিৎসকদের পাশাপাশি নার্স ও পরিচ্ছন্নতাকর্মীরাও ভ্যাকসিন নিয়েছেন। ভ্যাকসিন প্রয়োগ শেষে তাদের পর্যবেক্ষণ করা হয়। এরপর সবাই আবার নিজেদের কাজকর্ম শুরু করেন। এখনো পর্যন্ত কারও কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার বিষয়ে কোনো তথ্য পাইনি।

মুগদা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবির বলেন, আমাদের এখানে অনেকেই ভ্যাকসিন নিতে আগ্রহী ছিলেন। মোট ৬৫ জনকে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে আজ। এখন পর্যন্ত যেহেতু এই ভ্যাকসিনের কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি, তাই সবাই এখন আশ্বস্ত হবেন। যারা বিভিন্ন ধরনের গুজব ছড়াচ্ছে, তারাও হয়তো একসময় বুঝবে ও ভ্যাকসিন নিতে আগ্রহী হবে।

এই হাসপাতালে ভ্যাকসিন গ্রহীতাদের মধ্যে রয়েছেন ১২ জন চিকিৎসক, ৫ জন নার্স এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী ৪৮ জন।

কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতাল

কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালে একজন নার্সকে ভ্যাকসিন প্রয়োগের মাধ্যমে শুরু করা হয় প্রথম দিনের কার্যক্রম। এখানে চিকিৎসকদের মধ্যে সবার আগে ভ্যাকসিন নেন হাসপাতালের অ্যানেস্থেশিয়া অ্যান্ড আইসিইউ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. চন্দন কুমার বণিক।

ভ্যাকসিন নেওয়ার পর তিনি বলেন, সকাল ১১টার দিকে ভ্যাকসিন নিয়েছি। প্রথম প্রথম অল্প সময়ের জন্য মাথা ঝিমঝিম ছিল। কিন্তু সেটাও ১০ থেকে ১৫ মিনিট পর ঠিক হয়ে যায়। তারপর থেকে একদম স্বাভাবিক আছি, সুস্থ আছি। কোনো সমস্যা নেই।

কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে প্রথম দিন ৩৮ জন চিকিৎসক ও তিন জন নার্সসহ মোট ৫৮ জন ভ্যাকসিন নিয়েছেন। এদের মধ্যে পুরুষ ৪৯ জন এবং নারী ৯ জন।

হাসপাতালের মুখপাত্র ডা. মোহাম্মদ শিহাব উদ্দিন বলেন, সকাল সাড়ে ৯টা থেকে দুপুর প্রায় ১টা পর্যন্ত ভ্যাকসিন দেওয়ার কার্যক্রম চলেছে। আমাদের লক্ষ্য ছিল ৫০ জনকে দেওয়ার। তবে আগ্রহীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় ৫৮ জনকে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে। আমাদের হাসপাতালের স্টাফরাই ভ্যাকসিন নিয়েছেন। আমি নিজেও নিয়েছি। কারও মধ্যে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই।

তিনি বলেন, হাসপাতালে এই ভ্যাকসিন গ্রহণ করা নিয়ে এক ধরনের উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। প্রথম যিনি ভ্যাকসিন নিলেন, তাকে সবাই হাততালি দিয়ে, ফুলের তোড়া হাতে দিয়ে অভিনন্দন জানিয়েছেন। এটি আসলে প্রয়োজন। কারণ মহামানি নিয়ন্ত্রণে এই ভ্যাকসিনের কোনো বিকল্প নেই।

এদিন কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (হাসপাতাল) ডা. মো. ফরিদ হোসেন মিঞা।

তিনি বলেন, দেশের কোভিড-১৯ মহামারির শুরু থেকে এই হাসপাতালের সব চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীরা কাজ করে গেছেন, সেবা দিয়ে গেছেন। তাদের মাঝে অনেকেই কোভিড-১৯ সংক্রমণে আক্রান্ত হয়েছেন। আজ যখন তারা ভ্যাকসিন নিচ্ছেন, তা দেখে খুব ভালো লাগছে। এখন পর্যন্ত এখানে কারও কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। আশা করব পরবর্তী সময়ে সবাই পর্যায়ক্রমে ভ্যাকসিন নেবেন।

সারাবাংলা/এসবি/টিআর

করোনার ভ্যাকসিন কুয়েত মৈত্রী হাসপাতাল কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল টপ নিউজ ঢামেক হাসপাতাল দ্বিতীয় দিন বিএসএমএমইউ ভ্যাকসিন ভ্যাকসিন প্রয়োগ মুগদা হাসপাতাল

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর