বিশ্ববিদ্যালয়ে ইনোভেশন ইকো-সিস্টেম তৈরির উদ্যোগ
২ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ০৮:১১
ঢাকা: দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ইনোভেশন ইকো-সিস্টেম তৈরির উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। এজন্য ‘ডিজিটাল উদ্যোক্তা ও উদ্ভাবন ইকো-সিস্টেম উন্নয়ন’ শীর্ষক একটি প্রকল্প হাতে নিচ্ছে সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগ। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা গেলে ‘জনতা টাওয়ার-২ নামে’ একটি সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক স্থাপন, বিদ্যমান সফটওয়্যার পার্কের কর্মপরিবেশ উন্নয়ন ও কার্যকর ইকো-সিস্টেম তৈরি, নতুন কর্মসংস্থান তৈরি, স্টার্টআপ এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি প্রতিষ্ঠানগুলোর ইন্ডাস্ট্রিতে প্রবেশের হার বাড়ানো এবং জেন্ডার ইনক্লুসিভ ডিজিটাল এন্টারপ্রেনারশিপ তৈরি করা হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পটির মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৫৩ কোটি ৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে সকারি তহবিল থেকে ৯৮ কোটি টাকা ও বিশ্বব্যাংকের ঋণ সহায়তা থেকে ২৫৫ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে। অনুমোদন পেলে এটি বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ।
পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা সারাবাংলাকে জানান, ২০২০ সালের ১১ মে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে প্রকল্পটিতে অর্থায়ন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রস্তাব পাঠানো হয় পরিকল্পনা কমিশনে। এখন প্রকল্প প্রস্তাবটির প্রক্রিয়াকরণ শেষ হয়েছে। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) আগামী বৈঠকে প্রকল্পটি উপস্থাপনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। অনুমোদন পেলে চলতি বছরে শুরু হয়ে ২০২৫ সালের জানুয়ারির মধ্যে এটি বাস্তবায়নের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম সারাবাংলাকে বলেন, অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা অনুযায়ী সরকার ঘোষিত ভিশন ২০৪১-এর একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ ডিজিটাল বাংলাদেশ। এজন্য সারাদেশে আরও অনেক হাইটেক পার্ক ও সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক স্থাপনের কথা রয়েছে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে ঢাকা জেলার কাওরান বাজারে জনতা টাওয়ারের পাশের একটি জায়গায় একটি দৃষ্টিনন্দন ও পরিবেশবান্ধব সফটওয়্যার পার্ক গড়ে তোলা হবে।
তিনি বলেন, এর মাধ্যমে একটি উদ্ভাবনমুখী পরিবেশ, সুপ্রশিক্ষিত মানবসম্পদ ও সহায়ক নীতি ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে। এছাড়া বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ইনোভেশন হাব তৈরি, সফটওয়্যার পার্কে ইনোভেশন কার্যক্রম পরিচালনা ও ভবিষ্যতে ইনোভেশন সম্পর্কিত কার্যক্রম পরিচালনার জন্য দক্ষ জনবল তৈরি, স্টার্টআপদের সাথে ইনভেস্টরদের সংযোগ সাধনের কাজগুলোও করা হবে। ফলে প্রকল্পটি অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা লক্ষ্যের সঙ্গে সম্পূর্ণ সঙ্গতিপূর্ণ।
আইসিটি বিভাগ সূত্র জানায়, বর্তমান বিশ্ব তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর। সরকার ঘোষিত ‘রূপকল্প ২০২১’ অনুযায়ী তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি হিসেবে বিবেচিত। তথ্যপ্রযুক্তি মানুষের কর্মদক্ষতা, কর্মদক্ষতা, উৎপাদনশীলতা বাড়াতে ব্যাপক অবদান রাখতে সক্ষম। দ্রুত অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জন ও কর্মসংস্থান তৈরিতে স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠান গুরুত্বপূর্ণ হলেও এ বিষয়ে আমাদের দেশ ইনোভেশনের মাধ্যমে প্রোডাক্ট বা সার্ভিস তৈরি ও বিকাশের দিক থেকে পিছিয়ে রয়েছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য তরুণ সমাজ বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অন্যদের সমন্বয়ে দেশে কার্যকর ইনোভেশন সংস্কৃতির প্রতিষ্ঠা এবং স্টার্টআপদের বড় কোম্পানিতে রূপান্তরের একটি প্রাতিষ্ঠানিক ইকোসিস্টেম গড়ে তোলার জন্য এ প্রকল্প নেওয়া হয়েছে।
আইসিটি বিভাগ আরও বলছে, বিনিয়োগ বাড়াতে ক্রমবর্ধমান স্পেসের চাহিদা মেটাতে ঢাকার কাওরান বাজারে ভিশন-২১ নামের ভবন তৈরির মাধ্যমে একটি সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক স্থাপন করা হবে। এই প্রকল্পটি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন ও কর্মসংস্থান তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে জনতা টাওয়ার সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কে প্রায় তিন হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে উদ্ভাবন ইকো-সিস্টেম হাব প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে টেকসই উদ্ভাবন সংস্কৃতি তৈরি হবে। নতুন স্টার্টআপ কোম্পানি গড়ে ওঠার মাধ্যমে বেসরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধি ও বিপুল কর্মসংস্থানের সুযোগও তৈরি হবে যা জাতীয় অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
প্রকল্পের মূল কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে জনতা টাওয়ারের পাশে একটি দৃষ্টিনন্দন ও পরিবেশবান্ধব সফটওয়্যার পার্ক গড়ে তোলা। এছাড়া চারটি সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কে স্টার্টআপ সুবিধা তৈরি, সাতটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইনোভেশন হাব তৈরি, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ব্যবহারের উপযোগী কমন ফ্যাসিলিটি হিসেবে চারটি ল্যাব তৈরি, সফটওয়্যার পার্কে ইনোভেশন কার্যক্রম পরিচালনা ও ভবিষ্যতে ইনোভেশন সম্পর্কিত কার্যক্রম পরিচালনার জন্য দক্ষ জনবল তৈরি, বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক ইনোভেশন হাব পরিচালনা, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের ইনোভেশন সম্পর্কে প্রশিক্ষিত করা ও শিক্ষকদের মধ্য থেকে এ বিষয়ে দক্ষ জনবল তৈরি করার কাজগুলো করা হবে প্রকল্পটির আওতায়।
এছাড়াও স্টার্টআপদের সঙ্গে বিনিয়োগকারীদের সংযোগ করিয়ে দেওয়া, স্টার্টআপ ইনোভেশন কার্যক্রম সম্পর্কে জনগণকে অবহিত করা, জনতা টাওয়ার সফটওয়্যার পার্কের বর্তমান ভবনকে রিনোভেশন ও বিভিন্ন সুবিধা যুক্ত করার মাধ্যমে একটি আকর্ষণীয় সফটওয়্যার পার্ক হিসেবে গড়ে তোলার কাজও করা হবে প্রকল্পটিতে।
এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের মতামত দিতে গিয়ে কমিশনের আর্থসামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) মোছাম্মৎ নাসিমা বেগম বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়নের ফলে বাংলাদেশে ইনোভেশন ইকোসিস্টেম গড়ে তোলার মাধ্যমে বেসরকারি বিনিয়োগ উৎসাহিত করা এবং কর্মসংস্থান তৈরির সুযোগ হবে। বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক ইনোভেশন হাব পরিচালনা ও নতুন উদ্যোক্তাদের স্টার্টআপ সুবিধা দেওয়ারও ব্যবস্থা করা হবে।
সারাবাংলা/জেজে/টিআর