সিলেট বেতার কেন্দ্রের আধুনিকায়নে ব্যয় বাড়ছে ৩১ কোটি টাকা
৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ০৮:১৪
ঢাকা: বাংলাদেশ বেতারের সিলেট কেন্দ্রটি আধুনিকায়নের প্রকল্পটি নির্ধারিত সময়ে শেষ করা যায়নি। দুই বছর মেয়াদে অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল প্রকল্পটি। তবে নির্ধারিত সময়ে সেটি শেষ করা যায়নি। এখন আরও একবছর বাড়তি সময় চাওয়া হচ্ছে ‘বাংলাদেশ বেতার, সিলেট কেন্দ্র আধুনিকায়ন ও ডিজিটাল সম্প্রচার যন্ত্রপাতি স্থাপন’ শীর্ষক প্রকল্পটির জন্য। আর সেই সঙ্গে বাড়ছে ব্যয়ও। ৫৬ কোটি টাকার প্রকল্পটিতে ৩১ কোটি টাকা বাড়িয়ে ব্যয় ধরা হচ্ছে ৮৭ কোটি টাকা।
পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক সূত্র সারাবাংলাকে জানিয়েছে, সিলেট বেতার কেন্দ্রের আধুনিকায়নের প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে তথ্য মন্ত্রণালয়। ৫৬ কোটি ২২ লাখ টাকার প্রকল্পটি ২০১৮ সালের জুলাই থেকে ২০২০ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্য ছিল। তবে নানা জটিলতায় প্রকল্পটি ওই সময়ের মধ্যে শেষ করতে না পারায় এ বছরের জুন পর্যন্ত সময় চাওয়া হয়েছে সংশোধনী প্রস্তাবে। একইসঙ্গে ৫৫ দশমিক ২৬ শতাংশ, তথা ৩১ কোটি ৭ লাখ টাকা বাড়তি ব্যয়ের প্রস্তাবও রাখা হয়েছে সংশোধনীতে।
তথ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৬১ সালের ১ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ বেতার, ঢাকা কেন্দ্রের অনুষ্ঠান রিলে করার মধ্য দিয়ে সিলেট কেন্দ্রের সম্প্রচার কার্যক্রম শুরু হয়। পরে ১৯৬৭ সালের ২৭ অক্টোবর থেকে সিলেট কেন্দ্র থেকে নিজস্ব অনুষ্ঠান সম্প্রচার শুরু হয়। ১৯৭০ সাল থেকে পূর্ণাঙ্গ আঞ্চলিক বেতার কেন্দ্র হিসেবে কার্যক্রম শুরু হয় সিলেটে। ১৯৭৮ সালের ২ নভেম্বর ২০ কিলোওয়াট ক্ষমতার নতুন ৯৬৩ কিলোহার্জ এএম ট্রান্সমিটার স্থাপন করে সম্প্রচার ও প্রশাসনিক কার্যক্রম শুরু করে কেন্দ্রটি।
পরবর্তী সময়ে ১৯৮২ সালে স্টুডিও প্রশাসনিক ভবনের নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার পর স্থায়ীভাবে মীরের ময়দানের বেতার ভবন থেকে এই কেন্দ্রের সম্প্রচার ও প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। ২০০২ সালে ২০ কিলোওয়াট ক্ষমতার ট্রান্সমিটার সংস্থাপন করা হয় এই কেন্দ্রে। ২০০৭ সাল থেকে এক কিলোওয়াট ক্ষমতার ১০৫ দশমিক শূন্য মেগাহার্জ তরঙ্গেও এফএম ট্রান্সমিটারের মাধ্যমে সব কেন্দ্রের এফএম ট্রান্সমিটার স্থাপন করা হয় এবং এর মাধ্যমে অনুষ্ঠান সম্প্রচার শুরু হচ্ছে। ২০১৩ সালের জুন মাসে একটি ৫ কিলোওয়াট ক্ষমতার ৯০ মেগাহার্জ তরঙ্গেও এফএম ট্রান্সমিটার স্থাপন করা হয় এবং এর মাধ্যমে অনুষ্ঠান সম্প্রচার শুরু হয়।
তথ্য মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, সিলেট বেতার কেন্দ্রকে আধুনিক ও ডিজিটাল করার লক্ষ্য নিয়ে প্রকল্পটি হাতে নিয়েছিল মন্ত্রণালয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা গেলে আকর্ষণীয় ও উচ্চ কারিগরি মানসম্পন্ন অনুষ্ঠান সম্প্রচার নিশ্চিত করা যাবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় বাড়তি অর্থ ও সময় চেয়ে প্রকল্পটির সংশোধনী প্রস্তাব তৈরি করা হয়েছে। সংশোধনীটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) আগামী বৈঠকে উপস্থাপনের প্রস্তুতি চূড়ান্ত করা হয়েছে।
পরিকল্পা কমিশন সূত্র জানিয়েছে, প্রকল্প সংশোধনের কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, এ প্রকল্পের অন্যতম অংশ এমসিআর ও স্টুডিও যন্ত্রপাতি (জিডি-২)। এগুলো কেনার জন্য প্রায় ৪ বছর আগে তৈরি ও প্রাক্কলিত ডিপিপির প্যাকেজের বরাদ্দ যথেষ্ট নয়। এ প্যাকেজে অডিটোরিয়ামকে স্টুডিও হিসেবে বিবেচনা করা হয়নি। ফলে এ সংক্রান্ত প্যাকেজের যন্ত্রপাতির পরিমাণ বেড়ে যায়।
এছাড়া ড্রামা ও মিউজিক স্টুডিওর প্রোডাকশান কনসোলের ফিডারের সংখ্যা বাড়ানোসহ বেশকিছু যন্ত্রপাতির সংখ্যাও বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। অন্যদিকে, আন্তর্জাতিক বেশকিছু কেনাকাটা থাকায় ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণেই খরচ বাড়ছে। ডিপিপির অন্তর্ভুক্ত জিডি-২-এর আওতায় এমসিআর ও স্টুডিও যন্ত্রপাতি সরবরাহ ও স্থাপনের খরচ ৬ কোটি ৫১ লাখ ১৫ হাজার থেকে ৮ কোটি ৩ লাখ ৮৫ হাজার টাকা বাড়িয়ে সংশোধিত ডিপিপি মূল্য ১৪ কোটি ৫৫ লাখ টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে।
এদিকে, প্রকল্পটির মূল ডিপিপিতে (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতিসহ ১০ কিলোওয়াট এফএম ট্রান্সমিটার একটি প্যাকেজ কেনার সংস্থান রাখা হয়েছিল ৩ কোটি ৪৬ লাখ ২৫ হাজার টাকায়। কারিগরি প্রস্তুতির পর প্যাকেজটি কিনতে দুই বার আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হয়। একবার প্রাক্কলিত ব্যয়ের চেয়ে ৬৩ দশমিক ৮৩ শতাংশ ও আরেকবারে ৪৪ শতাংশ বেশি দর পড়ে দরপত্রে। পরে বাংলাদেশ বেতারের আগে শেষ হওয়া একই ধরনের কাজের কম্পোনেন্ট মূল্য ও তুলনামূলক বিবরণী পর্যালোচনা করে এই প্যাকেজটির মূল্য পুনঃনির্ধারণ করা হয়েছে। তাতে কেবল এই খাতেই খরচ বেড়েছে ১ কোটি ৩৮ লাখ ৭৫ হাজার টাকা।
অন্যদিকে, নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে না পারায় একবছর বাড়তি সময় লাগবে। এই বাড়তি সময়ের জন্য প্রচার ও বিজ্ঞাপন, আপ্যায়ন, সম্মানি, হায়ারিং চার্জ ও অন্যান্য খাতে বাড়তি খরচও লাগবে। তাছাড়া বিদেশ থেকে আমদানি করা মালামাল বন্দর থেকে খালাস, পরিবহন ও লোডিং-আনলোডিংয়ের জন্য কমিশন ও পরিবহন কোডে প্রয়োজনীয় বরাদ্দের প্রয়োজন হবে। ফলে সংশোধিত ডিপিপিতে রাজস্ব খাতের বিভিন্ন কোডে অতিরিক্ত ৫৫ লাখ ৮০ হাজার টাকা ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।
একনেকের জন্য তৈরি প্রকল্প সারসংক্ষেপে পরিকল্পনা কমিশনের আর্থসামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সাবেক সদস্য (সচিব) আবুল কালাম আজাদ উল্লেখ করেন, প্রস্তাবিত প্রকল্পটি নিয়ে গত বছরের ৯ আগস্ট অনুষ্ঠিত হয় প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা। ওই সভার সিদ্ধান্তের আলোকে ডিপিপি পুর্নগঠন করে প্রকল্পটি অনুমোদনের সুপারিশ করা হয়েছিল। সেই সিদ্ধান্ত মেনে ডিপিপি পুনর্গঠন করায় প্রকল্পটির সংশোধনী প্রস্তাব একনেকে উপস্থাপনের সুপারিশ করা হয়েছে।
সারাবাংলা/জেজে/টিআর