Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ভয়কে জয় করে সারাদেশে ১০০৫ কেন্দ্রে ভ্যাকসিন ‘উৎসব’

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ১৬:০০

ঢাকা: নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড ১৯) মোকাবিলায় ভারত থেকে বাংলাদেশে আসা ভ্যাকসিন নিয়ে নানা মহল থেকে এসেছিল প্রতিক্রিয়া। কেউ কেউ ভ্যাকসিন নেওয়া কিংবা না নেওয়ার বিষয়ে সংশয়ে ছিলেন, ছিলেন ভয়ে। ভ্যাকসিনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার শঙ্কাও ছিল আলোচনায়। এই শঙ্কা-ভয় কাটাতে এগিয়ে আসেন রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা।

সব আলোচনা-সমালোচনা, দ্বিধা-ভয় কাটিয়ে একযোগে সারাদেশে ভ্যাকসিন নিলেন মন্ত্রী, বিচারপতি, প্রতিমন্ত্রী, এমপি, মেয়র, সচিব ও সরকারি পর্যায়ের সিনিয়র কর্মকর্তারা। রোববার (৭ ফেব্রুয়ারি) ভয় কাটিয়ে ভ্যাকসিন প্রয়োগের দিনটি হয়ে ওঠে উৎসবের। এদিন ভ্যাকসিন গ্রহণের আনন্দ ছড়িয়ে পড়ে দেশের ১০০৫ কেন্দ্রে।

বিজ্ঞাপন

এই আনন্দ মুহূর্ত আয়োজনের অগ্রসারিতে ছিলেন ২৪০০ জন স্বাস্থ্যকর্মী। ভ্যাকসিন কেন্দ্রে নিয়োজিত ছিলেন ৭ হাজার ৩৪৪ জন কর্মীও।

ভ্যাকসিন প্রয়োগের জন্য রাজধানীর ৫০টি হাসপাতাল ও রাজধানীর বাইরে ৯৫৫টি হাসপাতালকে প্রস্তুত করা হয়। সকাল ৯টা থেকে ভ্যাকসিনেশন কার্যক্রম শুরু চলে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক সকাল ১০টায় স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ভ্যাকসিন কার্যক্রম শুরু করেন।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘নিবন্ধন করেননি এমন কেউ যদি কেন্দ্রে যান তাকেও ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। পরবর্তীতে তার তথ্য টুকে রাখা হবে এবং সরকার তার তথ্য সংগ্রহ করবে।’

তিনি বলেন, ‘ভ্যাকসিন নিয়ে কোনো ধরনের কোনো গুজব চাই না। এই ভ্যাকসিন কার্যকর এবং এর কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই বললেই চলে।’

প্রথম দফায় অগ্রাধিকারভিত্তিক ১৮ শ্রেণির করোনাসম্মুখযোদ্ধা এবং ৫৫ বছর-ঊর্র্ধ্ব নাগরিকরা বিনামূল্যে এই ভ্যাকসিন নেন।

বিজ্ঞাপন

একযোগে ভ্যাকসিন প্রয়োগ কর্মসূচির শুরুর দিনেই সরকারের গুরুত্বপূর্ণ বেশ কয়েকজন মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী ও সচিবরা ভ্যাকসিন নেন।

রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভ্যাকসিন নেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভ্যাকসিন নেন বিচারপতি জিনাত আরা হক, সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান, উপ-উপাচার্য আব্দুস সামাদ, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরউল্লাহ চৌধুরীও ভ্যাকসিন নেন এদিন।

এদিন জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ভ্যাকসিন নেন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী বীরপ্রতীক ও তার স্ত্রী তারাবো পৌরসভার মেয়র হাছিনা গাজী। আর গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালে ভ্যাকসিন নেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান এবং জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, পর্যটনমন্ত্রী মাহবুব আলী। নেত্রকোনায় ভ্যাকসিন নেন সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী আশরাফ আলী খান খসরু।

ভ্যাকসিন নিতে এসে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গাজী গোলাম দস্তগীর বলেন, আজকে আমি ভ্যাকসিন নিতে এসেছি। আমাদের প্রধানমন্ত্রী, জননেত্রী শেখ হাসিনা দেশের মানুষের নিরাপত্তার কথা বিবেচনায় নিয়ে অনেক পরিশ্রম করে এই ভ্যাকসিন আমাদের মাঝে নিয়ে এসেছেন। তিনি আমাদের ভালোবাসেন বলেই, অনেক দেশের আগেই আমাদের এখানে ভ্যাকসিন নিয়ে এসেছেন। এ জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’

অন্যদিকে চট্টগ্রামে ভ্যাকসিন নেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। টঙ্গীতে ভ্যাকসিন নেন নারী ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি।

ঠাঁকুরগাওয়ে ভ্যাকসিন নেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য, সাবেক পানিসম্পদমন্ত্রী রমেশ চন্দ্র সেন ভ্যাকসিন নেন।

রাজারবাগ পুলিশ লাইনস হাসপাতালে ভ্যাকসিন নেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম।

দিনাজপুরে ভ্যাকসিন নেন হুইপ ইকবালুর রহিম, কুষ্টিয়ায় ভ্যাকসিন নেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ।

রাজধানীর শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভ্যাকসিন নেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম ভ্যাকসিন। রাজধানীর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্সেস অ্যান্ড হাসপাতালে ভ্যাকসিন নেবেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, কৃষি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মেসবাহুল ইসলাম।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভ্যাকসিন নেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন।

খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক, রংপুরের মেয়র মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা, মিটফোর্ড হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার কাজী রশিদ উন নবী, শেবাচিম পরিচালক ডা. মো. বাকির হোসেনও ভ্যাকসিন নেন। এ ছাড়া বিভিন্ন জেলায় এবং বিভিন্ন জায়গায় সংসদ সদস্য, রাজনৈতিক নেতা ও স্থানীয় বিশিষ্ট নাগরিক নিজ নিজ এলাকায় ভ্যাকসিন নেন।

এর আগে, গত ২৭ জানুয়ারি প্রথম করোনা ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরু হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ওই দিন ২৬ জন ভ্যাকসিন গ্রহণ করেন।

কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স রুনু ভেরোনিকা কস্তাকে ভ্যাকসিন দেওয়ার মধ্য দিয়ে এ কর্মসূচি শুরু হয়। পরের দিন মন্ত্রিসভার প্রথম কোনো সদস্য হিসেবে করোনার টিকা গ্রহণ করেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।

এদিকে, ২৭ জানুয়ারি জাতীয় সংসদে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আহসানুল ইসলাম টিটুর (টাঙ্গাইল-৬) এক প্রশ্নের জবাবে অগ্রাধিকারী ভিত্তিতে কাদের কী পরিমাণ কোভিড-১৯ টিকা দেওয়া হবে তা জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোভ্যাক্স সুবিধা থেকে বাংলাদেশ তার ৩ কোটি ৪০ লাখ লোকের বা জনসংখ্যার ২০ শতাংশের জন্য ৬ কোটি ৮০ লাখ টিকা পাবে।

২৭ জানুয়ারির পরদিন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, বাংলাদেশ কুয়েত মৈত্রী হাসপাতাল, মুগদা জেনারেল হাসপাতাল ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) ৫৪১ জনকে ভ্যাকসিন প্রদান করা হয়। সব মিলিয়ে এ পর্যন্ত দেশে ভ্যাকসিন নিয়েছেন ৫৬৭ জন।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা জানান, ভ্যাকসিন নেওয়া এই ৫৬৭ জনের মধ্যে এখন পর্যন্ত তেমন কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি।

এরইমধ্যে দেশে আসা ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ৭০ লাখ টিকা দিয়েই শুরু হয়েছে ভ্যাকসিন প্রদান কর্মসূচি।

ভারতের উপহার হিসেবে সেরাম ইনস্টিটিউটের তৈরি অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার কোভিশিল্ড ভ্যাকসিনের ২০ লাখ ডোজ উপহার হিসেবে গত ২১ জানুয়ারি বাংলাদেশে এসে পৌঁছায়। এরপর ২৫ জানুয়ারি সেরাম থেকে বাংলাদেশের ক্রয় করা কোভিশিল্ডের প্রথম চালানের ৫০ লাখ ডোজ নিরাপদে ঢাকায় আসে। অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার প্যাটেন্টে তৈরি ‘কোভিশিল্ড’ ব্র্যান্ডের এই ভ্যাকসিনই দেশব্যাপী জনসাধারণ পর্যায়ে প্রয়োগ শুরু হলো আজ রোববার।

আরও পড়ুন-

সারাবাংলা/একে

করোনার ভ্যাকসিন কোভিডশিল্ড ভ্যাকসিন

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর