‘মিয়ানমারে অভ্যুত্থানের নেপথ্যে রোহিঙ্গা থেকে নজর কেড়ে নেওয়া’
৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ১৫:৫৭
ঢাকা: ‘অং সান সুচি এবং মিয়ানমারের সেনাবাহিনী একইসূত্রে গাঁথা। একসময়ে গণতন্ত্রের খোলসে মিয়ানমার রোহিঙ্গা গণহত্যা ঘটিয়েছে। এখন অভ্যুত্থানের নামে রোহিঙ্গা থেকে বিশ্বের নজর অন্যদিকে ঘোরানোর চেষ্টা চালাচ্ছে। বিষয়টি পার্ট অব এ বিগার গেম।’
‘তাই বাংলাদেশকে রোহিঙ্গা গণহত্যার অভিযোগে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে যে মামলা চলছে তার প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে। এই গণহত্যার সঙ্গে জড়িত মিয়ানমারের সেনাদের বিচার নিশ্চিত করতে হবে।’
নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর পিস স্টাডিজের আয়োজনে ‘মিয়ানমারে অভ্যুত্থান রোহিঙ্গা সংকটে কী প্রভাব ফেলবে’ শীর্ষক উইবিনারে আলোচকরা ওপরের মন্তব্য করেন।
আলোচনায় অংশ নিয়ে মালয়েশিয়ার বেসরকারি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মাহবুবুল হক বলেন, ‘মিয়ানমারের রাজনৈতিক বিষয়ে অষ্পষ্টতা আছে। সেখানে রোহিঙ্গাদের দুইটি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল আছে। কিন্তু ঘটে যাওয়া সামরিক অভ্যূত্থান নিয়ে ওই দল দুইট কোনো বিবৃতি দেয়নি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক লাইলুফার ইয়াসমিন বলেন, ‘রোহিঙ্গা সংকট থেকে বিশ্বের নজর এখন অন্যদিকে ঘুরে গেছে। মিয়ানমারে ঘটে যাওয়া সামরিক অভ্যুত্থানের পর বিশ্বের নজর এখন গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের দিকে। এতে রোহিঙ্গা সংকট থেকে দৃষ্টি অন্যদিকে চলে গেছে। তাই আমাদেরকে দুই দেশের মানুষের মধ্যে সংযোগ গড়তে হবে।’
লাইলুফার ইয়াসমিন বলেন, চীনের সমর্থন ছাড়া মিয়ানমার সেনাদের অভ্যুত্থান ঘটানো অসম্ভব। প্রকৃত অর্থে এই অভ্যুত্থান পার্ট অব এ বিগার গেম। একে অন্যের ওপর দোষ চাপিয়ে তারা তাদের স্বার্থ হাসিল করছে। যেটা আগে হয়েছে, গণতন্ত্রের খোলসে রোহিঙ্গা গণহত্যা ঘটানো হয়েছে। আর এখন অভ্যুত্থানের নামে বিশ্বের নজর রোহিঙ্গা থেকে অন্যদিকে ফোকাস করা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, ‘১৬ কোটি মানুষের বিশাল বাজারসহ বাংলাদেশের ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্ব রয়েছে। ভারত, জাপান, চীনসহ অনেকেই বাংলাদেশের প্রতি আগ্রহী। তাই বৈশ্বিক অঙ্গনে আমাদের দরকষাকষির ক্ষমতা বাড়াতে হবে। কেননা এবার খুব সহজে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন হবে না।’
সাবেক সেনা কর্মকর্তা ও নির্বাচন কমিশনার সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘মিয়ানমারের সেনাবাহিনী বৈশ্বিক চাপ সম্পর্কে জেনেই দেশটিতে সামরিক অভ্যুত্থান ঘটিয়েছে। জান্তা বাহিনী দেশটির সংবিধানের ৪১৭ এবং ৪১৮ ধারা মেনেই অভ্যূত্থান ঘটিয়েছে। যে কারণে এ ঘটনার পর চীন ও ভারত এক ধরনের বিবৃতি দিয়েছে, আসিয়ান দেশগুলো কোনো বিবৃতি দেয়নি এবং যুক্তরাষ্ট্র যে বিবৃতি দিয়েছে তাতে মিয়ানমারের প্রতি কোনো থ্রেড দেয়া হয়নি, গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার কথা বলা হয়েছে।’
সাখাওয়াত হোসেন বলেন, অং সান সুকি আরাকানে ভোট বন্ধ রেখেছিল। গত রোববার সেখানে মিয়ানমারের সেনারা গিয়ে আরাকান অঞ্চলের বাসিন্দাদের সঙ্গে আলাপ করেছে। সেনারা দেখাতে চাচ্ছে যে তাদের ক্ষমতার প্রতি কোনো আকর্ষন নাই কিন্তু তারা মানুষের অধিকার রক্ষায় কাজ করছে। এই হিসেবে পরবর্তী সময়ে তারা হয়ত বাংলাদেশের সঙ্গেও কিছু রোহিঙ্গা ফিরিয়ে নিতে যোগাযোগ করবে।
তিনি আরও বলেন, বৈশ্বিক নিয়ন্ত্রণের জন্য এখন চীনের সঙ্গে পশ্চিমাদের লড়াই চলছে। অন্যদিকে, চীন ছাড়া মিয়ানমারের কোনো গতি নেই। এদিকে, বাংলাদেশের একদিকে ভারত, অন্যদিকে মিয়ানমার এবং চীনের বেল্ট ও রোড প্রকল্প। সব মিলিয়ে বাংলাদেশ ‘টাগ অব ওয়ার’র মাঝখানে রয়েছে।
সাবেক পররাষ্ট্র সচিব এবং নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র ফেলো মো. শহীদুল হক বলেন, ‘বাংলাদেশ জন্মের শুরু থেকেই প্রতিবেশী রাষ্ট্র মিয়ানমারের সঙ্গে সু-সম্পর্ক গড়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে কিন্তু মিয়ানমারের সেনাদের কারণে তা কখনই সম্ভব হয়নি।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্ব বাড়াতে হবে। রোহিঙ্গা গণহত্যার অভিযোগে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে যে মামলা চলছে তার প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে। এই গণহত্যার সঙ্গে জড়িত মিয়ানমারের সেনাদের বিচার নিশ্চিত করতে হবে।’
সারাবাংলা/জেআইএল/একে