‘খালেদা জিয়ার বড়াই করে বলা কথা তার বেলাতেই ফলে গেছে’
১০ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ২০:১৮
ঢাকা: আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপি একসময় চিন্তা করেছে। ২ হাজার কোটি টাকা থাকলে পরে নির্বাচন থেকে জীবনে কেউ সরাতে পারবে না। কিন্তু তাদেরকে সরে যেতে হয়েছে। খালেদা জিয়া বড়াই করে আমার কথাই বলেছিল; শেখ হাসিনা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী তো দূরের কথা, বিরোধী দলের নেতাও কোনোদিন হতে পারবে না। সে কথাটা কিন্তু তার বেলাতেই ফলে গেছে।
বুধবার (১০ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের ৪৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে যুক্ত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী করোনাভাইরাসের কারণে যুবলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে সময় দিতে না পারার অপরাগতার কথা স্মরণ করেন। তিনি বলেন, তখন সমগ্র দেশ এমন একটা অবস্থায় চলছিল আমি সময় করতে পারিনি। সেজন্য সত্যি দুঃখিত। এছাড়া আজকে চমৎকার অনুষ্ঠান করার জন্য যুবলীগকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী।
পাকিস্তান আমলে বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রীত্ব ছেড়ে সংগঠনের দায়িত্ব নেওয়ার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষ দল ছেড়ে মন্ত্রীত্ব নেয়, আর তিনি একমাত্র, যিনি মন্ত্রীত্ব ছেড়েছিলেন দলকে সুসংগঠিত করার জন্য। কারণ তিনি একটি আদর্শ নিয়ে রাজনীতি করতেন। তার জীবনে চাওয়া পাওয়া কিছু ছিল না।
স্বাধীনতার পর জাতির পিতার নেতৃত্বে যুদ্ধবিধস্ত দেশ গড়ে বিভিন্ন কর্মসূচির কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমাদের দুভার্গ্য মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে স্বাধীনতার যারা বিরোধীতা করেছে, যারা ওই হানাদার বাহিনীর পদলেহন করেছে, তোষামোদী-খোষামোদী করেছে, যারা আমাদের মা-বোনদের তুলে দিয়েছে হানাদার বাহিনীর হাতে, আলবদর,রাজাকার আলশামস বাহিনী গড়ে তুলেছে, এদেশের মুক্তিযুদ্ধে প্রতিবন্ধতা সৃষ্টি করেছিল, স্বাধীনতার পর যদিও তাদের বিচার শুরু করেছিলেন তিনি। তাদের ষড়যন্ত্র কিন্তু থেমে থাকেনি। যে সকল আন্তর্জাতিক শক্তি আমাদের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করেনি। স্বাধীনতার সময় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে এবং তাদের এই দেশীয় পদলেহনকারী দোসরদের চক্রান্ত অব্যাহত ছিল।
শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগের নাম নিশানাই যাতে না থাকে সেই চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তারা সফল হয়নি একটাই কারণে; জাতির পিতার হাতে গড়া এই সংগঠন এবং তিনি যে কয়েকটি সংগঠন গড়ে তুলে দিয়েছিলেন তারা প্রত্যেকেই কিন্তু দুঃসময়ে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে।
তিনি আরও বলেন, হ্যাঁ কখনো কখনো ব্যতয় ঘটে। কিন্তু যেটা ভালো কাজ অবশ্যই সেটা আমাদেরকে স্বীকার করতে হবে। আমি দেখেছি, প্রতিটি সংগ্রামে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছে যুবলীগ। আমাদের আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বুকের রক্ত ঢেলে দিয়েছে এদেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে।
স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নূর হোসেনের আত্মদানের কথা স্মরণ করে সেদিনের সেই স্মৃতিচারণও করেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, অনেক সংগ্রামের মধ্য দিয়েই কিন্তু আমরা গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনেছি। আর দীর্ঘদিন ২১ বছর আওয়ামী লীগ সরকারে আসার সুযোগ পেয়েছে। সেই সংগ্রামের পথ অনেক কঠিন পথ ছিল। সেই পথ পাড়ি দিয়ে আমরা সরকার গঠন করতে পেরেছি বলেই জনগণের পাশে দাঁড়াতে পেরেছি, জনগণের জন্য কাজ করতে পেরেছি।
ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়েই আমাদের চলতে হয়েছে, চলতে হবে এটাও স্বাভাবিক। তবে আমি যুবলীগের নেতাকর্মীদের বলবো, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ যদি কেউ বুকে ধারণ করে দেশপ্রেমে উদ্বুর্ধ্ব হয়ে মানুষের কল্যাণে কথা চিন্তা করে রাজনীতি করে, তাহলে সে রাজনীতিতে টিকে থাকা যায়। কিন্তু যে রাজনীতিকরতে গিয়ে লোভের বশবর্তী হয়, অর্থসম্পদটা যাদের কাছে বড় হয়ে যায়, তারা কিন্তু বেশিদিন ঠিকতে পারে না বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।
খালেদা জিয়ার ঘোষণা ছিল আওয়ামী লীগ একশ বছরেও ক্ষমতায় আসতে পারবে না উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আল্লাহর রহমতে শত্রুর মুখে ছাঁই দিয়ে আওয়ামী লীগ প্রথমবার পাঁচ বছর, আর এবারে এই ১২ বছর ক্ষমতায় আছি বলেই জনগণের সেবা করার সুযোগ পেয়েছি।
তিনি বলেন, আমি এইটুকু বলবো, সংগঠনকে শক্তিশালী করে আদর্শভিত্তিক সংগঠন হিসাবে গড়ে তুলতে হবে। সবসময় এটা মনে রাখতে হবে, যদি রাজনীতির আমাদের দেশের মানুষের জন্য হয়, কল্যাণের জন্য হয় তাহলে সেই রাজনীতিটাই হচ্ছে সঠিক রাজনীতি। আর রাজনীতি যারা করতে আসে ভাগ্য তৈরি করতে; হয়তো তারা টাকা-পয়সা বানাতে পারে। তারপর আর তাদের অস্তিত্ব থাকে না। এটাই আজ প্রমাণিত সত্য।
‘যারা ৭৫-এর পর ক্ষমতা দখল করেছিল অবৈধভাবে সংবিধান লঙ্ঘন করে। তারা ক্ষমতাকে ভোগের বস্তু হিসাবে নিয়েছিল। তাই আজকে জনগণের কাছে তাদের কোনো স্থান নেই এবং স্থান থাকে না, থাকবে না। কিন্তু বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এই উপমহাদেশে সব থেকে প্রাচীন সংগঠন হিসাবেই কিন্তু টিকে আছে।’
তরুণ সমাজের জন্য সরকারের নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করে কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাওয়ার কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, এই তারুণ্য থেকেই যেন বিনিয়োগকারী সৃষ্টি হয়, তারুণ্য থেকেই যেন তাদের জ্ঞান তাদের মেধা দিয়ে এদেশ গড়ে তুলতে পারে এবং এই দেশকে ভবিষ্যতে যেন এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। সেইভাবেই আমরা কিন্তু বিভিন্ন কর্মপরিকল্পনা নিয়েছি এবং বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি এবং আমরা ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করছি।
যুবলীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এদেশের মানুষের জন্য কাজ করতে গেলে শুধু বক্তৃতা শ্লোগান দেওয়া নয়; সঙ্গে সঙ্গে মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে সেখানে কাজ করতে হবে।
‘আর আমরা বাংলাদেশটাকে গড়ে তুলতে চাই, জাতির পিতার স্বপ্নের বাংলাদেশ। যে বাংলাদেশে একটি মানুষও গৃহহারা থাকবে না। একটি মানুষও ক্ষুধার জ্বালায় কাতর থাকবে না। প্রতিটি মানুষ সুন্দরভাবে বাঁচবে। তারা শিক্ষা পাবে, তারা চিকিৎসা সেবা পাবে, তারা উন্নত জীবন পাবে; যেটা জাতির পিতার স্বপ্ন ছিল। তিনি সবসময় এটাই বলতেন, মানুষ যেন অন্ন পায়, বস্ত্র পায়, উন্নত জীবনের অধিকারী হয়। এটা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের কথা। আমরা সেইভাবেই বাংলাদেশকে গড়তে চাই।
যুবলীগের উদ্যোগে গৃহহীন-ভূমিহীন মানুষকে ঘর উপহার দেওয়ার উদ্যোগের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুবলীগ প্রত্যেক এলাকায় একটি করে ঘর তৈরি করে দেবে। এব্যাপারে অবশ্যই যুবলীগ আমার সবরকম সহযোগিতা পাবে। ঘরে তৈরি করে দেওয়া এটা খুব কঠিন কাজ না। তাহলে এদেশে আর একটি মানুষও গৃহহারা থাকে না। সেইভাবেই উদ্যোগ নিলেই কিন্তু কাজ হয়ে যায়।
আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ এবং পরিচালনা করবেন সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল। করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতি বিবেচনা নিয়ে সংগঠনের সাবেক চেয়ারম্যান ও সাধারণ সম্পাদককের আমন্ত্রণ জানানো হলেও বয়সজনিত জটিলতার কারণে সবাই উপস্থিত ছিলেন না। তবে সাবেক চেয়ারম্যানদের মধ্যে বিতর্কিত ইস্যুর কারণে অব্যাহতিপ্রাপ্ত সাবেক চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি।
সাবেক চেয়ারম্যান ও সাধারণ সম্পাদক হিসাবে বিশেষ অতিথি হিসাবে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তন প্রান্তে বিশেষ অতিথি হিসাবে ছিলেন সাবেক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন, সাবেক চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক এবং সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, সাবেক সাধারণ সম্পাদকজ হারুনুর রশীদ। এছাড়া কবিতা আবৃত্তি করেন নাট্যভিনেতা জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়।
প্রসঙ্গত, যুবলীগের ৪৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ছিল গত ১১ নভেম্বর। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক শেখ ফজলুল হক মণি প্রতিষ্ঠা করেন। সংগঠনটির বর্তমান চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শেখ ফজলুল হক মণির বড় ছেলে শেখ ফজলে শামস পরশ।
সারাবাংলা/এনআর