‘প্রিয় নীড়ে’ ঠাঁই হলো ৩০ জন তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের
১১ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ১২:৫৭
সিরাজগঞ্জ: মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ প্রকল্পের আওতায় উল্লাপাড়া উপজেলায় ৩০ জন তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের আশ্রয় মিলেছে ‘প্রিয় নীড়’ আশ্রয়ণ প্রকল্পে। তাদের পাকা ঘর ও কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
উল্লাপাড়া উপজেলার হাটিকুমরুল ইউনিয়নের স্বরস্বতী নদীর পাড়ে আশ্রয়ণ প্রকল্পে গিয়ে দেখা যায়, তৃতীয় লিঙ্গের ৩০ জনকে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেখানে জমির মালিকানাসহ পাকা ঘর, গবাদি পশু ও উপার্জনের জন্য সেলাই মেশিন দেওয়া হয়েছে। সেলাই মেশিন ও গবাদি পশু পালন প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়েছে।
বর্তমানে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষেরা আশ্রয়ন প্রকল্পে গানে গানে হাসি-আনন্দে সময় পার করছেন। কেউ ছাগল, হাঁস-মুরগি ও কবুতর পালন করছেন। কেউ শাক-সবজি চাষ করছেন। কেউ আবার রান্না করছেন। এ যেন স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছেন তারা।
আশা নামের তৃতীয় লিঙ্গের একজন ব্যক্তি বলেন, আমাদের বাবা-মা, পরিবার ও সমাজের মানুষ যেটুকু ভালো না বাসত, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার চেয়ে হাজার গুণ বেশি ভালোবাসা দিয়েছেন। সন্তানের মতো কোলে তুলে নিয়েছেন। দোয়া করি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেন দীর্ঘজীবী হোন। ঘরে ঘরে আমাদের মতো অসহায়ের সহায় হোন।
আলো নামের আরেকজন বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পের এ ঘরে আসার পরও আশপাশের মানুষ প্রথমদিকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করত। আমাদের এখানে জায়গা দেওয়ায় তারা ক্ষোভ জানিয়েছিল।পরে ধীরে ধীরে তারা আমাদের সঙ্গে মিশতে শুরু করে, আমাদের সঙ্গে কথা বলে। এভাবেই আমরা সাধারণ মানুষের মতো স্বাভাবিক জীবনে ফিরেছি। মানুষেরও আমাদের ব্যাপারে নেতিবাচক ধারণা পাল্টে ইতিবাচক হচ্ছে।
স্থানীয় আরিফ তালুকদার বলেন, প্রথমদিকে ভেবেছিলাম তারা হয়তো সামাজিক পরিবেশ নষ্ট করবে। এখন তো দেখি তারা গ্রামের মানুষের মতো স্বাভাবিক জীবন যাপন করছে। গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি পালন ও শাক-সবজি চাষে ব্যস্ত। এই মানুষগুলো কাউকে বিরক্ত করে না। এখন গ্রামের মানুষ তাদের সঙ্গে মেশে, তারাও মানুষের সঙ্গে ভালোভাবে কথা বলে ও মেশে।
আশ্রয়ণ প্রকল্পে তৃতীয় লিঙ্গের ব্যক্তিদের নেত্রী মায়া জানান, সরকারি হিসেবে তাদের ৩০ জনকে জমি ও ঘর দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তারা থাকছেন ৫০ জন। তারা স্বাভাবিক জীবন পেয়ে খুশি।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান ভুইয়া বলেন, আমরা সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুলে ২০ জন তৃতীয় লিঙ্গের ব্যক্তিকে পুনর্বাসন করেছি। তাদের মৌলিক চাহিদা পূরণের পাশাপাশি কর্মসংস্থানের জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে এনে জীবনমান উন্নত করার জন্য সকল ব্যবস্থা করা হবে।
তিনি জানান, ২০১৪ সালের ২৬ জানুয়ারি হিজড়াদের তৃতীয় লিঙ্গের স্বীকৃতি দেন শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার। সরকারের হিসাব অনুযায়ী, সারাদেশে ১১ হাজার তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ রয়েছেন। তাদের পুনর্বাসনের কাজ চলমান।
উল্লাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দেওয়ান মওদুদ আহমেদ বলেন, প্রকল্পে বসবাসকারীরা নিজেদের স্বাবলম্বী করতে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছেন। আর তা দেখে নতুন আরও কিছু পরিকল্পনা নেওয়ার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রস্তাব করা হবে।
সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক ড. ফারুক আহম্মদ জানান, সরকারের উদ্যোগকে স্থায়ী রুপ দিতে জেলায় আরও যত তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ আছে, তাদেরও এমন প্রকল্পের আওতায় আনার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
সারাবাংলা/এসএসএ