পরিবার পরিকল্পনার চার জেলা কাগজমুক্ত
১১ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ২৩:২৮
ঢাকা: সরকারের ভিশন ২০২১ বাস্তবায়ন ও ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের আওতাধীন চারটি জেলার মাঠ পর্যায়ের সব কার্যক্রম কাগজমুক্ত (পেপারলেস) ঘোষণা করা হয়েছে। জেলাগুলো হলো: নাটোর, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর ও ঝিনাইদহ।
বৃহস্পতিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীতে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক এ ঘোষণা দেন। এদিন পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের চার জেলায় মাঠ পর্যায়ের কার্যক্রম পেপারলেস শীর্ষক সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের মহাপরিচালক সাহান আরা বানু।
চার জেলার সকল মাঠ কার্যক্রম পেপারলেস ঘোষণা উপলক্ষে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, এত দিন কলম ও রেজিস্ট্রার খাতা নিয়ে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে তথ্য সংগ্রহ করে জনসাধারণের জন্য বিভিন্ন সেবা দিয়ে আসছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। এতে একদিকে তাদের ভোগান্তি পোহাতে হতো, অন্যদিকে সঠিক সেবা নিশ্চিত করা সম্ভব হতো না, সেবা গ্রহীতাদের বিড়ম্বনা পোহাতে হতো। ডিজিটালাইজেশনের আওতায় কাগজমুক্ত হওয়ায় এ চার জেলায় এসব জটিলতা দূর হবে।
বক্তারা আরও বলেন, বাংলাদেশ সরকারের ভিশন ২০২১ বাস্তবায়ন ও ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে সর্বস্তরে তথ্য প্রযুক্তি প্রবর্তন ও প্রচলনের যে যুগান্তকারী উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তারই প্রতিফলন হিসেবে স্বাস্থ্যখাতে নতুন নতুন প্রযুক্তিভিত্তিক সেবা কার্যক্রম সূচিত হয়েছে।
অনুষ্ঠানে পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের অতিরিক্ত সচিব ও পরিচালক (এমআইএস) খান মো. রেজাউল করিম বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে সরকার সর্বস্তরে যেমন ডিজিটালাইজড করছে, তারই ধারাবাহিকতায় স্বাস্থ্যখাতে নতুন নতুন প্রযুক্তির সেবা কার্যক্রম সূচিত হয়ছে। ই-এমআইএসের মাধ্যমে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর মাঠ পর্যায়ে সেবা কার্যক্রমকে ডিজিটাইজড করেছে।
তিনি আরও বলেন, আমরা চারটি জেলায় কর্মরত পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের সব কর্মকর্তা, কর্মচারীসহ মাঠপর্যায়ের সব কর্মীদের পেপারলেস করেছি। তাদেরকে আমরা উন্নতমানের ট্যাব ও সিম দিয়ে সব কার্যক্রম অনলাইনের মাধ্যমে নিয়ে আসতে পেরেছি।
অনুষ্ঠানে ই-এমআইএস কার্যক্রমের বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনার উপর একটি পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপন করা হয়। চার জেলার মাঠ পর্যায়ের উপপরিচালকরা ও তৃণমূল পর্যায়ে সেবা প্রদানকারীদের ই-এমআইএস কার্যক্রমের উপর অভিজ্ঞতা বিনিময় করেন।
অনুষ্ঠানে ই-এমআইএস কার্যক্রমের বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনার উপর একটি পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপনায় বলা হয়, পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের পরিবার কল্যাণ সহকারীগণ তৃণমূল পর্যায়ে কাজ করে থাকেন। তারা কর্ম এলাকার সক্ষম দম্পতিদের পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি, মা ও শিশু স্বাস্থ্য, কিশোর-কিশোরীদের প্রজনন স্বাস্থ্য ও পুষ্টিসেবার কাউন্সেলিংসহ তথ্য সংগ্রহ করে থাকেন। ম্যানুয়াল রেজিস্টারে তাদেরকে প্রতিবছরের শুরুতে মাঠ পর্যায়ের সব খানা ও খানার জনসংখ্যার হিসেব সংগ্রহ করতে হত। সন্তান সংখ্যা ও বয়সভিত্তিক দম্পতি বিন্যাস ছক তৈরি করতে হতো। এরপর তাকে ম্যানুয়াল সিস্টেমে রেজিস্টার ঘেঁটে এমআইএস ফর্ম-১ তৈরি করতে হতো। যার ভিত্তিতে পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শকগণ এমআইএস ফর্ম-২ প্রস্তুত করতেন। এ পুরো প্রক্রিয়াটিই অত্যন্ত সময়সাপেক্ষ ও কষ্টসাধ্য।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, এখন পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের ই-এমআইএস উদ্যোগের আওতায় ই-রেজিস্টারের মাধ্যমে পরিবার কল্যাণ সহকারী ও পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শকগণ এক ক্লিকেই সব তথ্য নিজস্ব ট্যাবে স্বয়ংক্রিয়ভাবে তৈরি করতে পারেন এবং তা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট প্রেরণ করতে পারেন। মূলত পরিবার কল্যাণ সহকারীর ম্যানুয়াল রেজিস্টারটিকেই ইলেক্ট্রনিক রেজিস্টারে রূপান্তর করে সকল স্তরের কাজ সহজীকরণ করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে আরও জানানো হয়, ইউনিয়ন ফ্যাসিলিটি পর্যায়ে (ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র) পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা এবং উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসারগণ মা ও শিশু স্বাস্থ্য সেবা, প্রসূতি সেবা, পুষ্টি সেবা ও সাধারণ রোগী সেবা প্রভৃতি কাজ করে থাকেন। তাদের দৈনন্দিন কাজসহ সব কাজের হিসেবের জন্য কোথাও কোথাও ১৩-১৬ টি ম্যানুয়াল রেজিস্টার পূরণ ও হালনাগাদ করতে হত যা বেশ পরিশ্রমসাধ্য ও সময়সাপেক্ষ।
পাশাপাশি পরিবার কল্যাণ সহকারীগণ যারা ধাত্রীবিদ্যায় প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত তাদেরকেও আলাদাভাবে ম্যানুয়াল রিপোর্ট তৈরি করতে হয়। ইএমআইএস ইনিশিয়েটিভ সকল স্তরের ইউনিয়ন পর্যায়ের সেবাদান কার্যক্রমকে ডিজিটাইজ করে সেবা সহজীকরণ করেছে।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আইসিটি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতর অতিরিক্ত সচিব ও পরিচালক মো. রেজাউল করিম, ডাটা ফর ইমপ্যাক্টর সিনিয়র স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজার মুহম্মদ হুমায়ুন কবির, সেভ দ্য চিলড্রেনের কান্ট্রি ডিরেক্টর ওনো ভ্যান ম্যানেন, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব মো. আলী নুর।
সারাবাংলা/এসবি
কাগজমুক্ত জুনাইদ আহমেদ পলক ভিশন ২০২১ স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়