সাগর-রুনী হত্যা: একমাসের মধ্যে আন্দোলনে নামবে ‘সংগ্রাম পরিষদ’
১১ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ২০:৩৬
ঢাকা: আগামী একমাসের মধ্যে সাংবাদিকদের সব সংগঠনের সঙ্গে সমন্বয় করে ‘সংগ্রাম পরিষদ’ গঠনের মাধ্যমে সাগর-রুনী হত্যার বিচারের আন্দোলনকে বেগবান করার ঘোষণা দিয়েছে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ)।
বৃহস্পতিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে ডিআরইউ চত্বরে আয়োজিত এক প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে এ ঘোষণা দেন সংগঠনের সভাপতি মুরসালিন নোমানী। সাংবাদিক নেতা ও সংবাদকর্মীদের এই প্রতিবাদ সমাবেশে সাগর-রুনী দম্পতির একমাত্র সন্তান মাহির সারওয়ার মেঘও উপস্থিত ছিল।
আরও পড়ুন- সাগর-রুনি হত্যার ৯ বছর, ৭৮ বারেও জমা পড়েনি প্রতিবেদন
প্রয়াত সাংবাদিক দম্পতি মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সারওয়ার ও এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেরুন রুনী ৯ বছর আগের এই দিনটিতে খুন হয়েছিলেন। গত ৯ বছরেও এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
সাগর-রুনি হত্যার বিচারের দাবি জানিয়ে সমাবেশে সাংবাদিক নেতারা বলেন, ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি সাংবাদিক দম্পতি সাগর সারওয়ার ও মেহেরুন রুনীকে নৃশংসভাবে নিজ বাসায় হত্যা করা হয়। এরপর ৯ বছর পেরিয়ে গেলেও হত্যাকারীদের আজও শনাক্ত কিংবা গ্রেফতার করা হয়নি। বিচার প্রক্রিয়াও থমকে আছে। এমনকি ৭৮ বার সময় নিয়েও মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়নি।
তারা বলেন, অবিলম্বে চাঞ্চল্যকর এই মামলার খুনিদের গ্রেফতার করতে হবে। এভাবে সভা-সমাবেশ করলে সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টনক নড়বে না। এজন্য প্রয়োজন সাংবাদিকদের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন।
ডিআরইউ সভাপতি মুরসালিন নোমানী বলেন, গত প্রায় এক দশক ধরে ডিআরইউসহ সাংবাদিক সমাজ সাগর-রুনী দম্পতির খুনিদের বিচারের দাবিতে আন্দোলন করে যাচ্ছে। অথচ হত্যাকাণ্ডের পর তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তারা বলেছিলেন, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই খুনিদের গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনা হবে। কিন্তু ৭৮ হাজার ৬০০ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডেরর বিচারের কোনো উদ্যোগই নেয়নি। বরং তারা তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নামে এ পর্যন্ত ৭৮ বার তারিখ পিছিয়েছে। এখন সেটি ‘সেঞ্চুরি’র দিকে যাচ্ছে।
ডিআরইউ সভাপতি আরও বলেন, সাগর-রুনী পরিবারের কাছে, তাদের সন্তানের কাছে আমরা লজ্জিত। আমাদের বুকটা ফেটে যায় যখন দেখি অন্য হত্যাকাণ্ডের বিচার হয়, তদন্ত হয়, কিন্তু সাগর-রুনী হত্যাকাণ্ডের বিচার হয় না। এমনকি তদন্ত প্রতিবেদন দিতেও গড়িমসি করা হয়। কিন্তু এভাবে আর চলতে দেওয়া যায় না। আগামী একমাসের মধ্যে ডিআরইউ সব সাংবাদিক সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে ‘সংগ্রাম পরিষদ’ গঠন করবে। এই সংগ্রাম পরিষদ রাজপথে আন্দোলনের মধ্য দিয়েই সাংবাদিক দম্পতির খুনিদের বিচারের ব্যবস্থা করবে।
ডিআরইউয়ের সাধারণ সম্পাদক মসিউর রহমান খান বলেন, সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনী হত্যাকান্ডের বিচারের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন হচ্ছে। সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে বারবার বিচারের আশ্বাসও দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু কোনো এক অজানা কারণে এই নৃশংস হত্যার বিচার কাজ শুরুই হয়নি। তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার তারিখ ৭৮ বার পেছানো হয়েছে।
ডিআরইউ সভাপতি মুরসালিন নোমানীর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মসিউর রহমান খানের সঞ্চালনায় প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) দুই অংশের নেতারা। ডিআরইউয়ের সাবেক কয়েকজন সভাপতি ও বর্তমান কমিটির নেতারাও বক্তব্য রাখেন। এছাড়া মেহেরুন রুনীর ছোট ভাই নওশের আলম রোমান সমাবেশে বক্তব্য রাখেন। সমাবেশের শুরুতে এই সাংবাদিক দম্পতির রুহের মাগফিরাত কামনায় দাঁড়িয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।
২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনীকে রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের বাসায় হত্যা করা হয়। পরদিন রুনীর ভাই নওশের আলম রোমান শেরেবাংলা নগর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। চার দিন পর মামলার তদন্তভার ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কাছে হস্তান্তর করা হয়। দুই মাসেরও বেশি সময় তদন্ত করে ডিবি পুলিশ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনে ব্যর্থ হয়। পরে হাইকোর্টের নির্দেশে ২০১২ সালের ১৮ এপ্রিল হত্যা মামলাটির তদন্তভার র্যাবের কাছে হস্তান্তর করা হয়। কিন্তু গত ৯ বছরেও মামলার তদন্তে অগ্রগতির কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
সারাবাংলা/এএইচএইচ/টিআর