১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন ইতিহাসে কলঙ্কজনক অধ্যায়: প্রধানমন্ত্রী
১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ১৫:১৯
ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে ১৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৬ সালের নির্বাচন একটা কলঙ্কজনক অধ্যায় হিসাবে আজও রয়ে গেছে। জনগণের ভোট চুরি করে খালেদা জিয়া দাবি করেছিল, সে আবার প্রধানমন্ত্রী হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষের তীব্র আন্দোলনের মধ্যে মাত্র দেড় মাসে খালেদা জিয়া পদত্যাগে বাধ্য হয়েছিলেন।
সোমবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানী ভাতা ইলেক্ট্রনিক পদ্ধতিতে প্রদান কার্যক্রমের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনসহ দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা প্রান্তে যুক্ত হয়ে মতবিনিময় করেন।
তিনি ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে মতবিনিময় করেন গাজীপুর কালিয়াকৈর, কুড়িগ্রাম ফুলবাড়ী খুলনা পাইকগাছা, চাঁদপুর হাইমচর, মৌলভীবাজার বড়লেখায় যুক্ত হয়ে মতবিনিময় করেন। গণভবন প্রান্তে অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া।
তার আগে প্রধানমন্ত্রী ভার্চুয়ালি গণভবন থেকে যুক্ত হয়ে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের ট্রাস্টিবোর্ডের ৬৬তম সভায় অংশগ্রহণ করেন। গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তন ট্রাস্টিবোর্ডের সভায় অংশ নেন।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে স্বাধীনতাপ্রাপ্ত যুদ্ধ বিধস্ত দেশ গড়ে তোলার কথা উল্লেখ করেন।
প্রধানমন্ত্রী ১৫ আগস্ট জাতির পিতার নির্মম হত্যাকাণ্ডের কথা স্মরণ করে বলেন, ‘আমাদের দেশের মানুষের যে আকাঙ্ক্ষা ছিল, স্বাধীন জাতি হিসাবে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে মূলত সেই আকাঙ্ক্ষাটাও কিন্তু অপূর্ণ থেকে যায়। ১৫ আগস্টের পর ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে সংবিধান লঙ্ঘন করে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের পালা শুরু হয়।’
শুধু সংবিধান না, আমাদের আর্মি রুলস অ্যাক্ট সেটা লঙ্ঘন করা হয়। যার ফলে যারা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতাকারী আর জাতির পিতার আত্মস্বীকৃত খুনি তারাই মূলত ক্ষমতায় চলে আছে বলে দাবি করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘জনগণের ভোটের অধিকারটুকু পর্যন্ত কেড়ে নেওয়া হয়। আজকে ১৫ ফেব্রুয়ারি; একটু স্মরণ করাতে চাই ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশে একটা ভোটারবিহীন নির্বাচন হয়েছিল। মূলত ১৫ আগস্টের পর জিয়াউর রহমান যখন অবৈধ ক্ষমতা দখল করে সে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে এদেশের মানুষের শুধু যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নসাৎ করেছে তার না, মানুষের ভোটের অধিকার, ভাতের অধিকার কেড়ে নিয়েছিল, মানুষের বেঁচে থাকার অধিকার কেড়ে নিয়েছিল। এ দেশের মানুষকে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করারই প্রচেষ্টা হয়েছিল।’
ভোটারবিহীন ১৫ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনের সমালোচনা করে টানা মেয়াদে ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘১৫ ফেব্রুয়ারি তার স্ত্রী খালেদা জিয়া একটা ভোটারবিহীন নির্বাচন করেছিল। কোনো রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করেনি, সে কতগুলো দল তৈরি করে করেছিল, ২ শতাংশ ভোটও পড়েনি। সারা বাংলাদেশে সেনাবাহিনী ডিপ্লয় করে দিয়ে জনগণের ভোট চুরি করে।’
‘ভোট চুরি করে সে আবার দাবি করে প্রধানমন্ত্রী হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ তা মেনে নেয়নি। তীব্র আন্দোলন হয়। সে আন্দোলনের মধ্যে মাত্র দেড় মাসের মধ্যে অর্থ্যাৎ ৩০ মার্চ খালেদা জিয়া পদত্যাগে বাধ্য হয়।’
‘আমি মনে করি বাংলাদেশের ইতিহাসে ১৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৬ সালের নির্বাচন একটা কলঙ্কজনক অধ্যায় হিসাবে আজও রয়ে গেছে’ বলে দাবি করেন তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতা শেখ হাসিনা।
সে সময় আন্দোলন-সংগ্রাম করতে গিয়ে আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মীকেও জীবন দিতে হয়েছিল, তাদের সেই আত্মত্যাগ ও অবদানের কথা স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘আমরা আজকে যে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছি। জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করতে পেরেছি। মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নতি করতে সক্ষম হয়েছি। মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান ফিরিয়ে দিতে পারছি। যে জাতি বিজয়ী জাতি, বিজয়ী জাতি হিসাবে বিশ্বে যে সম্মান অর্জন করেছে; এই অর্জনের পিছনে অনেক ত্যাগ-তিতিক্ষা রয়েছে। আমাদের বহু নেতাকর্মী জীবন দিয়েছে, পঙ্গু হয়েছে। প্রতিটি ক্ষেত্রেই অনেক ত্যাগ স্বীকার করেই অর্জন করতে হয়েছে এটি হলো বাস্তব।’
কারণ জাতির পিতা যখন যুদ্ধবিধস্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলার দায়িত্ব নিয়ে যারা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী ছিলেন তাদের কল্যাণের জন্য তিনি মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট গড়ে তুলেছিলেন সে কথাও স্মরণ করেন তিনি। জাতির পিতা কল্যাণ ট্রাস্টের মাধ্যমে এদেশের মুক্তিযোদ্ধারা যেন সুস্থভাবে-সুন্দরভাবে বাঁচতে পারে তার জন্য নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন সে কথাও তুলে ধরেন তিনি।
আমাদের দুর্ভাগ্য ৭৫’র পরে যারা ক্ষমতায় এসেছে তারা সেটা আর সেভাবে কার্যকর করেনি। ২১ বছর পর যখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে তখন আমরা উদ্যোগে নেই মুক্তিযোদ্ধাদের জাতির কাছে একটা সম্মান ফিরিয়ে দেওয়ার বলে অবহিত করেন প্রধানমন্ত্রী।
ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তন প্রান্তে বক্তব্য রাখেন মুক্তিযুদদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এবং মন্ত্রণালয়ের সচিব তপন কান্তি ঘোষ।
সারাবাংলা/এনআর/একে