‘সরকার বদল হলেও বাংলাদেশ সম্পর্কে ভারতের গুরুত্ব বদলায় না’
১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ১৭:১৪
ঢাকা: ‘ভারত সবসময়ই বাংলাদেশকে গুরুত্ব দিয়ে থাকে। ভারত কখনোই বাংলাদেশের ওপর বড় ভাইয়ের মতো প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করে না। বরং ভারত বাংলাদেশের মতো ঐতিহাসিক বন্ধুর সঙ্গে সহযোগিতামূলক সম্পর্কের মাধ্যমে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার প্রতি গুরুত্ব দেয়।’
সোমবার (১৫ ফেব্র্রুয়ারি) রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবে কূটনৈতিক প্রতিবেদকদের সংগঠন ডিক্যাব আয়োজিত ‘ডিক্যাব টক’ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী এমন মন্তব্য করেন।
ভারতের হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী বলেন, ‘ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক যে বিষয়গুলোর ওপর দাঁড়িয়ে আছে, তার মধ্যে অন্যতম প্রধান চারটি স্তম্ভ হচ্ছে—দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান ঐতিহাসিক সম্পর্ক, পারস্পরিক দায়িত্ববোধ, বিশ্বাস এবং পারস্পরিক স্বার্থ। মাঝেমধ্যে আমাদের আস্থার সম্পর্কে অবিশ্বাস জন্ম নেয়। কিন্তু আমি বলতে চাই, বাংলাদেশের উন্নয়নে ভারত বিশ্বাসী। কেন না ভারত বিশ্বাস করে যে, তার প্রতিবেশি ভালো থাকলে ভারতও ভালো থাকবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ভালো বন্ধুত্ব সব সময়েই সামনের দিকে এগিয়ে যেতে সহায়তা করে। তাই ভারতের কাছে বাংলাদেশ সবসময়েই গুরুত্বপূর্ণ বন্ধুদেশ। যে কারণে ভারতে সরকার বদল হলেও বাংলাদেশ সম্পর্কে নীতি বদল হয় না। ভারতের সব সরকারই বাংলাদেশকে গুরুত্ব দেয়।’
অনেকেই মনে করেন যে, ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে দাদাগিরি বা বড় ভাইসুলভ আচরণ করেন, আপনি কী মনে করেন? কূটনৈতিক এক প্রতিবেদকের এমন প্রশ্নের জবাবে বিক্রম দোরাইস্বামী বলেন, ‘আমরা সকল বাংলাদেশির উন্নয়নে বিশ্বাস করি। দুই দেশের মানুষের মধ্যে সম্পর্ক বাড়তে আমরা ভিসা প্রক্রিয়ার উন্নয়ন করেছি। ভিসা ইস্যুতে চেষ্টা করছি, সর্বোচ্চ পর্যায়ের সেবা দিতে। প্রতিদিন ১ হাজার ৬০০ বাংলাদেশিকে ভারতের ভিসা দেওয়া হয়। দুই দেশের ব্যবসায়ী, শিক্ষার্থী, পর্যটকসহ বিভিন্ন স্তরের মানুষের মধ্যে ইতিবাচক যোগাযোগ রয়েছে। তারপরও মানুষ কেন এমন কথা বলে তা আমার বোধগম্য নয়।’
বিক্রম দোরাইস্বামী বলেন, ‘সৎভাবে বলতে চাই যে এমন কিছু ধারণা করাও ঠিক না। কেন না বাংলাদেশ একটি বড় দেশ। এমন চিন্তা করার কোনো কারণই নেই। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের প্রধান বিষয় হচ্ছে উন্নয়নকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া, ভারতের পররাষ্ট্রনীতিতেও বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। তাই ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে বড় ভাইসুলভ আচরণ করে, এমনটা ভাবার কোনো কারণ নেই।’
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আসন্ন মার্চে ঢাকা সফর সম্পর্কে জানতে চাইলে হাইকমিশনার বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকী এবং স্বাধীনতার ৫০ বছর উদযাপন অনুষ্ঠানে আগামী মার্চে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ঢাকা সফরের পরিকল্পনা রয়েছে। আসন্ন সফর নিয়ে আমরা কাজ করছি। এই সফরে জ্বালানিসহ একাধিক খাতে দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হতে পারে।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আসন্ন ঢাকা সফরের অন্যতম উদ্দেশ্য হচ্ছে- দুই দেশের সম্পর্কে গত ৫০ বছরে যে সোনালি অধ্যায় সৃষ্টি হয়েছে, আগামী ৫০ বছরে এই সম্পর্ক যাতে ছাড়িয়ে আরও নতুন ইতিবাচক সম্পর্কের সৃষ্টি হয়, তার বীজ বোনা।’
রোহিঙ্গা ইস্যুতে ভারতের হাইকমিশনার বলেন, ‘ভারত তার দুই প্রতিবেশি বাংলাদেশ এবং মিয়ানমারকে বিশ্বাস করে। এই দুই প্রতিবেশিকে সংকট থেকে উত্তরণের জন্য ভারত সর্বোচ্চ সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। জটিল এই সংকট সমাধানের জন্য ভারত জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে ফলপ্রসু উদ্যোগ নেবে। ভারতের মূল লক্ষ্য হচ্ছে, মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত মানুষরা যাতে বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারে তাদের বসত-ভিটায় ফিরে যেতে পারে, সেই পরিবেশ সৃষ্টি করা।’
রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের হালনাগাদ তথ্য সম্পর্কে হাইকমিশনার বলেন, ‘চলমান করোনা সংক্রমণ রামপাল প্রকল্প উন্নয়নে প্রভাব ফেলেছে। এরই মধ্যে আমরা এই প্রকল্প উন্নয়ন পরিকল্পনায় যে সময় ঠিক করেছিলাম তার মধ্য থেকে কয়েক মাস হারিয়েছি। এরই মধ্যে ৬৬০ মেগাওয়াটের প্রথম বিদ্যুৎ উৎপাদন লাইন চালু হওয়ার কথা ছিল কিন্তু করোনার কারণে হয়নি। গত জানুয়ারিতে আমি সর্বশেষ প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করেছি এবং সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপ করেছি। ওই সময়ের তথ্য অনুযায়ী, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে প্রথম বিদ্যুৎ উৎপাদন লাইন চালু করতে পারব।’
বাংলাদেশে অনেক ভারতীয় অনিয়মিতভাবে অবস্থান করে কাজ করছে, এই বিষয়ে জানতে চাইলে ভারতের হাইকমিশনার বলেন, ‘বাংলাদেশে অনিয়মিত ভারতীয় থাকলে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ তাদের আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে, এই বিষয়ে আমাদের কোনো অবজেকশন নেই।’
সারাবাংলা/জেআইএল/এমআই