রিজেন্টকাণ্ডের সাহেদকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ
১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ১৯:১৮
চট্টগ্রাম ব্যুরো: করোনভাইরাসের সংক্রমণ পরীক্ষার ভুয়া রিপোর্ট সরবরাহ করে দেশজুড়ে আলোচিত মোহাম্মদ সাহেদ করিমকে চট্টগ্রামের একটি মামলায় সিআইডির রিমান্ডের আবেদন নামঞ্জুর করে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ দিয়েছেন আদালত।
সোমবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) চট্টগ্রামের অ্যাডিশনাল মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মহিউদ্দিন মুরাদ এ আদেশ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন নগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (এসি-প্রসিকিউশন) কাজী মো. শাহাবুদ্দিন আহমেদ।
সিআইডির পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদনের ওপর শুনানির জন্য সোমবার সাহেদ করিমকে চট্টগ্রামের আদালতে হাজির করা হয়েছিল।
এসি শাহাবুদ্দিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘নগরীর ডবলমুরিং থানায় দায়ের হওয়া প্রতারণার মামলার তদন্তভার পাওয়ার পর সিআইডির কর্মকর্তা পাঁচদিনের রিমান্ডের আবেদন করেছিলেন। আদালত শুনানি শেষে রিমান্ডের আবেদন নামঞ্জুর করেছেন। তবে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিয়েছেন।’
ঢাকায় অটোরিকশা চলাচলের জন্য বিআরটিএ’র ভুয়া রুট পারমিট সরবরাহ করে ৯১ লাখ ২৫ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনে চট্টগ্রামের একটি গাড়ি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান মামলাটি দায়ের করেছিল। গত বছরের ১১ অক্টোবর ওই মামলায় সাহেদকে গ্রেফতার দেখানোর পর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেছিল। আদালত চারদিন মঞ্জুর করেছিলেন।
২০২০ সালের ১৫ জুলাই ভারতে পালানোর পথে সাতক্ষীরা সীমান্ত এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয় ঢাকার রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান সাহেদ করিমকে, যার বিরুদ্ধে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের পর চিকিৎসা নিয়ে জালিয়াতির অভিযোগ ওঠে।
ওই বছরের ১৩ জুলাই নগরীর ডবলমুরিং থানার ধনিয়ালাপাড়া এলাকার মেসার্স মেগা মোটরস নামে একটি গাড়ি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন বাদী হয়ে সাহেদ করিমের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন। মামলায় মেগা মোটরসের সাবেক কর্মকর্তা শহীদুল্লাহকেও (৬০) আসামি করা হয়। মামলায় ঢাকায় অটোরিকশা চলাচলের জন্য বিআরটিএ’র ভূয়া রুট পারমিট সরবরাহ করে ৯১ লাখ ২৫ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয় সাহেদ করিমের বিরুদ্ধে। এজাহারে অভিযোগ করা হয়, শহীদুল্লাহর সঙ্গে সম্পর্কের ভিত্তিতে সাহেদ করিম তাদের রুট পারমিট পাইয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে টাকাগুলো নেন এবং সেগুলো আত্মসাত করেন।
ওই মামলা দায়েরের পর সাহেদ করিম সম্পর্কে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসে। নিজেকে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা পরিচয় দিয়ে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে প্রতারণা ও জালিয়াতি করেছিলেন বলে তথ্য পাওয়া যায়।
অভিযোগ পাওয়া যায়, মেগা মোটরসের আমদানির পর চেসিস নম্বর জালিয়াতি করে বিক্রির জন্য রাখা ১৭টি সিএনজি অটোরিকশা ২০১৬ সালে জব্দ করে সাহেদ করিমের রোষানলে পড়েন সিএমপির গোয়েন্দা শাখার একাধিক কর্মকর্তা। সাহেদ শুধু অটোরিকশাগুলো ছাড়িয়ে নিয়েই ক্ষান্ত হননি, দাপট দেখিয়ে অভিযানে থাকা চার পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে হয়রানির অভিযোগ ঠুকে দেন পুলিশের ডিসিপ্লিস এন্ড প্রফেশনাল স্ট্যান্ডার্ড (ডিএনপিএস) বিভাগে। এরপর সহকারি উপ-পরিদর্শক (এএসআই) পদমর্যাদার দু’জন কর্মকর্তাকে মৃদু শাস্তি দেওয়া হয়। তৎকালীন উপ-পরিদর্শক (বর্তমানে পরিদর্শক) পদমর্যাদার দু’জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্ত চলমান আছে।
যে চারজন পুলিশ সদস্য সাহেদ করিমের রোষানলে পড়ে হয়রানির শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে, তারা হলেন- নগরীর খুলশী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আফতাব হোসেন, চান্দগাঁও থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রাজেস বড়ুয়া এবং এএসআই সাদেক মোহাম্মদ নাজমুল হক ও মো. আজমির শরীফ।
সারাবাংলা/আরডি/এমআই