মহাপরিচালককে ঘেরাও করে নর্দার্ন মেডিকেল শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ২৩:২১
রংপুর: অনুমোদনহীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ‘ভুল বুঝিয়ে ভর্তি’র দায়ে কলেজ কর্তৃপক্ষের বিচারের দাবি ও মাইগ্রেশন করে অন্য মেডিকেল কলেজে লেখাপড়া করার সুযোগের দাবিতে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছেন রংপুরের নর্দান প্রাইভেট মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা। রংপুর মেডিকেল কলেজে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক এ এইচ এম এনায়েত হোসেন এক সেমিনারে যোগ দিতে আসছেন জেনে শিক্ষার্থীরা এমন অবস্থান নেন। এ সময় শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের মুখে পড়লে মহাপরিচালক ‘বিষয়টি দেখবেন’ বলে তড়িঘড়ি চলে যান।
সোমবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) রংপুর মেডিকেল কলেজের সামনে নেপাল থেকে আসা ৪০ শিক্ষার্থীসহ তিন শতাধিক শিক্ষার্থী এই কর্মসূচি পালন করেন।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) অনুমোদন না থাকলেও শিক্ষার্থীদের ভুল বুঝিয়ে নেপাল থেকে আসা ৪০ জনসহ বাংলাদেশি তিন শতাধিক শিক্ষার্থীকে ভর্তি করে নর্দার্ন প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ। ভর্তির পর অনুমোদনের বিষয়টি জানাজানি হলে শিক্ষার্থীরা বার বার কর্তৃপক্ষকে তাগাদা দেওয়ার পরও কোর্স পরিচালনায় কোনো অনুমোদন আনতে পারেনি। এরই মধ্যে যারা এখান থেকে শেষ বর্ষের পড়ালেখা শেষ করেছেন, তাদের জন্যও ইন্টার্নশিপের ব্যবস্থা করতে পারেনি কলেজ কর্তৃপক্ষ।
তারা আরও বলেন, ধার করা রোগী ও শিক্ষক দিয়ে ক্লাস করিয়ে তাদের প্রতারণার মাধ্যমে শিক্ষা জীবন ধ্বংস করেছে নর্দার্ন মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ। পাস করার পরও ইন্টার্নশিপ করতে না পারায় রেজিস্ট্রেশনসহ অন্য প্রতিষ্ঠানে মাইগ্রেশনের দাবিতে আন্দোলনে নামেন বলে জানান তারা।
বিক্ষোভে অংশ নেওয়া নেপালি শিক্ষার্থী সারমা ও নারমিন অভিযোগ করেন বলেন, আমরা পড়াশোনা করতে এসে বেকায়দায় পড়েছি। কলেজ কর্তৃপক্ষ বারবার আশ্বাস দিয়েছে। কিন্তু বারবার সময় নিয়েও তারা সমস্যা সমাধান করতে পারেনি। বিপুল পরিমাণ টাকা দিয়ে এখানে ভর্তি হয়েছি। কলেজ কর্তৃপক্ষ যে প্রতারক, তা আমরা জানতাম না। বিএমডিসি’র কোনো অনুমোদন নেই, সেটাও আমাদের বলা হয়নি। তাই বেশ কয়েকদিন থেকে আমরা আন্দোলন করছি। আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল (রোববার) মধ্যরাতে কলেজের ভাড়া করা মেস থেকে বাসার মালিক আমাদের বের করে দিয়েছে।
নেপালি আরেক শিক্ষার্থী পূজা চৌধুরী বলেন, আমাদের কাছে শুধু রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্টিফিকেট আছে। ওটা আমরা পাস করছি। পরে ইন্টার্ন করার জন্য বিএমডিসি যে সার্টিফিকেট দেয়, সে সার্টিফিকেট তো আমাদের নেই। আমাদের তো একবছর নষ্ট হয়ে গেল। এর ক্ষতিপূরণ আমরা কার কাছে চাইব? তাই দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালাবেন বলে জানান তিনি।
এদিকে, সোমবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক এ এইচ এম এনায়েত হোসেনকে শিক্ষার্থীরা ঘেরাও করেন। মহাপরিচালকের কাছে মাইগ্রেশনের মাধ্যমে তাদের অন্য কোনো মেডিকেল কলেজে লেখাপড়া করার সুযোগ দেওয়ার দাবি জানান। এসময় মহাপরিচালক বিষয়টি দেখবেন বলে তড়িঘড়ি গাড়িতে উঠে চলে যান।
এর আগে, গতকাল রোববার মধ্যরাতে নর্দান মেডিকেল কলেজের ৩২ নেপালি শিক্ষার্থীকে ভয়ভীতি দেখিয়ে হোস্টেল থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে মেস মালিকের বিরুদ্ধে। পরে দেশীয় শিক্ষার্থীদের সহায়তায় নেপালি শিক্ষার্থীরা রংপুর মেট্রোপলিটন কোতয়ালি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।
তবে কোনো শিক্ষার্থীদের ভয়ভীতি দেখিয়ে আবাসিক থেকে বের করে দেওয়ার ঘটনা মিথ্যা দাবি করে নর্দান মেডিকেল কলেজের পরিচালক আফজাল হোসেন জানিয়েছেন, প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে একটি অসাধু মহল পরিকল্পিতভাবে এই ঘটনা সাজিয়েছে।
এর আগে, গত ২৪ জানুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ শাখার পরিদর্শকসহ একটি একটি প্রতিনিধি দল নর্দান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পরিদর্শন করতে গিয়ে শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে পড়েন। প্রতারণার শিকার দাবি করে ভবিষ্যৎ রক্ষার দাবি জানান শিক্ষার্থীরা।
সেদিন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ শাখার পরিদর্শক জাওয়াদুল হক কলেজ কর্তৃপক্ষের কিছু অনিয়ম পেয়েছেন জানিয়ে বলেছিলেন, নর্দান মেডিকেলে বেশ কিছু অনিয়মের বিষয়ে স্বীকার করেছে কর্তৃপক্ষ। তারা এসব সমস্যা উত্তরণের চেষ্টা করছেন।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে রংপুরের নর্দান প্রাইভেট মেডিকেল কলেজের অনুমোদন পাঁচ বছর আগেই বাতিল করে দেয় স্বাস্থ্য অধিদফতর। পর্যাপ্ত অবকাঠামো, হাসপাতাল চালু, অর্গানোগ্রাম প্রণয়ন ও লোকবল নিয়োগের মাধ্যমে অনুমতি নবায়ন করতে বলা হয়। কিন্তু নবায়ন না করেই প্রতিবছর শিক্ষার্থী ভর্তি করতে থাকে মেডিকেল কলেজটি।
সারাবাংলা/টিআর
নর্দার্ন প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ নর্দার্ন মেডিকেল কলেজ শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ