‘ভোট ডাকাতির জন্য নুরুল হুদা অমর হয়ে থাকবেন’
১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ১৬:০৬
ঢাকা: অভিনব কায়দায় ভোট ডাকাতির জন্য প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা ইতিহাসে অমর হয়ে থাকবেন বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
মঙ্গলবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) নয়াপল্টনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন। চতুর্থ ধাপে অনুষ্ঠি পৌরসভা নির্বাচন সম্পর্কে দলীয় অবস্থান তুলে ধরতে এ সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করা হয়।
রিজভী বলেন, ‘গত পরশু দেশব্যাপী চতুর্থ দফায় ৫৫টি পৌরসভায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। আগের ধাপের নির্বাচনগুলোর মতোই পরশুর নির্বাচনও ছিল আওয়ামী সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের দখলে। সব ভোটকেন্দ্রেই তাদের দৌরাত্ব ছিল আগের মতোই ব্যাপক-নজীরবিহীন এবং ভোটকেন্দ্রগুলো ছিল সন্ত্রাসের অভয়ারণ্য।’
তিনি বলেন, ‘বর্তমানে ব্যাপক সন্ত্রাস, উদাহরণহীন অনিয়ম ও ভোট ডাকাতির যে নির্বাচন হচ্ছে, তা নিয়ে এক মহাকাব্য রচনা করা সম্ভব। অনাচারের ভোট নিয়ে দেশ-বিদেশে সমালোচনার যে ঝড় উঠেছে সেটিকে পাত্তাই দেয় না নির্বাচন কমিশন। সরকার নিজস্ব অবয়বে গড়ে তুলেছে নির্বাচন কমিশন। সুতরাং মাফিয়া চরিত্রের গভীর প্রভাব দেখা যায় প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ কতিপয় নির্বাচন কমিশনারের আচরণে। সহিংস ভোট ডাকাতি বর্তমান নির্বাচন কমিশনের দ্বারা অনুপ্রাণিত।’
রিজভী বলেন, ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার এতটই আওয়ামী-বান্ধব যে, তিনি ঝড়-জলোচ্ছ্বাস-বন্যা-করোনা কোনকিছুকেই গ্রাহ্য করেননি। করোনার সময় যশোর কেশবপুর পৌরসভার দুটি ওয়ার্ডকে রেড জোন ঘোষণার পরও সেখানে নির্বাচন হয়েছে। অর্থাৎ আওয়ামী লীগের অনুকূলে একতরফা নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে কে এম নুরুল হুদা অস্থির হয়ে পড়েন। কারণ শেখ হাসিনাকে খুশী করার জন্য তিনি আত্মনিবেদিত।‘
‘গণতন্ত্র, নির্বাচন, সুষ্ঠু ভোট— এসব কে এম নুরুল হুদা থোড়াই কেয়ার করেন। একতরফা নির্বাচন করার পরও রক্তাক্ত সহিংসতায় প্রাণহানির ঘটনার কলেবর বৃদ্ধি পাচ্ছে। দুদিন আগেও মাদারীপুরের কালকিনীতে একজনকে পিটিয়ে হত্যা এবং চট্টগ্রামের পটিয়ায় আরেকজনকে হত্যা ও চারজনকে আহত করার ঘটনা আওয়ামী সহিংস নির্বাচনের ধারাবাহিকতার আরেকটি দৃষ্টান্ত’— বলেন রুহুল কবির রিজভী।
তিনি বরেন, ‘অভিনব সন্ত্রাসী কায়দায় ভোট ডাকাতির নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য কে এম নুরুল হুদা ইতিহাসে অমর হয়ে থাকবেন। ভোটারদের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়ার অবিচারের কাহিনীর প্রধান খলনায়ক কে এম নুরুল হুদা সুষ্ঠু নির্বাচনকে লাশ বানিয়ে কফিনে পেরেক মেরে দিয়েছেন। অবৈধ ক্ষমতাসীনদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য অত্যন্ত নিপুন হাতিয়ার হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে নির্বাচন এবং সুষ্ঠু ভোটের শত্রু প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও তার খয়ের খাঁ কতিপয় নির্বাচন কমিশনার।’
রিজভী বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার, যিনি সুষ্ঠু নির্বাচনের পক্ষে রয়েছেন। তিনি বিবেক যন্ত্রণায় ভুগতে ভুগতে এখন পদত্যাগের কথা বলছেন। তিনি যথার্থই বলেছেন, নির্বাচন ব্যবস্থা এখন গভীর খাদের কিনারে। গণতন্ত্রমনা বাংলাদেশিদের আত্মমর্যাদাকে ভুলুন্ঠিত করেছেন কে এম নুরুল হুদা। বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অনাচার-দুর্নীতি ও লুটপাটের তথ্য সব ভালোভাবেই সংরক্ষিত আছে। এদের অপকর্মের বিচার হবেই।’
তিনি বলেন, ‘এই সেই নুরুল হুদা, যিনি স্বেচ্ছাসমর্পণমূলক আত্মঘাতি সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছিলেন। তার ওপর অর্পিত সাংবিধানিক দায়িত্ব তিনি সরকারের পদতলে অর্পণের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২ এর ৯১ ই-ধারা (১ ও ২ উপ-ধারা অনুযায়ী) নির্বাচনে কোনো প্রার্থীর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে তা তদন্ত করে এবং তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্ট প্রার্থীর প্রার্থীতা বাতিল করার ক্ষমতা রয়েছে নির্বাচন কমিশনের হাতে। অথচ কে এম নুরুল হুদার নেতৃত্বাধীন এই কমিশন তাদের সেই ক্ষমতা সরকারের কাছে বিলিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। সুতরাং এই ঘটনায় প্রমাণিত হয়- প্রধান নির্বাচন কমিশনার কমিশনের দায়িত্ব নিয়েছেন সুষ্ঠু ভোট করার জন্য নয়, বরং শেখ হাসিনার এজেন্ডা বাস্তবায়ন করার জন্য।’
রিজভী বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে সুষ্ঠু নির্বাচন করার জন্য যথেষ্ট শক্তিশালী বিধান রয়েছে। কিন্তু তারা নিজেদের ক্ষমতাকে প্রয়োগ না করে শেখ হাসিনার পদলেহনেই ব্যস্ত রয়েছেন। নির্বাচন কমিশন সব নির্বাচনে শেখ হাসিনার সিলেক্টেড প্রার্থীকে বিজয়ী ঘোষণা করে।’
কর্মসূচি
বুধবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) বরিশাল বিভাগ বাদে ঢাকাসহ সারাদেশের মহানগর ও জেলা সদরে প্রতিবাদ সমাবেশ ও বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হবে। কর্মসূচির অংশ হিসেবে ঢাকায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সকাল ১০টায় ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে প্রতিবাদ সমাবেশ ও বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হবে।
এছাড়া সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনে দাবিতে বিএনপির মেয়র প্রার্থীদের উদ্যোগে আয়োজিত সমাবেশ আগামী ১৮ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার বরিশাল মহানগরে অনুষ্ঠিত হবে। ওই সমাবেশে বরিশাল বিভাগের অধীন সব জেলা বিএনপি এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীকে অংশ নেওয়ার জন্য অনুরোধ জানান রিজভী।
সারাবাংলা/এজেড/পিটিএম
কে এম নুরুল হুদা প্রধান নির্বাচন কমিশনার ভোট ডাকাতি রুহুল কবীর রিজভী