Saturday 28 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সাত কলেজ অধিভুক্তির চার বছর: শিক্ষার্থীদের প্রাপ্তি-প্রত্যাশা


১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ১৩:৩৮

রাজধানীর সরকারি সাত কলেজকে ঢাকা বিশ্বিবিদ্যালয়ের অধিভুক্তির চার বছর পূর্ণ হলো ১৬ ফেব্রুয়ারি। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর চাপ কমাতে ও শিক্ষার মানোন্নয়নের লক্ষ্যে ২০১৭ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার সাত কলেজকে ঢাবির অধিভুক্ত ঘোষণা করা হয়।

ঢাকা কলেজ, ইডেন কলেজ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, সরকারি কবি নজরুল কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, মিরপুর বাঙলা কলেজ ও সরকারি তিতুমীর কলেজকে অন্তর্ভুক্ত করা হয় এ তালিকায়। অধিভুক্তির প্রধান উদ্দেশ্য ছিল পড়াশোনার মানোন্নয়ন, জট বিহীন সেশন, শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশিত ফলাফল নিশ্চিত করা ইত্যাদি। শিক্ষার মান উন্নয়নের লক্ষ্য নিয়ে অধিভুক্ত করা হলেও নানান জটিলতায় সমাধান হচ্ছে না। দেখা যাচ্ছে, নির্দিষ্ট সিলেবাস না পাওয়া, র্নিধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও পরীক্ষার রুটিন না পাওয়া, রুটিন পেলেও ফলাফল প্রকাশে র্দীঘসূত্রিতা, গণহারে ফেল করার মতো নানান সমস্যা লেগেই আছে সাত কলেজে।

বিজ্ঞাপন

আন্দোলন করে আদায় করতে হয়, এক সমস্যা সমাধান হলে আরেক সমস্যার সূত্রপাত হয়। প্রায় আড়াই লক্ষাধিক শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত রয়েছে এ সাত কলেজে। অধিভুক্তির ৪ বছরে শিক্ষার্থীদের চাওয়া পাওয়ার ফারাক কতোটুক পূরণ হলো, শিক্ষার্থীরা যেভাবে চেয়েছিলেন তা ঠিকভাবে পেয়েছেন কি না? এসব নিয়ে সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের মতামত তুলে ধরেছেন নিফাত সুলতানা মৃধা:

মো.আল আমিন মাসুদ, শিক্ষার্থী সরকারি তিতুমীর কলেজ: ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হয়েছিলাম। সে হিসেবে ২০১৭ সালের মধ্যে অনার্স-মাস্টার্স শেষ হওয়ার কথা ছিল। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সমব্যাচের সবার শিক্ষা জীবন শেষ প্রায় ২ বছর আগে। অথচ আমাদের মাস্টার্স পরীক্ষা শেষ হলো সবে। চাকরি বাজারে যেমন পিছিয়ে গেলাম, তেমনই সরকারি চাকরির জন্য বয়সসীমাও শেষের পথে। প্রধানমন্ত্রী যে কারণে অধিভুক্ত করেছিল; বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষে হেয়ালির কারণে সে উদ্দেশ্য পূরণ সম্ভব হয়নি। পরীক্ষা ও ফল প্রকাশসহ শিক্ষার্থীদের আন্দোলন করতে হয়। এক্ষেত্রে ঢাবি কর্তৃপক্ষ উচিত বিচক্ষণতার সঙ্গে পূর্বের পরীক্ষা নেওয়ার পাশাপাশি নতুনদের একাডেমিক ক্যালেন্ডার, সিলেবাস প্রদান করা। এছাড়াও প্রশ্ন প্রণয়ন ও খাতা মূল্যায়নে তদারিক করা এবং ফলাফল প্রণয়ন অটোমেশন করা। এগুলো করা গেলে হয়তবা অধিভুক্তের সুফল আসা শুরু করবে।

বিজ্ঞাপন

নাহিদা আক্রার, ইডেন মহিলা কলেজ: উচ্চশিক্ষার মান বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে ২০১৭ সালের এই দিনে ঢাবি অধিভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সাবেক ভিসি মহোদয়। কিন্তু আদৌও তা হচ্ছে না। আন্দোলন ব্যতিত কিচ্ছু পাচ্ছে না সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। সময়মতো রেজাল্ট না দেওয়া, গণহারে অকৃতকার্য করানো, প্রশাসনিক কাজে হেয়ালি করাসহ বহু ঘটনা লক্ষ্য করা যায় এখনও। এমনকি এসব নিয়ে আন্দোলন করলে ঢাবি শিক্ষার্থীসহ কিছু লোকের কাছে মজার পাত্র হতে হয় সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের। আমাদের প্রত্যেকটা কলেজের রয়েছে নিজ নিজ ইতিহাস ঐতিহ্য। আমরা ঢাবি সমতূল্য হতে চাইবো না। কিন্তু যেহেতু ঢাবি অধিভুক্ত সেহেতু অবশ্যই আমাদের অভিজ্ঞ শিক্ষক দ্বারা নিয়মিত ক্লাস নেওয়াসহ প্রত্যেকটা কলেজের মানোন্নয়ন করা প্রয়োজন। ‘আমরা আর চাই না নামে মান উন্নয়ন, এবার ফলাফল চাই উন্নয়নের।’

আফরোজা আক্তার তন্বী, সরকারি তিতুমীর কলেজ: যখন অধিভুক্ত হই তখন প্রত্যাশা অনেক ছিল। ভেবেছিলাম পড়াশোনার মান বাড়বে, নিয়মিত ক্লাস হবে। কিন্তু প্রত্যাশার তুলনায় প্রাপ্তি শূন্য। অধিভুক্ত হবার পরে এক বর্ষ সম্পন্ন হতেই দুই বছর লেগেছে, ভাবলাম সামনে ভালো কিছু আছে। কিন্তু এরপর শুরু হলো একের পর এক বিপত্তি। অনিয়মিত ক্লাস, রেজাল্ট বিপর্যয়, কোনো সুনির্দিষ্ট একাডেমিক ক্যালেন্ডার না থাকা, দেরি করে রেজাল্ট প্রকাশ, হুটহাট নতুন নিয়ম-নোটিশ। পড়াশোনার মান বাড়ার জন্য যেসব উদ্যোগ নিতে হবে সেখানে কিছুই না করে সবকিছু মিলিয়ে একটা গোলেমেলে অবস্থা। সত্যি বলতে পড়াশোনার মান বাড়েনি বরং এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মধ্যে আছি। যেকোনো কিছুর জন্য বারবার স্টুডেন্টদের আন্দোলনে নামতে হচ্ছে। সার্টিফিকেটের মান বাড়ার জায়গায় রেজাল্টের মান কমেছে। দিনশেষে কিছু বললেই তারা বলছে, স্টুডেন্ট খারাপ, পড়ে না তাই রেজাল্ট খারাপ হচ্ছে। সাত কলেজে কোনো খারাপ স্টুডেন্ট ভর্তি হয়নি। বরং ঢাবি অধিভুক্ত হওয়ার পরে বিভিন্ন সমস্যায় পড়ে বিশাল সংখ্যক শিক্ষার্থী এক হতাশাগ্রস্ত জীবন কাটাচ্ছে। যেখানে সঙ্গের সব সহপাঠীরা গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করছে দুই বছর আগে, সেখানে এখনও আটকে আছি।

মাসুম বিল্লাহ ইমন, কবি নজরুল সরকারি কলেজ: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত হয়ে আমাদের সাত কলেজে একটি বন্ধন তৈরি হয়েছে। যার অনেক সুবিধা রয়েছে। যেমন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদপত্র, ক্যাম্পাস সুবিধাগুলো পাচ্ছি। বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক কার্যক্রমে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে মতো গুরুত্ব পাচ্ছি। তাছাড়াও সেশনজট কমাতে এই করোনা পরিস্থিতি কাটিয়ে ও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় প্রথম বর্ষ, দ্বিতীয় বর্ষ, তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীদের ফাইনাল পরীক্ষা এই মার্চেই নেওয়া হবে। যার ফলে আমাদের সঠিক সময়ে শিক্ষাবর্ষ শেষ হওয়ায় প্রত্যাশা করা যায়।

মো.ফরিদুল ইসলাম, ঢাকা কলেজ: ৪ বছর শেষে বেশিরভাগ শিক্ষার্থী হতাশ। পড়াশোনার মান বৃদ্ধি পেলেও সেটা যথেষ্ট নয়। সেশনজটে পড়তে হয়েছে বেশ কয়েকটি ব্যাচকে। ২০১৭ সনে মাস্টার্স পরীক্ষা হওয়ার কথা যাদের তারা ২০২১ এ শেষ করেছে। এমন জটে পড়েছে বেশ কিছু ব্যাচ। ৪ বছরে পা রাখলেও এখনো ঢাবি কর্তৃপক্ষ ৭ কলেজের জন্য আলাদা স্বতন্ত্র পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিস খোলেনি।

সাকিলা পারভিন, সরকারি তিতুমীর কলেজ: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যে হুটহাট পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, এতে বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। আমরা চাই পরীক্ষা নেওয়ার ২ মাস আগে অন্তত আমাদের জানিয়ে দেওয়া হোক আর দ্রুত ফল প্রকাশের ব্যবস্থা করা হক। স্বতন্ত্র পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ অফিস খুলে ৭ কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের নানান দুর্দশা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর থেকে অতিরিক্ত চাপ থেকে মুক্ত করা যায়।

সাত কলেজ প্রধান বাহালুল হক চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের নিয়ে আমরা সবসময় সচেতন। প্রায় ১ লাখ শিক্ষার্থীদের আমরা পাস করিয়ে দিয়েছি। করোনাকালীন পরিস্থিতিতেও ১ মাসের মধ্যে ৮০ হাজার শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিচ্ছে। তবু এই করোনার সময় শিক্ষার্থীদের ক্লাস, পড়াশোনা, পরীক্ষা নিয়ে আমরাও চিন্তিত। শিক্ষার্থীদের ভালোর জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করছি। ভালোমন্দ মিলিয়েই তো সব। তবুও আমাদের একটু সময় দিতে হবে, সব ঠিক হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।

সারাবাংলা/এএম

সাত কলেজ

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

চট্টগ্রামে খালে ভাসছিল অর্ধগলিত লাশ
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৪:৩৩

বিএসইসি‘র চেয়ারম্যানের পদত্যাগ দাবি
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৩:৫১

সম্পর্কিত খবর