ঢাবি: চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানার বাসিন্দা মোহাম্মদ ইরফান। ২০২০ সালের মানবিক বিভাগ থেকে উচ্চমাধ্যমিকের পরীক্ষার্থী ছিলেন। বাকি ১৩ লাখ শিক্ষার্থীর সঙ্গে তিনিও ‘অটো পাস’ করেছেন। সম্প্রতি এইচএসসির ফল প্রকাশের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে পুরোদমে প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। তবে ভর্তি পরীক্ষায় আবেদনের ক্ষেত্রে ঢাবি নতুন যে ন্যূনতম যোগ্যতার মানদণ্ড নির্ধারণ করে দিয়েছে, তা দেখেই মাথায় হাত ইরফানের। নতুন এই ঘোষণা অনুযায়ী তিনি যে ভর্তি পরীক্ষায় আবেদনই করতে পারবেন না!
ইরফান জানালেন, সম্প্রতি প্রকাশিত ফল অনুযায়ী মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক মিলিয়ে তার মোট জিপিএ ৭ দশমিক ৯৭ পয়েন্ট। ঢাবিতে এই বিভাগের শিক্ষার্থীদের আবেদন করতে হলে দুই পরীক্ষা মিলিয়ে ন্যূনতম ৭.০০ পয়েন্ট থাকতে হতো। সে অনুযায়ীই ইরফান প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন ইরফান। কিন্তু ঢাবি কর্তৃক্ষ সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এ বছর পরীক্ষায় বসতে হলে ন্যূনতম জিপিএ ৮.০০ থাকতে হবে দুই পরীক্ষা মিলিয়ে। আর তাতেই ঢাবিতে পড়ার স্বপ্ন পূরণের জন্য পরীক্ষাই দিতে পারবেন না তিনি।
রীতিমতো কান্নাজড়িত কণ্ঠে ইরফান সারাবাংলাকে বলেন, বেশ উৎসাহ নিয়েই পড়ালেখা করছিলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার জন্য। গত বছরের সার্কুলার অনুযায়ীও সব ঠিকঠাক ছিল। কিন্তু এবারে তো আবেদনের পয়েন্ট বাড়িয়েছে। সব ইউনিটেই শূন্য দশমিক ৫০ পয়েন্ট বাড়ানো হলেও ‘খ’ ইউনিটে পয়েন্ট বাড়ানো ১.০০ পয়েন্ট। ‘খ’ ইউনিটেই কেন দ্বিগুণ পয়েন্ট বাড়াতে হলো— আক্ষেপ নিয়ে সেই প্রশ্নটি রাখছেন ইরফান।
কেবল ইরফান নয়, এমন সমস্যায় পড়েছেন আরও অনেক শিক্ষার্থীই। অন্য বছরগুলোতে ‘খ’ ইউনিটের জন্য ন্যূনতম যে যোগ্যতা প্রয়োজন হতো, এবার ১.০০ পয়েন্ট বাড়িয়ে দেওয়ায় অনেকেই এই পরীক্ষায় বসতে পারবেন না। অন্য ইউনিটগুলোতেও আবেদনের যোগ্যতা হিসেবে মাধ্যমিক-উচ্চ মাধ্যমিকের সম্মিলিত জিপিএ ০.৫০ পয়েন্ট বাড়িয়ে দেওয়ায় এসব ইউনিটেও ভর্তি পরীক্ষায় বসার সুযোগ হারাবেন অনেকেই। তবে এর মধ্যেও ‘খ’ ইউনিটের ন্যূনতম যোগ্যতা অন্য ইউনিটগুলোর তুলনায় দ্বিগুণ করা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তবে কেন এমনটি করা হয়েছে, সে বিষয়ে মন্তব্য করতে নারাজ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
এর আগে, গত ২০২৯-২০ সেশনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক প্রথমবর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার ক্ষেত্রে আবেদনের যোগ্যতা হিসেবে এসএসসি ও এইচএসসি (সমমান) মিলিয়ে ন্যূনতম জিপিএ থাকতে হতো ‘ক’ ইউনিটে ৮, ‘খ’ ইউনিটে ৭, ‘গ’ ইউনিটে ৭.৫০, ‘ঘ’ ইউনিটে ৮ এবং ‘চ’ ইউনিটে ৬.৫০।
এবারে ‘খ’ ইউনিট বাদে বাকি চার ইউনিটেই ০.৫০ পয়েন্ট করে বাড়ানো হয়েছে ন্যূনতম জিপিএ। আর ‘খ’ ইউনিটে বাড়ানো হয়েছে ১ পয়েন্ট। ফলে ঢাবির ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার জন্য আবেদন করতে হলে ‘ক’ ইউনিটের জন্য ন্যূনতম জিপিএ থাকতে হবে ৮.৫০, ‘খ’ ও ‘গ’ ইউনিটের জন্য থাকতে হবে ৮, বিভাগ পরিবর্তনের জন্য ‘ঘ’ ইউনিটে মানবিকের শিক্ষার্থীদের জন্য ৮ (যা আগে ছিল ৭) ও বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের জন্য থাকতে হবে ৮.৫০ (যা আগে ছিল ৮) করা হয়েছে। এছাড়া ‘চ’ ইউনিটে ভর্তির আবেদন যোগ্যতার ক্ষেত্রে ন্যূনতম জিপিএ গত বছরের তুলনায় ০.৫০ বাড়িয়ে ৭ করা হয়েছে।
অন্য ইউনিটগুলোর তুলনায় ‘খ’ ইউনিটের আবেদনের ন্যূনতম যোগ্যতা বেশি বাড়ানোর ফলে বিজ্ঞান ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করা শিক্ষার্থীদের তুলনায় মানবিক বিভাগ থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশ ভর্তি পরীক্ষায় বসার সুযোগই পাচ্ছেন না এবার।
বৃহস্পতিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ ভর্তি কমিটির সভায় ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার এই ন্যূনতম যোগ্যতা চূড়ান্ত হওয়ার পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে আলোচনা-সমালোচনা।
কেবল কলা অনুষদভুক্ত ‘খ’ ইউনিটেই কেন আবেদনের যোগ্যতা পূর্ণ এক পয়েন্ট বাড়ানো হয়েছে— জানতে চাইলে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি ঢাবি কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক আবু মো. দেলোয়ার হোসেন। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, আমি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে পারব না। তাছাড়া আমার কাছে এখনও পর্যন্ত কোনো অভিযোগও আসেনি।
এই বিষয়ে জানতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামান ও উপউপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক এ কে এম মাকসুদ কামালের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তারা রিসিভ করেননি। কলা অনুষদের আরও কয়েকজন শিক্ষকের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারাও মন্তব্য করতে রাজি হননি।
প্রসঙ্গত, আগামী মে মাসের ২১ তারিখ থেকে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক প্রথম বর্ষে ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণ শুরু করবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ‘ক’, ‘খ’, ‘গ’, ও ‘ঘ’ ইউনিটের পরীক্ষা যথাক্রমে মে মাসের ২১, ২২, ২৭ ও ২৮ তারিখ অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া ‘চ’ ইউনিটের পরীক্ষা হবে ৫ জুন।