সিআইসির কার্যক্রম ও অতিরিক্ত প্রণোদনা নিয়ে দুদকের প্রশ্ন!
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ২২:০০
ঢাকা: জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেল (সিআইসি) গোয়েন্দা কার্যক্রম করে থাকে। সম্প্রতি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এ সিআইসির কার্যক্রম এবং সেলটিতে কর্মরত কর্মকর্তাদের প্রণোদনা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। সে জন্য দুদক থেকে রাষ্ট্রপতির কাছে সেলটির কার্যক্রম এবং কর্মকর্তাদের অতিরিক্ত প্রণোদনা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে এবং সেটির জন্য একটি প্রস্তাবনাও রাষ্ট্রপতির কাছে দেওয়া হয়েছে।
রাষ্ট্রপতির কাছে দুদকের প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, সিআইসির কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তাদের প্রণোদনা স্বরূপ বিপুল পরিমাণ আর্থিক সুবিধা প্রদান করা হচ্ছে। এ রূপ গোয়েন্দা কার্যক্রমের জন্য প্রণোদনা প্রদান যুক্তিসঙ্গত হলেও তা একটি আইনের আওতায় যুক্তিসঙ্গত পরিমাণ হওয়া উচিত। বর্তমানে প্রণোদনা প্রদান ব্যবস্থাটি পরীক্ষাপূর্বক প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের পরিবর্তে নির্দিষ্ট যৌক্তিক হারে প্রণোদনা প্রদানের জন্য আইন প্রণয়ন প্রয়োজন।
একইভাবে আয়কর, শূল্ক ও মূসক আদায়ে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখার ক্ষেত্রে প্রণোদনা প্রদানের যে বিধানবলি রয়েছে তা পুনঃনিরীক্ষা প্রয়োজন। সিআইসি, এলটিইউ,শুল্ক বা মূসক আদায়ে তথাকথিত অসাধারণ ভূমিকা রাখার ভিত্তিতে মাত্রাতিরিক্ত প্রণোদনা বা পুরস্কার প্রদান করা হলে এ সব সংস্থায় কর্মরত কর্মকর্তাদের মাঝে একটি আত্মশ্লাঘা জন্ম নেয় যা অন্য কর্মকর্তদের অস্বস্তির কারণ হতে পারে। প্রতিবছর এবং সমগ্র কর্মজীবনে একজন কর্মকর্তার জন্য এরূপ আর্থিক প্রণোদনার একটা সুনির্দিষ্ট সীমা নির্ধারণ করা প্রয়োজন।
আরও বলা হয়েছে, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আয়কর, মূসক ও শুল্ক ফাঁকি রোধের জন্য সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেল (সিআইসি) কাজ করছে। এ সেল মূলত গোপন তথ্যের ভিত্তিতে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এদের কার্যক্রমের স্বচ্ছতা ও কার্যকারিতা আনা প্রয়োজন। একটি নির্দিষ্ট মাত্রার কর ফাঁকির ক্ষেত্রে এ সংস্থা উদ্যোগী হয়ে কাজ করবে সেটি নির্ধারণ করা জরুরি। অন্যথায় ছোট ছোট কর ফাঁকির বিষয় যা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) মাঠ পর্যায়ের অফিসসমূহ নিরোধ করতে সমর্থনে সকল কর ফাঁকির বিষয়ে সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেলের (সিআইসি) সম্পৃক্ত না হওয়ায় শ্রেয়।
আরও বলা হয়েছে, কর ফাঁকির বিষয়ে তথ্য পাওয়ার পর থেকে প্রাপ্য রাজস্ব আদায় ও মামলা নিষ্পন্নে অনেক ক্ষেত্রে দীর্ঘসূত্রিতা লক্ষ করা যায়। তাই কর ফাঁকির বিষয়ে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম দ্রুত সম্পন্ন করার জন্য নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করা প্রয়োজন। অর্থাৎ কোনো একটি কর ফাঁকির বিষয়ে অনুসন্ধান শুরুর পর এক বছরের মধ্যে (ছয় মাসও হতে পরে) রিপোর্ট প্রদান ও করদায় নির্ধারণের সময় সীমা নির্দিষ্ট করা প্রয়োজন। এর ফলে এই সংস্থার কাজে দায়বদ্ধতা ও গতিশীলতা বৃদ্ধি পাবে এবং কর ফাঁকিবাজদের মধ্যে ভীতি সৃষ্টি করতে সক্ষম হবে।
রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো দুদকের প্রতিবদেন আরও বলা হয়েছে, পৃথিবীর খুব কম দেশ আছে যেখানে শুল্ক বিভাগ ভ্যাট আদায় করে। প্রকৃত পক্ষে ভ্যাট ও আয়কর একে অপরের পরিপূরক। ভ্যাটের মাধ্যমে ব্যবসার পরিধি বিক্রয়, আয় জানা যায়। যা প্রকৃত আয়কর নির্ধারণের জন্য একান্ত প্রয়োজন। এ কারণে আয়কর ও ভ্যাটকে একই প্রশাসনিক কাঠামোর আওতায় আনা প্রয়োজন। পৃথিবীর অধিকাংশ দেশেই প্রত্যক্ষ কর প্রশাসনই ভ্যাট ও আয়কর আদায় করে থাকে। শুল্ক বিভাগের কাজের প্রকৃতির সঙ্গে ভ্যাটের আদৌ কোনো সম্পর্ক না থাকা সত্ত্বেও আমাদের দেশে শুল্ক বিভাগ ভ্যাট আদায় করে থাকে। আর এতে প্রকৃত আয়কর ও ভ্যাট আদায় করা সম্ভব হচ্ছে না।
অপরদিকে আরও বলা হয়েছে, কর ফাঁকি, বিদেশে অর্থপাচার, সন্ত্রাসী কার্যক্রমে অর্থ পাচার ও মাদক পাচার রোধে দুর্নীতি দমন কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বিএফআইইউ, সিআইডি ও জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থার ঊর্ধ্বতনদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা যেতে পারে। আর এটি হলে দ্রুততার সঙ্গে যে কোনো প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব।
এ বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘বর্তমানে প্রণোদনার বিষয়টি চলছে প্রশাসনিক সিদ্ধান্তে। আমরা এটি একটি আইনি কাঠামোর মধ্যে আনতে সুপারিশ করেছি। আমরা চাই সবকিছু যেন আইনি কাঠামোর মধ্যে চলে। আর সেটি করতে আমরা প্রস্তাবনা দিয়েছি।’
সারাবাংলা/এসজে/একে