Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ইয়াবা দিয়ে ব্যবসায়ীকে ফাঁসানোর চেষ্টা সিসি ক্যামেরায় ‘ভণ্ডুল’

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২১ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ১৪:০২

চট্টগ্রাম ব্যুরো: ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে গ্রাহকের বেশে ঢুকে সোফার নিচে ইয়াবা ও কার্তুজ রেখে এক ব্যবসায়ীকে ফাঁসাতে গিয়ে গ্রেফতার হয়েছেন পাঁচজন। তবে মূল পরিকল্পনাকারীর সন্ধান এখনো পায়নি অভিযান পরিচালনাকারী নগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। ওই ব্যবসায়ীরা ধারণা, অংশীদার ব্যবসায় বিরোধের জেরে তাকে ফাঁসানোর চেষ্টা হয়েছিল।

শনিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) রাতে নগরীর খুলশী থানার জাকির হোসেন সড়কে ‘হেয়ার এন্ড ফেয়ার’ নামে ওই ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে প্রথমে দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আরও তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন নগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) শাহ মো. আব্দুর রউফ।

গ্রেফতার পাঁচজন হলেন- ইফতেখার করিম চৌধুরী (৪৮), মো. সোহেল (২৬), মো. ফয়সাল (২০), নজরুল ইসলাম (৪২) এবং জামাল হোসেন (৪১)। এদের মধ্যে ফয়সালের বাসা নগরীর হালিশহর বি-ব্লকে। বাকিদের বাসা নগরীর লালখান বাজারে।

ঘটনার শিকার মো. মান্নান শেখ নগরীর জাকির হোসেন সড়কে ওমরগণি এমইএস কলেজের সামনে ‘টাক মাথায় চুল গজানোর’ চিকিৎসা দেওয়া প্রতিষ্ঠান হেয়ার এন্ড ফেয়ারের মালিক। তার বাড়ি গোপালগঞ্জে। থাকেন নগরীর খুলশী এলাকায়।

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে নগর গোয়েন্দা পুলিশের এডিসি শাহ মো. আব্দুর রউফ সারাবাংলাকে জানান, শনিবার সন্ধ্যার পর সোর্সের কাছ থেকে তারা জানতে পারেন, হেয়ার এন্ড ফেয়ারে ইয়াবা ও কার্তুজ রক্ষিত আছে। খবর পেয়েই অভিযানে নামে নগর গোয়েন্দা পুলিশের বিশেষ টিম। সেখানে গিয়ে সোর্সের দেখানো মতে, গ্রাহকের বসার সোফার নিচ থেকে ২০০ পিস ইয়াবা ও চার রাউন্ড কার্তুজ উদ্ধার করে। কিন্তু সোফার নিচে ইয়াবা ও কার্তুজ দেখে তাদের মধ্যে সন্দেহ হয়।

এছাড়া ডিবি’র টিম পৌঁছার আগেই সেখানে পৌঁছান কথিত অনলাইন পত্রিকার চার সাংবাদিকও। ঘটনাস্থলে থাকা ফয়সালের আচরণও সন্দেহজনক মনে হয়। টিমের সদস্যদের কাছ থেকে এসব তথ্য পেয়ে ডিবি’র উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে যান এবং ওই কক্ষে থাকা সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পরীক্ষা করেন।

‘সিসি ক্যামেরায় ধারণ হওয়া ফুটেজে দেখা যায়, ঘটনার দিন বিকেলে দু’জন লোক দোকানে প্রবেশ করে। একজনের মাথায় চুল নেই, আরেকজনের চুল আছে। চুলবিহীন ব্যক্তি ম্যানেজারের সঙ্গে গিয়ে চিকিৎসা সংক্রান্ত কথা বলতে থাকেন। এর ফাঁকে ফয়সাল বসে পড়েন সোফায়। তাদের কথাবার্তার একফাঁকে ফয়সাল সোফার নিচে ইয়াবা ও কার্তুজ রেখে দেয়। ফুটেজ দেখে সঙ্গে সঙ্গেই আমরা ফয়সালকে আটক করি। ফয়সাল জানায়, ৫০০ টাকার বিনিময়ে সোহেল তাকে ইয়াবাগুলো সেখানে রাখতে দিয়েছে। তখন আমরা টাইগারপাস থেকে সোহেলকে আটক করি। পরে সোহেলের দেওয়া তথ্যমতে রাতভর অভিযানে বাকিদের একের পর এক করে গ্রেফতার করি।’ — বলেন শাহ মো. আব্দুর রউফ।

জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে অভিযানে অংশ নেওয়া নগর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক (দক্ষিণ) মোহাম্মদ ওসমান গণি সারাবাংলাকে জানান, সোহেলকে ইয়াবাগুলো দিয়েছে নজরুল, যিনি পেশায় গাড়িচালক। নজরুল জানান, তাকে ইয়াবাগুলো দিয়েছেন ইফতেখার করিম চৌধুরী, যিনি একজন সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান। আর জামাল পেশায় একজন অটোরিকশা চালক। জামাল তার অটোরিকশায় করে সোহেল ও মাথায় চুলবিহীন ওই ব্যক্তিকে দোকানটিতে নিয়ে গিয়েছিলেন এবং এই পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতেন।

গোয়েন্দা কর্মকর্তা শাহ মো. আব্দুর রউফ বলেন, ‘ইফতেখার করিম চৌধুরী এবং নজরুল খুবই ঘনিষ্ঠজন। নজরুলের তথ্য অনুযায়ী, ইফতেখার তাকে ইয়াবা ও কার্তুজ দিয়ে ব্যবসায়ী মান্নান শেখকে ফাঁসানোর দায়িত্ব দেয়। তখন নজরুল অটোরিকশা চালক জামালের মাধ্যমে ফয়সাল ও সোহেলকে এ কাজের জন্য ভাড়া করে। তবে ইফতেখার করিম চৌধুরী কেন মান্নান শেখকে ফাঁসাতে চেয়েছেন, এর পেছনে কারা আছেন সেটা আমরা এখনও জানতে পারিনি। ইফতেখার কোনোভাবেই মুখ খুলছেন না। মান্নানও বলেছেন, ইফতেখারকে তিনি চেনেন না। এ বিষয়ে বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আমরা আদালতে তাদের ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেছি।’

ব্যবসায়ী মো. মান্নান শেখ সারাবাংলাকে বলেন, ‘খুলশীর প্রতিষ্ঠানটি আমার নিজের। ঢাকার বনানীতেও একটি প্রতিষ্ঠান ছিল, আমার সঙ্গে পার্টনার ছিলেন দু’জন। তারা পরে আমাকে বের করে দেন। তাদের সঙ্গে আমার জমির ব্যবসাও ছিল। আমার দু’জন স্টাফকেও তারা নিয়ে যায়। এ নিয়ে তাদের সঙ্গে আমার বিরোধ হয়। যারা গ্রেফতার হয়েছে তাদের কাউকে আমি চিনি না। আমার ধারণা, ব্যবসায়িক বিরোধের কারণে আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা হয়েছে।’

সারাবাংলা/আরডি/একেএম

ইয়াবা কার্তুজ গ্রেফতার ব্যবসায়ীকে ফাঁসানোর চেষ্টা


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর