শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদনে নির্দেশনা পালন কেন্দ্রীয় আ.লীগের
২১ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ২২:৪৫
ঢাকা: করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে একুশের প্রথম প্রহরে নিয়ম মেনে মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের যথাযথ নির্দেশনা প্রতিপালনের লক্ষ্যে একুশের প্রথম প্রহরে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার নির্দেশে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট একটি প্রতিনিধি দল স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিধি মেনে শহীদ বেদীতে শ্রদ্ধা নিবেদন করে দলটির নেতারা।
রোববার (২১ ফেব্রুয়ারি) মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করা হয়।
এবার করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে বিশেষ পরিস্থিতিতে দিবসটি পালন করে দেশবাসী। তাই জনগণের স্বাস্থ্য সুরক্ষার দিকটি মাথায় রেখে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের বেদীতে শ্রদ্ধা নিবেদনের ক্ষেত্রে বিশেষ কড়াকড়ি আরোপ করার সিদ্ধান্ত নেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অমর একুশে উদযাপন কমিটি। করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় এবার সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রতিটি সংগঠন বা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ পাঁচজন প্রতিনিধি ও ব্যক্তিপর্যায়ে একসঙ্গে সর্বোচ্চ দুজন শহীদ মিনারে ফুল দিতে পারার নির্দেশনা জারি করে। পরবর্তীতে বৃহস্পতিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) বিকেল সাড়ে ৩টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নিরাপত্তা ব্যবস্থা পরিদর্শন শেষে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)’র কমিশনার মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম বলেন, বিশেষ পরিস্থিতিতে আমরা এবার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করতে যাচ্ছি। চারদিকে করোনা পরিস্থিতি, ভ্যাকসিনেশন চলছে, তাতে ভীতি রয়েছে। একজন ব্যক্তিও মাস্ক ছাড়া শহিদ মিনারে প্রবেশ করতে পারবেন না। দল পর্যায়ে সর্বোচ্চ পাঁচ জন এবং ব্যক্তি পর্যায়ে একসঙ্গে দুজনের বেশি প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও শহীদ মিনার এলাকায় যান চলাচল বরাবরের মতো নিয়ন্ত্রণ করা হবে। সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে।
মহান একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন উপলক্ষে ভাষা শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে একুশের প্রথম প্রহরেই মানুষ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানাতে ছুটে আসেন।
তবে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতির কারণে এই বছর আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কিছু বিধি নিষেধ থাকায় কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে মানুষের উপস্থিতি কিছুটা কম ছিল। রাত ১২টা ১ মিনিটে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে তাদের সামরিক সচিবরা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
প্রথমে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের পক্ষে তার সামরিক সচিব মেজর জেনারেল এস এম সালাহউদ্দিন ইসলাম এবং এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে তার সামরিক সচিব মেজর জেনারেল নকীব আহমেদ চৌধুরী কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এরপর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট একটি প্রতিনিধি দলের সভাপতি শেখ হাসিনার পক্ষে দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের শহীদ মিনারের বেদীতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
এসময় আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলির সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী ও লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল উপস্থিত ছিলেন। শহীদ বেদীতে শ্রদ্ধা নিবেদনের পূর্বে আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া ও উপদফতর সম্পাদক সায়েম খান উপস্থিত থাকলেও তারা দুজনে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট প্রতিনিধি দলের শ্রদ্ধা নিবেদনের সময় অনুপস্থিত ছিলেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক এবং প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া সারাবাংলাকে বলেন, প্রথম প্রহরে আমরা আমাদের নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদনের ক্ষেত্রে যথাযথ নিয়ম প্রতিপালন করার দিকে নজর দিয়েছি। আমাদের নেত্রীর নির্দেশে আমাদের কেন্দ্রীয় সংসদের পাঁচ জন নেতার একটি প্রতিনিধি দল স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিধি মেনে শ্রদ্ধা নিবেদনে অংশ নেন। আমরা প্রভাত ফেরিতে সামাজিক দূরত্ব পুরোপুরি মেইনটেইন করতে না পারলেও যথেষ্ট সতর্ক ও সচেতন ছিলাম।
সরেজমিনে দেখা যায়, প্রভাতফেরির সময়ও সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা প্রতিপালন করার দিকে নজর দেন নেতারা। প্রভাতফেরিতে দল হিসাবে পাঁচ জনের নির্দেশনা প্রতিপালন করা পুরোপুরি সম্ভব না হলেও সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা মেনে শহীদ বেদীতে শ্রদ্ধা নিবেদন করার দিকে নজর রাখে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা। প্রভাতফেরিতে অংশ নেওয়ার আগে কেন্দ্রীয় নেতাদের একটি প্রতিনিধি দল আজিমপুর কবরস্থানে শহীদদের কবরে গিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করে। এরপর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণে অংশ নেয়।
প্রভাতফেরি সহকারে শহিদ মিনারে পৌঁছুনোর আগে দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের একটি প্রতিনিধি দল ভাষা শহিদ আবুল বরকত, আব্দুল জব্বার ও শফিউরের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য আজিমপুর কবরস্থানে যান। সেখানে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে শহীদ মিনার অভিমুখে পদযাত্রা করেন তারা।
এসময় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য আব্দুল মতিন খসরু, লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান, আবদুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক আবদুস সবুর, সংস্কৃতি সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, দপ্তর সম্পাদক ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, উপদপ্তর সম্পাদক সায়েম খান, কেন্দ্রীয় সদস্য আনোয়ার হোসেন, শাহাবুদ্দিন ফরাজীসহ অন্যান্যরা।
দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন।
রোববার ছিল সরকারি ছুটির দিন। ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারিতে বাংলা ভাষার দাবিতে রাস্তার নেমে আসে ছাত্র-জনতা। জারি করা হয় ১৪৪ ধারা, ভেঙে ফেলা হয় শোষকের শৃঙ্খল। রক্তে ভেসে যায় রাজপথ। গুলিতে বিদীর্ণ হয় বুক। শহীদ হন রফিক, শফিক, সালাম, বরকত, জব্বারসহ নাম না জানা আরও অনেকে। ভাষার জন্য জীবন দিয়ে ইতিহাস গড়েন তারা। বাংলা পায় রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে একাত্তরে জন্ম নেয় স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ। মাতৃভাষার জন্য প্রাণ উৎসর্গের এই দিনটিকে জাতিসংঘ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবে স্বীকৃতি দেয় ১৯৯৯ সালে। একুশের চেতনার প্রতীক ‘শহীদ মিনার’ সারাবিশ্বে বহুভাষিক চেতনার স্মারক।
এবার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে প্রতিবারের মতো এবার বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করার সিদ্ধান্ত নেয় আওয়ামী লীগ। সোমবার বিকেল ৪টায় বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক ভার্চুয়ালি আলোচনা সভা হবে। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের অংশ নেবেন।
সারাবাংলা/এনআর/এমআই