বিজিএমইএ নির্বাচনে ত্রিমুখী লড়াইয়ের আভাস
২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ১০:০৪
ঢাকা: তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র আসন্ন নির্বাচন জমে উঠতে শুরু করেছে। প্রার্থী চূড়ান্ত করতে শেষ মুহূর্তের ব্যস্ত সময় পার করছেন তিন প্যানেল লিডার। নির্বাচনকে সামনে রেখে এরইমধ্যে একে অপরকে দোষারোপ করে তীর্যক মন্তব্যও করেছেন বিজিএমইএ নেতারা। একপক্ষ আরেক পক্ষের সমালোচনায় মুখর। স্বচ্ছ নির্বাচন নিয়েও শঙ্কা প্রকাশ করে আসছে একটি অংশ। সবমিলিয়ে এবারের নির্বাচনে ত্রিমুখী লড়াইয়ের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে।
আগামী ৪ এপ্রিল বিজিএমইএ’র ২০২১-২৩ মেয়াদের পরিচালনা পর্ষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এতে মনোনয়ন দাখিলের শেষ তারিখ ২৫ ফেব্রুয়ারি, প্রত্যাহারের শেষ সময় ৩ মার্চ। মনোনয়ন যাচাই-বাছাই শেষ হবে ৪ মার্চ। গত ১২ জানুয়ারি ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, ৪ এপ্রিল রাজধানীর হোটেল র্যাডিসন ব্লু ওয়াটার গার্ডেনে সকাল ১০টা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এরইমধ্যে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। বিজিএমইএ নির্বাচনে এবার ভোটার সংখ্যা ২ হাজার ৩১৪। এর মধ্যে ঢাকার ভোটার ১৮৫৩ জন ও চট্টগ্রামের ৪৬১ জন।
এবারের নির্বাচনে তিনটি প্যানেল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। বিজিএমইএর বর্তমান সভাপতি রুবানা হকের অনুসারীদের প্যানেল ‘ফোরাম’, ফারুক হাসানের নেতৃত্বাধীন সম্মিলিত পরিষদ ও ডিজাইন অ্যান্ড সোর্স কারখানার মালিক জাহাঙ্গীর আলমের নেতৃত্বাধীন স্বাধীনতা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। ফলে বিজিএমইএর নির্বাচনে এবার ত্রিমুখী লড়াই হবে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বিজিএমইএ’র নির্বাচনে ফোরামের নেতৃত্ব থাকা এবিএম শামসুদ্দিন সারাবাংলাকে বলেন, নির্বাচন নিয়ে আমরা এখনও প্রচার প্রচারণায় যাচ্ছি না। প্রার্থী ঠিক করা নিয়ে ব্যস্ত আছি। সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি যারা প্রফেশনাল লোক তাদের সিলেক্ট করতে।
তিনি বলেন, তফসিল অনুযায়ী রেডিসন হোটেলে নির্বাচন হবে, এটি নিয়ে আমাদের আপত্তি নেই। আমরা স্বচ্ছতায় বিশ্বাসী। নির্বাচন স্বচ্ছ হবে বলেই বিশ্বাস করি। নির্বাচন যাতে স্বচ্ছ হয় সে ধরনের উপকরণ ব্যবহার করা দরকার। কিন্তু ডিজিটাল আইডি নিয়েও অনেকে আপত্তি করে। শেষ পর্যন্ত হয়তো আগের মতোই গতানুগতিক প্রক্রিয়ায় নির্বাচন হবে। যেহেতু একাধিক প্যানেল রয়েছে, একাধিক প্রার্থী থাকবে, তাই এবারের বিজিএমইএ নির্বাচন হবে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ।
সম্মিলিত পরিষদের নেতৃত্বে থাকা ফারুক হাসান সারাবাংলাকে বলেন, নির্বাচন নিয়ে প্রস্তুতি চলছে। চট্টগ্রামে আমাদের নয় জন প্রার্থী এরইমধ্যে ঠিক হয়ে গেছে। ঢাকার প্রার্থীও শিগগিরই ঠিক হয়ে যাবে।’ তিনি বলেন, ‘এবারের নির্বাচন সম্পূর্ণভাবে স্বচ্ছ হবে, আগেও স্বচ্ছ হয়েছে, এবার নির্বাচন আরও ভালো হবে। নির্বাচন কমিশনের প্রতি আমাদের পরিপূর্ণ আস্থা আছে। উনারা স্বচ্ছভাবেই বিজিএমইএ নির্বাচন সম্পন্ন করবেন।’
স্বাধীনতা পরিষদের নেতৃত্বে থাকা জাহাঙ্গীর আলম সারাবাংলাকে বলেন, আমরা নির্বাচন করবো। মনোনয়ন ফরম সাবমিট করার পর বলা যাবে কী হচ্ছে। গত নির্বাচনে ভোট কেটে নিয়েছে। এবার তা সম্ভব হবে না। এবার নির্বাচন জমবে। নির্বাচন করেই আসতে হবে। স্বচ্ছতার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, কেউ কেউ বিজিএমইএর নতুন ভবনে নির্বাচন চাচ্ছে। আমরা স্বাধীনতা পরিষদের পক্ষ থেকে রেডিসনে নির্বাচন চাচ্ছি। নির্বাচন কমিশনের তফসিলেও রেডিসনের কথা উল্লেখ আছে।
এর আগে, ২০১৩ সালে সাধারণ সদস্যদের সরাসরি ভোটে বিজিএমইএর পরিচালনা পর্ষদ নির্বাচিত হয়। পরের বার সম্মিলিত পরিষদ ও ফোরাম দুই মেয়াদের জন্য সমঝোতা করে। সেই সমঝোতার প্রথম দফায় অর্থাৎ ২০১৫ সালের ২২ সেপ্টেম্বরে সম্মিলিত পরিষদের সিদ্দিকুর রহমানের নেতৃত্বে কমিটি হয়। সেই কমিটি নানা অজুহাত দেখিয়ে ৪৩ মাস দায়িত্ব পালন করে। পরের মেয়াদে সমঝোতার কমিটি করার উদ্যোগ নেয় দুই জোট। তবে বাগড়া দেয় স্বাধীনতা পরিষদ। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ২০১৮ সালের শুরুতে সংগঠনটি আত্মপ্রকাশ করে। সে সময় নির্বাচন থেকে তাদের সরিয়ে দিতে নানামুখী চেষ্টাও করা হয়। তবে শেষ পর্যন্ত স্বাধীনতা পরিষদ খণ্ডিত প্যানেলে প্রার্থী দেয়। সে কারণে ঢাকায় নিয়ম রক্ষার ভোট হয়েছিল। তবে স্বাধীনতা পরিষদের কেউ সেই নির্বাচনে জয়ী হতে পারেননি। এবারের নির্বাচনে এই তিন প্যানেলই অংশ নিচ্ছে। এবার সম্মিলিত পরিষদ ও ফোরামের সমঝোতা হয়নি।
এদিকে, প্যানেল লিডার পরিচিতি অনুষ্ঠানেই ফোরাম ও সম্মিলিত পরিষদের নেতারা একে অপরকে দোষারোপ করে নানা মন্তব্য করেছেন। কোনো অংশের নেতারা বলছেন, বিজিএমএইকে সবাই উপরে ওঠার সিঁড়ি হিসাবে ব্যবহার করছেন। কেউবা বর্তমান কমিটির সমালোচনায় মুখর। করোনার সময়ে বর্তমান কমিটির নানা সমালোচনার কথাও উঠে আসছে কারো কারো বক্তব্যে। আর অন্য একটি অংশের সমালোচনা নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ নিয়ে।
সারাবাংলা/ইএইচটি/এএম