চলমান পরীক্ষা স্থগিত, অনিশ্চয়তায় রাবি শিক্ষার্থীরা
২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ১০:৩৬
অনার্স চতুর্থ বর্ষ ও মাস্টার্সসহ সব বর্ষের চলমান ফাইনাল পরীক্ষা স্থগিত হওয়ায় চরম বিপাকে পড়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) হাজারো শিক্ষার্থী। সোমবার (২২ ফেব্রুয়ারি) শিক্ষামন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনের পর চলমান পরীক্ষা স্থগিতের সিদ্ধান্ত জানায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
করোনাকালীন সময়ে সেশনজট নিরসনের লক্ষ্যে গত বছরের গত ৯ জুলাই থেকে অনলাইনে ক্লাস নেওয়া শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। দীর্ঘ ১০ মাস পর চলতি বছরের ২ জানুয়ারি থেকে প্রথম দফায় অনার্স চূড়ান্ত বর্ষ ও মাস্টার্সের শিক্ষার্থীদের ক্লাসরুমে সশরীরে পরীক্ষা নেওয়া শুরু করে কর্তৃপক্ষ। যা শেষ পর্যায়ে রয়েছে।
তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ১৭ মে হল খোলা এবং ২৪ মে ক্যাম্পাস খোলা হবে। একই সঙ্গে চলমান পরীক্ষাগুলো বন্ধের নির্দেশনা দেওয়া হয়। এই নির্দেশনা মেনে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ চলমান সকল পরীক্ষা বন্ধের ঘোষণা দেয়।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র বলছে, করোনা সংকটে ছুটি ঘোষণার আগে বিভিন্ন বিভাগে পরীক্ষার কাজ পুরোদমে চলমান ছিল। এর মধ্যে বেশিরভাগ বিভাগ সম্পূর্ণ পরীক্ষা শেষ করলেও কিছু বিভাগ পরীক্ষার মাঝামাঝিতে এসে আটকে যায়। এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আটকে থাকা পরিক্ষাগুলোর নেওয়ার অনুমতি দেন সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোকে। এরপর গত ২০ ফেব্রুয়ারি একাডেমিক কাউন্সিলে সভায় ২০১৯ সালের সব বর্ষের আটকে থাকা পরীক্ষাগুলো নেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যাল ২৩টি বিভাগে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর বর্ষের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা চলমান ছিল। বিভাগগুলো হলো- রসায়ন বিভাগ, সঙ্গীত বিভাগ, নাট্যকলা, ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা, উদ্ভিদ বিজ্ঞান, ফাইন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং, ক্রপ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং, নৃবিজ্ঞান, হিসাব বিজ্ঞান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা, জেনেটিকস ইঞ্জিনিয়ারিং, পপুলেশন সায়েন্স অ্যান্ড হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট, ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্স, ব্যাংকিং ইনস্যুরেন্স, ফিশারিজ, পদার্থ বিজ্ঞান, ম্যানেজমেন্ট স্ট্যাডিস, সমাজ বিজ্ঞান, মৃৎশিল্প ও ভাস্কর্য, গণিত, চিত্রকলা, প্রাচ্যকলা ও ছাপচিত্র এবং গ্রাফিক ডিজাইন, কারু শিল্প ও শিল্প কলার ইতিহাস বিভাগেও পরিক্ষা চলমান রয়েছে বলে জানা গেছে। এর মধ্যে আইন এবং ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি বিভাগকে বিশেষ বিবেচনায় দ্বিতীয় ও তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীদের পরিক্ষা নেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আবাসিক হল বন্ধ থাকায় বাধ্য হয়ে শিক্ষার্থীদের শহরের বিভিন্ন মেস, হোস্টেলে ভাড়ায় উঠতে হয়েছে। কিন্তু এ ক্ষেত্রেও শিক্ষার্থীরা নানা ভোগান্তিতে পড়ার কথা বিভিন্ন সময় জানিয়ে আসছে। মেসে গাদাগাদি করে অবস্থান, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়সহ মেয়েদের হোস্টেলগুলোতে নিরাপত্তাহীনতা, চুরি-ছিনতাইয়ের ঘটনাও ঘটতে থাকে। এতে তারা হল খুলে পরীক্ষা নেওয়ার দাবি জানায়।
এদিকে সরকারের পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ রাখার ঘোষণা আসার পরপরই চলমান অনার্স চতুর্থ বর্ষ এবং মাস্টার্সের সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা স্থগিত ঘোষণা করায় ভোগান্তিতে পড়ে শিক্ষার্থীরা। তারা অভিযোগ করে বলেন, হল বন্ধ থাকায় পরীক্ষা দিতে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে তাদের। আবার হঠাৎ করে পরীক্ষা স্থগিত করায় আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি মানসিক সমস্যায়ও পড়তে হচ্ছে। চলমান পরীক্ষার মধ্যে বাকি থাকা দুএকটি পরীক্ষার জন্য তিন থেকে চার মাস অপেক্ষা করা অযৌক্তিক বলে দাবি করেন শিক্ষার্থীরা।
হিসাববিজ্ঞান ও তথ্য ব্যবস্থা বিভাগের ২০১৪-১৫ সেশনের শিক্ষার্থী আরেফিন মেহেদী হাসান বলেন, ‘প্রায় ১৫ মাসের সেশনজট আছি। পরীক্ষা হবে বিধায় আমরা সেইভাবে প্রস্তুতি নিয়ে রাজশাহীতে এসে মেস ভাড়া করে থেকেছি, কিন্তু পরীক্ষা স্থগিতাদেশ এর জন্য আমরা আর্থিক ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছি একইসঙ্গে পরীক্ষা শেষ না হওয়ার কারণে চাকরির পরীক্ষায় মনোনিবেশ করা সম্ভব হচ্ছে না। এখন চাকরির পরীক্ষার প্রস্তুতি নেব নাকি একাডেমিক পড়াশুনা করব, তা নিয়ে দোদুল্যমান অবস্থায় আছি।’
পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ১৪-১৫ সেশনের শিক্ষার্থী মো. আহসান কবির বলেন, ‘করোনার আগে আমাদের পরীক্ষার জন্য যে ডেট দিয়েছিল, তার পাঁচ দিন আগে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়ে যায়। আসলে বয়স তো বেড়ে যাচ্ছে, মাস্টার্সের পরীক্ষার জন্য চাকরির প্রস্তুতিতে মনযোগ দিতে পারি না। ভেবেছিলাম পরীক্ষা শেষ হলে নতুন করে আবার চাকরির পড়ালেখাতে মনোনিবেশ করতে পারবো। পরিকল্পনাগুলো আবার এলোমেলো হয়ে গেল, সঙ্গে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।’
ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইনজিনিয়ারিং ২০১৬-১৭ সেশনের শিক্ষার্থী জোবায়ের মাহমুদ বলেন, ‘আমরা পরীক্ষা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত ছিলাম। পরীক্ষা বন্ধ হোক এটা কখনো চাইনি। হঠাৎ করে পরীক্ষা স্থগিতের ঘোষণায় সেশন অনুযায়ী আমাদের আরও দেড় বছরের বেশি সেশন জট তৈরি হবে। ২০২০ সালেরর ডিসেম্বরে আমাদের গ্রাজুয়েশন শেষ হওয়ার কথা, এখন ২১ সাল অথচ তৃতীয় বর্ষ শেষ হলো না। এটা খুবই হতাশাজনক।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও ছাত্র উপদেষ্টা (অতিরিক্ত দায়িত্ব প্রাপ্ত) অধ্যাপক লুৎফর রহমান বলেন, ‘শিক্ষামন্ত্রীর ঘোষণার পর আমরা সরকারের সিদ্ধান্ত অনুসারে চলমান পরীক্ষাগুলো স্থগিত করেছি। যেহেতু অনেকের ফাইনাল পরীক্ষা শেষের দিকে রয়েছে তাই চলমান পরীক্ষাগুলো চালু করার বিষয়ে আমি ব্যক্তিগতভাবে উপাচার্য স্যারকে অনুরোধ করবো।’
সারাবাংলা/এমআই