স্কুল-কলেজ দ্রুত খুলতে শিক্ষকদের ভ্যাকসিন নিতে নির্দেশনা
২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ২১:৫৬
ঢাকা: করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণ পরিস্থিতির কারণে প্রায় একবছর হলো বন্ধ থাকা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দ্রুততম সময়ের মধ্যে খুলে দিতে চান বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ জন্য প্রাথমিক থেকে শুরু করে সব পর্যায়ের স্কুল-কলেজের শিক্ষকদের ভ্যাকসিন নিতে নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি। আর সবাইকে যেন করোনাভাইরাস সংক্রমণ থেকে সুরক্ষা দেওয়া যায়, সেটি নিশ্চিত করতে এরই মধ্যে আরও তিন কোটি ডোজ ভ্যাকসিন কিনতে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশও দিয়েছেন তিনি।
শনিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। এলডিসি থেকে উত্তরণে জাতিসংঘের চূড়ান্ত সুপারিশ পাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে এই সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করা হয়। প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে সংবাদ সম্মেলনে ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে যুক্ত হন।
সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনাভাইরাস মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে এটি মোকাবিলার জন্য আমরা পদক্ষেপ নিয়েছি। যখন এই ভাইরাসের ভ্যাকসিন উদ্ভাবনের জন্য গবেষণা চলছে, আমরা তখনই অগ্রিম টাকা দিয়ে বুকিং করে ফেলেছিলাম। আমাদের লক্ষ্য ছিল— যেখানেই পাওয়া যাক, আমরা আগে ভ্যাকসিন আনব, দেশের মানুষকে সুরক্ষা দেবো। এটা আমাদের নীতিগত সিদ্ধান্ত।
আরও পড়ুন- স্কুল-কলেজ খুলছে ৩০ মার্চ
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার সিদ্ধান্তের বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আজ আমরা সিদ্ধান্তি নিয়েছি এবং আমি নির্দেশ দিয়েছি— প্রাথমিক পর্যায় থেকে শুরু করে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের আমাদের স্কুল-কলেজ যেগুলো আছে, সেসব স্কুল-কলেজের সব শিক্ষক ও কর্মচারীদের ভ্যাকসিন দিতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা হোস্টেলে থাকে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) নির্দেশনা অনুযায়ী যে বয়স পর্যন্ত ভ্যাকসিন দেওয়া যাবে না, তার চেয়ে বেশি বয়সী সবাইকে ভ্যাকসিন দিতে হবে। এবং আমরা সবাইকেই ভ্যাকসিন দেবো।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কারণ আমরা আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো খুব দ্রুত খুলতে চাই। পড়ালেখার পরিবেশটা ফিরিয়ে আনতে চাই। আমরা কিন্তু গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত প্রচার চালাচ্ছি, যেন সবাই এই ভ্যাকসিন নিতে আসে।
এর মধ্যে অবশ্য আন্তঃমন্ত্রণালয় এক বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, আগামী ৩০ মার্চ দেশের সব স্কুল-কলেজ খুলে দেওয়া হবে। তবে এ পর্যায়ে প্রাক-প্রাথমিক পর্যায়ের ক্লাস বন্ধ থাকবে।
প্রধানমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে আরও ভ্যাকসিন কিনতে সরকারের উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানিয়ে বলেন, এরই মধ্যে আমি নির্দেশ দিয়েছি, আরও তিন কোটি ডোজ কেনার জন্য আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি, যেন আমাদের প্রথম ডোজ দেওয়ার পাশাপাশি দ্বিতীয় ডোজও দিতে শুরু করব। (তার আগেই যেন পর্যাপ্ত ভ্যাকসিন) আমাদের হাতে এসে যায়। আর একজন মানুষও যেন ভ্যাকসিন থেকে বাদ না যায়, তার ব্যবস্থা আমরা নিচ্ছি।
এ ক্ষেত্রে দেশেও ভ্যাকসিন উৎপাদন করা যায় কি না, সেটি নিয়েও ভাবছেন বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, কোনো দেশ যদি ভ্যাকসিন উৎপাদন করতে না পারে, আমাদের দেশে আমরা উৎপাদন করতে পারব। আমি আমাদের বিভিন্ন ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানিগুলোকে বলেছি। কারা কারা এটা করতে পারবে, তার জন্য প্রস্তুত থাকতে বলেছি। এখানে কিট আনার ব্যবস্থা করা যায় কি না, সেটাও আমরা এখন দেখছি।
‘মানুষকে সুরক্ষা দেওয়া, এটা তো আমাদের কর্তব্য। আমি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শুধু না, আমি জাতির পিতার কন্যা, এটাও বড় কথা। সে কারণেই মনে করি এটা আমার কর্তব্য এবং সেটিই করে যাচ্ছি,’— বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
গণভবন প্রান্তে সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর পাশে ছিলেন বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানা। শুরুতে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণে জাতিসংঘের চূড়ান্ত সুপারিশপত্র প্রধানমন্ত্রীর কাছে হস্তান্তর করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
গণভবন প্রান্তে আরও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, বাণিজ্য মন্ত্রী টিপু মুনশি, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। গণভবন প্রান্তে সভা পরিচালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর মূখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় প্রান্তে সরকারের মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্যসহ সহযোগী সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় প্রান্তে অনুষ্ঠান পরিচালনা শুরু করেন প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম। প্রধানমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে সূচনা বক্তব্য রাখেন। এরপর উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মীদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন।
সারাবাংলা/এনআর/টিআর
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলন ভ্যাকসিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান