‘সামনে চলার প্রস্তুতি আছে, কেউ ঠেকাতে পারবে না’
২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ২২:৩৩
ঢাকা: কারও মুখাপেক্ষী না হয়ে বিশ্ব দরবারে আত্মমর্যাদা নিয়ে চলার মতো সব ধরনের প্রস্তুতি বাংলাদেশের আছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, সামনে এগিয়ে যাওয়ার সব রকম প্রস্তুতি আমাদের আছে। আমরা কারও মুখাপেক্ষী না। আমরা নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে আত্মমর্যাদা নিয়ে চলব। বাংলাদেশ উন্নত দেশ হবে— এটা কেউ ঠেকাতে পারবে না।
শনিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে উত্তরণে জাতিসংঘের চূড়ান্ত সুপারিশ পাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে এই সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করা হয়। প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে সংবাদ সম্মেলনে ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে যুক্ত হন।
সংবাদ সম্মেলনে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণে জাতিসংঘের চূড়ান্ত সুপারিশপত্র প্রধানমন্ত্রীর কাছে হস্তান্তর করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসি (ইউএন সিডিপি) চেয়ার টেফারি টেসফাসো শুক্রবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) রাতে এই সুপারিশের সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন। নিউ ইয়র্কে সিডিপির পাঁচ দিনব্যাপী ত্রিবার্ষিক পর্যালোচনা সভা শেষে এই ঘোষণা আসে।
আরও পড়ুন-
- ‘শেখ রেহানা-ই প্রথম খবর দেয়’
- আইন নিজ গতিতে চলছে, চলবে: প্রধানমন্ত্রী
- ‘আজকের বাংলাদেশ বদলে যাওয়া বাংলাদেশ’
- ‘কারও মৃত্যুকে কেন্দ্র করে অসন্তোষ তৈরি করা কাম্য নয়’
- উন্নয়নশীল বাংলাদেশ, মুজিববর্ষে অনন্য মাইলফলকে দেশ
- ‘টার্গেট’ পূরণের পর বেঁচে গেলে ভ্যাকসিন নেবেন প্রধানমন্ত্রী
- স্কুল-কলেজ দ্রুত খুলতে শিক্ষকদের ভ্যাকসিন নিতে নির্দেশনা
- নির্বাচন করবেন কি না— ২০২৪ সালে সিদ্ধান্ত নেবেন প্রধানমন্ত্রী
- এলডিসি থেকে উত্তরণ আপামর জনসাধারণের কৃতিত্ব: প্রধানমন্ত্রী
- ‘এলডিসি থেকে উত্তরণের অর্জনকে সুসংহত ও টেকসই করতে হবে’
- ‘স্বল্পোন্নত থেকে উত্তরণের মানদণ্ডগুলো ভালোভাবে পূরণ করেছে দেশ’
সংবাদ সম্মেলনে গণমাধ্যমকর্মীদের প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যারা চায়নি, যারা জাতির পিতাকে হত্যা করেছে, যারা গ্রেনেড হামলা করে আমাকে হত্যা করার চেষ্টা করেছে, যারা এই দেশটাকে অস্ত্র চোরাকারবারি-ড্রাগ কারবারি, দুর্নীতির একটা আখড়ায় পরিণত করে নিজেদের ভাগ্য গড়তে ব্যস্ত ছিল, তারা বাংলাদেশের উন্নতিটা মানবে কিভাবে বলেন?
‘তারা তো এটা মানতে পারে না। তাদের তো চেষ্টাই থাকবে বাংলাদেশের বদনাম-দুর্নাম কিভাবে করা যায়। সেটাই তো আমি দেখতে পাচ্ছি। আমি মনে করি এটা নিয়ে চিন্তার কিছু নেই। দেশবাসীকে বলব— এটা নিয়ে চিন্তার কিছু নেই। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে এবং এগুলো মোকাবিলা করে এগিয়ে যাওয়ার মতো সেই সক্ষমতা আমাদের আছে, জনগণের আছে। কারণ এরা তো মুষ্ঠিমেয় গোষ্ঠী। এটা হলো বাস্তবতা,’— বলেন প্রধানমন্ত্রী।
সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি আছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, সামনে এগিয়ে যাওয়ার সব ধরনের প্রস্তুতি আমাদের আছে। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে কী কী করণীয়, সে ব্যাপারেও আমাদের চিন্তাভাবনা রয়েছে। সেসব নিয়েও আমরা পদক্ষেপ নিচ্ছি এবং আমরা কারও মুখাপেক্ষী না। আমরা নিজের পায়ে দাঁড়াব, আত্মমর্যাদা নিয়ে চলব। বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে চলব এবং আমাদের উন্নয়নের কাজ আমাদের নিজেদের বাজেট থেকেও আমরা করতে পারব। সে ব্যাপারেও আমাদের যথেষ্ট পরিকল্পনা রয়েছে এবং সেভাবেই চলব।
সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সবাইকে অনুরোধ করব— সবাই যার যার দায়িত্ব পালন করেন। আর সবাই আপনারা একটু স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলেন। সবাই একটু মাস্কটা পরে নিয়েন। টিকা নিলেও কিন্তু স্বাস্থ্যবিধি একটু মেনে চলুন। আমারটাও সঙ্গে আছে, কথা বলার জন্য… এখন পরে নিলাম।’ এরপর লাল-সবুজ রঙের একটি মাস্ক হাতে তুলে নিয়ে পরে নেন প্রধানমন্ত্রী।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বিষয়ক এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজ আমাদের একটি শুভ দিন। আমি অন্য কোনো কথা বলতে চাই না। কিন্তু বাংলাদেশের পলিটিক্সে আমার বয়স তো ৭৫ বছর। সেই স্কুলজীবন থেকেই তো রাস্তায় নামি। বাষট্টি সাল থেকে কিন্তু পথে পথে, মিছিলে মিছিলে যোগ দিয়েছি। কাজেই দেশের সবাইকে আমার মোটামুটি চেনা আছে। শুধু আমি এটুকু বললাম। কে কোথায় কী কারণে কী বলে, সেটাও আমার জানা আছে।
তিনি বলেন, কারও মৃত্যু কাম্য নয়। কিন্তু সেটাকে কেন্দ্র করে একটা অশান্তি সৃষ্টি করা, এটাও কিন্তু কাম্য না। বাংলাদেশে ৩ নভেম্বর জেলখানায় চার জাতীয় নেতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল। সেরকম কোনো ঘটনা তো ঘটেনি এখনো। কিন্তু যারা সেই (জেলহত্যা) হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছিল, তাদের সঙ্গেও তো অনেকে গাঁটছাড়া বেঁধেছে, আমি দেখেছি। আর কেউ অসুস্থ হলে মারা গেলে সেটা কী করার আছে?
আরেক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ডিজিটাল আছে দেখেই তো তাও একটু আসতে পারি। অন্তত একটু দেখা হলো। আর এটা যদি না হতো, তাহলে তো দেখাই হতো না। কারণ এই করোনার কারণে আমার তো বন্দি জীবন। ২০০৭ সালে বন্দি ছিলাম ছোট জেলে, এখন একটা বড় জেলে বন্দি আছি। কিন্তু এটুকু সুবিধা হয়েছে, ডিজিটাল পদ্ধতিতে সারাদেশের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছি। আর আমাদের নেতাকর্মী যে যেখানে আছে, তাদের সঙ্গেও মোবাইলে কথা বলতে পারি।
সরকারের সমালোচনাকারীদের প্রসঙ্গ নিয়ে প্রশ্ন উঠলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কেউ কেউ আছেন কিছু সমালোচনা করবে। কেউ কেউ কিছু সুনাম করবে, তার মাঝখানে আবার একটু ‘কিন্তু’ যোগ করে দেবে। তরকারি লবণ আর মরিচ বেশি দিয়ে ফেললে যেমন নয়, ওই ‘কিন্তু’টা এরকমই হবে। সবকিছু ফ্ল্যাট হলে তো ভালো লাগবে না। লবণ-মরিচের মাত্রা বেশি, সেটা মনে করে নিলেই হবে। সেটা গায়ে মাখলে চলবে না। আমি জানি, আমার আত্মবিশ্বাস আছে যে আমি কতটুকু কী করছি, কী করতে পারব আমার দেশের জন্য। এটা মা-বাবার কাছে শেখা।
২০৪১ সালের উন্নত বাংলাদেশের সুসংবাদটিও আপনার মুখ শুনতে চাই— একজন গণমাধ্যমকর্মীর এমন বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে হেসে ওঠেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, এটা ২০২১। আর আমার বয়স ৭৫। তো ২০ যোগ দিলে কত হয়— ৯৫। আমি ততদিন বেঁচে থাকব আর কাজ করব— পাগল নাকি!
তিনি বলেন, আর আমি তো ক্ষেত্রটা তৈরি করে দিয়ে যাচ্ছি। সব প্রস্তুত করে দিচ্ছি। আমাদের নতুন প্রজন্ম এগিয়ে নিয়ে যাবে দেশ। তারা করবে, তার জন্য ২০৪১ পর্যন্ত প্রেক্ষিত পরিকল্পনা করে দিয়েছি, ২১০০ সাল পর্যন্ত ডেল্টা প্ল্যান করে দিয়েছি। এরই ভিত্তিতে পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা হবে এবং সময়ের সঙ্গে এই জিনিসগুলো পরিবর্তন হবে এবং সেভাবে পরিকল্পনা নিয়ে দেশ এগিয়ে যাবে। অবশ্যই আমরা উন্নত দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাব। অতদিনও লাগবে না, তার আগেই আমরা হতে পারব— এতে কোনো সন্দেহ নেই।
‘বাংলাদেশ উন্নত দেশ হবে— এটা কেউ ঠেকাতে পারবে না। এটা আমরা করতে পারব। তবে আমি করে যাব— এ কথা না বললেই ভালো। অত দিন কেউ বাঁচে নাকি! আর বাঁচলে সে সময় বুড়ো থুরথুরি হয়ে কাজ করতে পারব নাকি!,’— বলেন শেখ হাসিনা।
গণভবন প্রান্তে সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর পাশে ছিলেন বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানা। শুরুতে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণে জাতিসংঘের চূড়ান্ত সুপারিশপত্র প্রধানমন্ত্রীর কাছে হস্তান্তর করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
গণভবন প্রান্তে আরও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, বাণিজ্য মন্ত্রী টিপু মুনশি, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। গণভবন প্রান্তে সভা পরিচালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর মূখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় প্রান্তে সরকারের মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্যসহ সহযোগী সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় প্রান্তে অনুষ্ঠান পরিচালনা শুরু করেন প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম। প্রধানমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে সূচনা বক্তব্য রাখেন। এরপর উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মীদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন।
সারাবাংলা/এনআর/টিআর
এলডিসি এলডিসি থেকে উত্তরণ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলন স্বল্পোন্নত দেশ