Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিতে বড়ধরনের অপচয় আছে’

স্টাফ করেসপনডেন্ট
২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ২০:০০

ঢাকা: ‘সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতায় অনেকেই ভাতা পাচ্ছেন। তবে এদের মধ্যে যাদের পাওয়ার দরকার নেই তারাও পাচ্ছেন। আর যাদের পেতে হবে, তাদের অনেকেই বাদ পড়ছেন। এই বাদ পড়ার পরিমাণ প্রায় ৪৬ শতাংশ। তার মানে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিতে বড়ধরনের অপচয় আছে। আমি সেটা অস্বীকার করব না। কারণ এটি গবেষণা থেকে পাওয়া ফলাফল। আমরা চাইব, ২০২৫ সালের সব দরিদ্র মানুষ সামাজিক সুরক্ষার কোনো না কোনো কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত হোক।’

বিজ্ঞাপন

রোববার (২৮ ফেব্রুয়ারি) সকালে ‘করোনার প্রভাবে এসডিজি বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ: স্বাস্থ্য ও শিক্ষা’ অনলাইন সংলাপে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (জ্যেষ্ঠ সচিব) ড. শামসুল আলম।

অনলাইন সংলাপটি জার্মানির ব্রেড ফর দ্য ওয়ার্ল্ডের পৃষ্ঠপোষকতায় এবং অ্যাকশন ফর সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট (এএসডি) ও ডেভেলপমেন্ট জার্নালিস্ট ফোরাম অব বাংলাদেশের (ডিজেএফবি) আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয়।

শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় বাড়ানোর বিষয়ে শামসুল আলম বলেন, ‘অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় আমরা শিক্ষা ব্যয় বাড়ানোর কথা বলছি। শিক্ষা ব্যয় ৪ শতাংশে উন্নীত করার কথা বলেছি। যেটি বর্তমানে ২ দশমিক ৬ শতাংশে আছে। আসলে আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী শিক্ষা ব্যয় ৬ শতাংশে যাওয়া উচিত। তবু এটা এখন যেহেতু ২ দশমিক ৬ আছে, এটাকে ৪ শতাংশে নিতে পারলেও বড়রকমের উলম্ফন হবে। আর স্বাস্থ্য খাতে আমরা এখন ব্যয় করছি ১ দশমিক ৬ শতাংশ। সেটি ২ শতাংশে নেওয়ার কথা বলেছি অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায়। সেটি করতে পারলেও বড়রকমের উলম্ফন হবে।’

পরিকল্পনায় যা বলা হচ্ছে তা বাজেটে বাস্তবায়ন হচ্ছে কি না সেদিকে নজর রাখার পরামর্শ দিয়ে সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের এ সদস্য বলেন, ‘যেসব বরাদ্দ যাচ্ছে আর পরিকল্পনায় যা বলা হচ্ছে, সেগুলোর সঙ্গে সংযোগ কতটা হচ্ছে, তা খেয়াল রাখতে হবে। যেমন পরিকল্পনায় আমরা বলেছি, অনুন্নত অঞ্চলগুলোর জন্য বিশেষ তহবিল রাখার জন্য বা সে এলাকায় স্কুল কলেজ গড়ে তোলার জন্য। পরিকল্পনার সঙ্গে বাজেটের সমন্বয় না হলে পরিকল্পনা করে ফল পাওয়া যাবে না।’

শ্রেণিগত অসাম্য না থাকলেও বাংলাদেশে অঞ্চল বৈষম্য আছে। শামসুল আলম বলেন, ‘স্বাস্থ্য সেবায়, দারিদ্র্যে, শিক্ষা ক্ষেত্রে অঞ্চল বৈষম্য আছে। সেজন্য দেখবেন নারাণগঞ্জে ৩ শতাংশ দারিদ্র্য, অথচ রংপুরে ৭১ শতাংশ। এর জন্য আমরা অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় অনেকগুলো পদক্ষেপ রেখেছি। আপনারা নজরদারি করবেন, সেই প্রস্তাবগুলো কতটা বাজেটে প্রতিফলিত হচ্ছে।’

বিজ্ঞাপন

অনুষ্ঠানে উত্থাপিত মূল প্রবন্ধের তথ্য তুলে ধরে শামসুল আলম বলেন, ‘এখানে বলা হয়েছে, প্রাথমিকের মাত্র ১৩ শতাংশ শিক্ষার্থী অংক করার বিষয়ে পারদর্শিতা আছে। বাংলার ক্ষেত্রেও হয়তো তাই হবে। এগুলো কাম্য নয়। এরকম অনেকগুলো ভিতরের দৃষ্টি এসেছে এই আলাপ-আলোচনায়।’

তিনি আরও বলেন, ‘শিক্ষা কমিশনে বলা হয়েছিল, সকলের জন্য সর্বজনীন শিক্ষা। আমাদের অনেক বিজয়, সাফল্য, কৃতিত্ব আছে; কিন্তু শিক্ষার ক্ষেত্রে সার্বজনীনতা আমরা এখনও অর্জন করতে পারিনি। জনগণকে শিক্ষার আওতায় আনতে হবে। প্রাথমিকেই প্রায় ১৮-১৯ ভাগ শিশু ঝরে পড়ছে। এটা তো মানবসম্পদের বড় অপচয়। কত প্রতিভা ঝড়ে যাচ্ছে আমরা জানতে পারছি না। যদি শিক্ষায় অন্তর্ভুক্ত করতে পারতাম, তাদের কেউতো বিজ্ঞানী হতে পারতো, কেউ কবি হতে পারতো। শিক্ষা না পেলে তো তারা গাড়ির হেলপার হয়েই থাকবে। এই অপচয় অবশ্যই বন্ধ করতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ প্রবৃদ্ধির উচ্চতর পর্যায়ে গেছে। করোনায় কিছুটা বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে। সামাজিক, অর্থনৈতিক, জলবায়ু– সবক্ষেত্রেই বাংলাদেশ ভালো করছে। তারই প্রমাণ গতকাল প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার মাধ্যমে পেয়েছি।’

শামসুল আলম বলেন, ‘এসডিজি বাস্তবায়নে কিছু চ্যালেঞ্জ তো আছেই। বিশেষ করে এই করোনার কারণে দারিদ্র্যতা বাড়ার একটা প্রবণতা দেখা দিয়েছিল। যদিও আমরা খুব সুন্দরভাবে আমরা তা হ্যান্ডেল করেছি। এসডিজি বাস্তবায়ন কিছুটা হলেও ধাক্কা খেয়েছে। তবু আমরা আশা করছি, তৃতীয় বর্ষ থেকে পুরনো প্রবৃদ্ধির পথে ফিরে যাব এবং এসডিজি বাস্তবায়ন সামলিয়ে উঠতে পারব। সেভাবেই পরিকল্পনা সাজিয়েছি।’

অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে অ্যাকশন ফর সোশ্যাল ডেভেলপমেন্টের (এএসডি) নির্বাহী পরিচালক জামিল এইচ চৌধুরী বলেন, ‘করোনায় একটা বড় ক্ষতি হলো, অনেক শিক্ষার্থী ঝরে পড়েছে। অনেকে কাজে চলে গেছে। অনেকের বাল্য বিয়ে হয়ে গেছে। তাদের কীভাবে ফিরিয়ে আনা যায়? আবার অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী অনেক জায়গায় বড় বড় প্রণোদনা দিয়েছেন। বেসরকারিভাবে যারা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালাতেন, বন্ধ হয়ে গেছে। সেগুলোর জন্য প্রণোদনার কথা শুনিনি। তাদের কীভাবে ফিরিয়ে আনা যায়? কারণ তারা তো সমাজকেই সেবা দিচ্ছিলেন। মানুষ উপকৃত হচ্ছিল। কতগুলো বন্ধ হয়েছে তা নিয়ে জরিপ করা প্রয়োজন এবং সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। এগুলো করা দরকার বাজেটের আগেই।’

সংলাপে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের (বিআইআইএসএস) সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ও অর্থনীতিবিদ ড. মাহফুজ কবীর।

করোনায় শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতের ক্ষতি পুষিয়ে কীভাবে এসডিজি বাস্তবায়নের দিকে এগিয়ে যাওয়া যায়, সে বিষয়ে করণীয় তুলে ধরে মাহফুজ কবীর বলেন, ‘স্বাস্থ্য খাতকে ঢেলে সাজাতে হবে। এ জন্য বাজেট বরাদ্দ বাড়াতে হবে। বরাদ্দ দারিদ্র্য, প্রান্তিক ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষের কাছে পৌঁছতে হবে। সরকারি সেবার মান উন্নত করতে হবে। স্বাস্থ্য সেবার পেছনে পরিবারের অর্থ ব্যয় কমানোর ব্যবস্থা নিতে হবে। বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবায় আমূল সংস্কার জরুরি। অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি দূর করতে হবে যাতে মানুষ হয়রানিমুক্তভাবে ও কম খরচে বেসরকারি সেবা পেতে পারে। মাতৃ ও শিশুস্বাস্থ্য সেবার পরিধি বাড়াতে হবে।

শিক্ষার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘শিক্ষায় বাজেট জিডিপির ২ শতাংশের চক্র থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। এ জন্য বরাদ্দের উল্লম্ফন প্রয়োজন। অনেক বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান করোনাকালে বন্ধ হয়ে গেছে। তাদের ফিরিয়ে আনতে বিশেষ প্রণোদনা দিতে হবে। ডিজিটাল ডিভাইসের কারণে টেলিভিশন ও অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম দারিদ্য, প্রান্তিক, দূরবর্তী ও সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছতে পারেনি। শহরের শিক্ষার্থীদের বেশিরভাগ অনলাইন শিক্ষার সুবিধা নিতে পারলেও গ্রামের অনলাইন শিক্ষার্থীরা কাঙ্ক্ষিত ফল পায়নি। অনেকেই বিশেষ করে মেয়েরা ঝরে পড়েছে। তাদের আবার শিক্ষায় ফিরিয়ে আনতে হবে। ডিজিটাল ডিভাইসের কারণে শিক্ষার্থীরা যেন শিক্ষা ও প্রশিক্ষণে বঞ্চনার শিকার না হয় সেজন্য অতিরিক্ত বরাদ্দ প্রয়োজন। শিক্ষার্থীদের ডিভাইস কেনা ও ইন্টারনেটে ভর্তুকি দিতে হবে। যাতে তারা করোনা পরবর্তী সময়েও ই-লার্নিংয়ের সুবিধা নিতে পারে।’

সংলাপে মূল প্রবেন্ধর ওপর আরও আলোচনা করেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. তানিয়া হক, রোগতত্ত্ববিদ ও মানিকগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ইসরাত শর্মী, উন্নয়ন কর্মী তাহমিনা শিল্পী, প্রতীক যুব সংসদের নির্বাহী প্রধান সোহানুর রহমান। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন ডেভেলপমেন্ট জার্নালিজম ফোরাম অব বাংলাদেশের (ডিজেএফবি) ও ফাইন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসের বিশেষ প্রতিনিধি হুমায়ুন কবির। সংলাপটি সঞ্চালনা করেন যমুনা টেলিভিশনের বিশেষ প্রতিনিধি সুশান্ত সিনহা।

সারাবাংলা/জেজে/পিটিএম

অপচয় কর্মসূচি সামাজিক সুরক্ষা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর