পুলিশের সামনেই চলছে অবৈধ টমটম, দুর্ভোগে সাধারণ মানুষ
১ মার্চ ২০২১ ০৮:৫৮
মৌলভীবাজার: চায়ের দেশখ্যাত পর্যটন শহর শ্রীমঙ্গল পৌর শহরের প্রধান সড়ক-অলিগলি অবৈধ টমটম ও ব্যাটারিচালিত অটোরিক্সার ভরে গেছে। এতে করে শহরে যানজটসহ প্রায়ই ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটনা ঘটছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
সরোজমিন ঘুরে দেখা গেছে, সাধারণ রিক্সার পাশাপাশি যন্ত্রচালিত অবৈধ টমটম ও ব্যাটারিচালিত অটোরিক্সার বেপরোয়া চলছে সমানতালে। দেখলেই যেন মনে হবে এটি অটোরিকশা ও টমটমের রাজধানী। এসব যানের পৌরসভার নিবন্ধনও নেই। এমনকি মহামান্য হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও অবাধে চলছে এসব অবৈধ যান। এমনকি ট্রাফিক পুলিশের সামনেই শহর দাপিয়ে বেড়াচ্ছে হাজারো ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও টমটম।
শ্রীমঙ্গলের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর রফিকুল ইসলামকে মোটা অঙ্কের টাকা মাসোহারা দিয়েই বেপরোয়াভাবে এসব অবৈধ যান চলছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ফলশ্রুতিতে শহরে প্রতিদিনই অসহনীয় যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকা পরে স্থানীয় মানুষজনসহ বেড়াতে আসা দেশ-বিদেশ পর্যটকরাও প্রচণ্ড দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। আর অনভিজ্ঞ এসব চালকরা প্রায়ই ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটাচ্ছেন। একইসঙ্গে পর্যটকদের কাছ থেকেও চারগুণ ভাড়া আদায় করছেন। ফলে দেশ-বিদেশে কাছে এলাকার ভাবমূর্তি বিনষ্ট হচ্ছে। যা পর্যটন শিল্পের জন্য ক্ষতিকর। আর পুলিশ প্রশাসনকে হাত করেই এসব অবৈধ যানবাহন চলছে বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা ।
তবে অবৈধ এসব যানবাহনের সংগঠন থেকে মাসোহারা নেওয়ার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শ্রীমঙ্গলের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর রফিক সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমি ফোনে এ বিষয়ে কথা বলতে চাই না। আপনি অফিসে আসেন।’ অফিসে আসছি আপনি থাকেন- প্রতিবেদকের এমন কথা শুনে রফিক বলেন, ‘আমি এখন অফিসে নাই।’
এদিকে শহরতলির বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, পৌর শহরে যতদূর চোখ যায়, শহরের ভেতর বা বাহিরে যানবাহনের বেশির ভাগই অবৈধ অটোরিকশা ও টমটম বেপরোয়াভাবে চলাচল করছে। সড়কের দুই পাশেই এসব যানবাহন একটার পেছনে আরেকটা লেগেই আছে। পুরো সড়ক জুড়েই টমটম এবং অটোরিকশা অবস্থান। শহরের যাত্রীদের তুলনায় যেন এসব যানের সংখ্যাই বেশি। রাস্তার যেখানে সেখানে এসব অবৈধ যানবাহন রাখার কারণে শ্রীমঙ্গল এখন যানজটের শহর হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। তবে এই সমস্যা সমাধানে পৌর কর্তৃপক্ষের এগিয়ে আসার দায়িত্ব থাকলেও রহস্যজনকভাবে অনেকটা নীরব ভূমিকায় তারা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক টমটম ও অটোরিকশা চালকরা জানান, প্রতি মাসে শ্রীমঙ্গল অটোরিকশা মালিক সমিতি সিন্ডিকেট থেকে প্রতি মাসেই নির্ধারিত টাকা ফি দিয়ে তাদের এসব অবৈধ যানের স্টিকার কিনে আনতে হয়। ব্যাটারিচালিত রিকশার জন্য ২৫০ টাকা আর টমটমের জন্য দিতে হয় ৩০০ টাকা। প্রতি মাসেই সেই স্টিকার বদলও করতে হয়। এক মাস স্টিকার না আনলে রিকশার গদি (সিট) জোর করে খুলে নেওয়া হয়। আর রিকশার গদি খোলার জন্য আলাদা একটি কর্মীবাহিনী রয়েছে। সারাদিন শহরে ঘুরে স্টিকারবিহীন রিকশার গদি খুলে নেওয়াই তাদের কাজ।
অনুসন্ধানে জানা যায়, শ্রীমঙ্গল শহরে প্রতিদিন প্রায় সাত থেকে আট হাজার টমটম এবং ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। অটোরিকশা মালিক সমিতি সিন্ডিকেটের সভাপতি জাহের মিয়া, সম্পাদক গৌরাঙ্গ বাবু এবং শ্রমিক সংগঠনের সভাপতি শফিক মিয়া শহরের শ্যামলী এলাকায় একটি অফিস করে তাদের নিজস্ব কর্মী বাহিনী দিয়েই এসব অবৈধ যানবাহন সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণের কাজ করেন। যদিও মালিক সমিতির কথিত এই নেতারা কখনোই এসব যানবাহন চালনা বা মালিকও ছিলেন না।
অভিযোগ রয়েছে, কয়েকজন রাজনৈতিক নেতার ছত্র-ছায়ায় স্টিকারের নামে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন এই চক্রটি। হাতিয়ে নেওয়া এসব টাকার ভাগবাটোয়ারা রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী থেকে শুরু করে পুলিশের পকেটে যাওয়ারও অভিযোগ রয়েছে।
একাধিক চালকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মালিক সমিতির লোকেরা তাদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে স্থানীয় কয়েকজন নেতা ও থানা পুলিশকে মাসোহারা দিয়ে ম্যানেজ করেই চলেন। বাকী টাকা তারা নিজেরা বেতন হিসেবে নেন।
মালিক সমিতি সিন্ডিকেটেরই একজন জানান, আমরা যদি চাঁদা না দেই তাহলে পুলিশ শহরে অটোরিকশা চালাতে দিবে না।
শ্রীমঙ্গল অটোরিকশা মালিক সমিতির সভাপতি জাহের মিয়া বলেন, রিকশা চালকদের কাছ থেকে নেওয়া টাকা শ্রমিকদের কল্যাণেই ব্যয় করা হয়। তবে কারও কাছ থেকে জোর করে টাকা আদায় করার বিষয়টি অস্বীকার করেন তিনি।
সম্প্রতি শ্রীমঙ্গল থানা পুলিশের পক্ষ থেকে নির্দিষ্ট একটি তারিখ ঘোষণা করে অবৈধ এসব যানবাহন পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণা দিলেও তার বাস্তবায়ন বিন্দুমাত্র পরিলক্ষিত হয়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শ্রীমঙ্গল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুস ছালেক সারাবাংলাকে বলেন, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও টমটমের বিরুদ্ধে আমরা প্রায়ই অভিযান চালাচ্ছি। আমরা শীঘ্রই তাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে যাচ্ছি।
মৌলভীবাজার পুলিশ সুপার মো. জাকারিয়া সারাবাংলাকে বলেন, অবৈধ যানের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। সেটা চলমান থাকবে। আমাদের তরফ থেকে কোনো গাফিলতি আছে কি না, সেটা তদন্ত করে দেখব। যদি আমাদের কেউ এর সঙ্গে জড়িত থাকে তাহলে তারা ছাড় পাবেন না।