ড্রেজার দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন, প্রশাসন নিরব
২ মার্চ ২০২১ ১২:৫০
বরিশাল: জেলার আগৈলঝাড়ায় খাল ও পুকুরের মধ্যে ড্রেজার বসিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এর ফলে বসতবাড়ি, রাস্তাঘাটসহ বিভিন্ন স্থাপনা ধসে যাচ্ছে এবং হুমকির মুখে পড়ছে পরিবেশ। স্থানীয় প্রযুক্তিতে তৈরি এসব ড্রেজার দিয়ে গ্রামাঞ্চলের খাল, বিল ও পুকুর থেকে যত্রতত্র ভূগর্ভস্থ বালু উত্তোলন করায় আতঙ্কে রয়েছেন এলাকাবাসী। বছরের পর বছর ধরে ড্রেজার মালিকরা এ অবৈধ কাজটি করলেও প্রশাসনের কোনো ভূমিকা নেই।
জানা গেছে, ড্রেজার দিয়ে উত্তোলনকৃত বালুর বেশিরভাগই স্থানীয় ঠিকাদাররা তাদের নির্মাণ কাজে ব্যবহার করে। সড়ক ও সরকারি স্থাপনার মেঝে ভরাট করা হচ্ছে এ বালু দিয়ে। ভূগর্ভস্থ এ বালুতে কাদামাটির পরিমাণ বেশি থাকে। ফলে মাটি মিশ্রিত এ বালু দিয়ে তৈরি সড়ক ও স্থাপনা টেকসই না হওয়ায় প্রতিবছর সরকারের উন্নয়ন কাজের কোটি কোটি টাকা গচ্চা যাচ্ছে। তাছাড়া কম খরচে ও সহজ পদ্ধতিতে বালু পাওয়ায় ঠিকাদারদের পাশাপাশি বসতবাড়ি নির্মাণেও অনেকে পরিবেশ বিধ্বংসী এই ড্রেজার ব্যবহার করছে।
এলাকাবাসী বিভিন্ন সময় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের বিষয়টি জানালেও তা কোনো কাজে আসছে না বলেও অভিযোগ রয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, উপজেলার বিভিন্ন স্থানে এভাবে অবৈধ ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলনের কাজ চলমান রয়েছে। অবৈধ মেশিনগুলোর মালিকরা ঘুরে ঘুরে গ্রামের পরিত্যক্ত খাল, ডোবা ও পুকুর থেকে বালু উত্তোলন করছে। আগৈলঝাড়া-বাশাইল সড়কের মধ্যবর্তী এলাকায় সরকারি সড়কের পাশের একটি মাছের ঘেরে অবৈধ ড্রেজার বসিয়েছে সোহাগ হোসেন নামের স্থানীয় এক ব্যক্তি। ঘের থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে হুমকিতে পড়েছে সরকারি সড়ক।
রাজিহার বাজার সংলগ্ন একটি চাতালের পাশে অবৈধ ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন করছেন ড্রেজার মালিক খাইরুল। তিনি জানান, স্থানীয় মিজান খান নামে এক ব্যক্তি তার জমি থেকে বালু উত্তোলনের জন্য এ ড্রেজার বসিয়েছেন। এছাড়াও বাকাল ও চেঙ্গুটিয়া এলাকায় অবৈধ ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন শুরু করেছেন জন ও উত্তম নামের দুই ড্রেজার মালিক।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ১৫-২০টি ড্রেজার রয়েছে। ডাক পড়লেই মেশিনপত্র নিয়ে গ্রামের আনাচে কানাছে ছুঁটে যাচ্ছে ড্রেজার মালিক-শ্রমিকরা।
সম্প্রতি এসব ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলনের ফলে বিভিন্ন এলাকায় সড়ক ও বতসবাড়ি দেবে যাওয়ার বেশ কয়েকটি অভিযোগ পাওয়া গেছে।
মৃত্তিকা সম্পদ ইনস্টিটিউটের বরিশাল কার্যালয়ের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা সাব্বির আহমেদ জানান, মাটির নিচ থেকে কাদা বালু উত্তোলন করা হলে ভূমির উপরিভাগ ঠিক থাকলেও তলদেশের ব্যাপক জায়গা নিয়ে ফাঁকা হয়ে যায়। এভাবে প্রতিনিয়ত চলতে থাকলে বড় বড় স্থাপনা, রাস্তাঘাটসহ ব্যাপক এলাকা দেবে যেতে পারে। এটা পরিবেশের জন্য বড় ধরনের হুমকি। এছাড়াও কৃষি জমি থেকে বালু উত্তোলন করা হলে কৃষি জমিগুলো অকৃষিতে রূপান্তরিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
আগৈলঝাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. আবুল হাশেম জানান, এ ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সারাবাংলা/এনএস