১০ উপাচার্যের অনিয়মের অভিযোগ তদন্তে মাঠে নেমেছে ইউজিসি
৩ মার্চ ২০২১ ০৯:৩৬
ঢাকা: বেশ কয়েকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের অনিয়ম কর্মকাণ্ডের তদন্ত শুরু করেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। এসব উপাচার্যদের বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতি, তহবিল হিসাবে গড়মিল ও গরহাজিরসহ নানান অনিয়মের অভিযোগ ক্ষতিয়ে দেখতে কমিশনের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যেই একাধিক কমিটিও গঠন করা হয়েছে।
জানা গেছে, আর্থিক ও প্রশাসনিক অনিয়মের অভিযোগে ইউজিসি ১০ জন বর্তমান ও সাবেক উপাচার্যের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে। এসব উপাচার্য রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত ছিলেন বা আছেন। এরমধ্যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের হারুণ অর রশীদ ও বেগম রোকেয়ার নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহর মতো হেভিওয়েট উপাচার্যও রয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে।
উপাচার্যদের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ তদন্তের বিষয়ে জানতে চাইলে ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শহীদুল্লাহ সারাবাংলাকে বলেন, তদন্তের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানরা অনিয়ম করবেন সেটি কোনোভাবেই কাম্য নয়। তাদেরকে আরও বেশি সততার সঙ্গে কাজ করতে হবে, ভালো মানুষ হিসেবে দৃষ্টান্ত তৈরি করতে হবে। কিন্তু অনেক উপাচার্য ভুলের দৃষ্টান্ত স্থাপন করে চলেছেন।
সূত্র বলছে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হারুন–অর–রশিদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ও আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। চট্টগ্রাম ও কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক দুই উপাচার্যের বিরুদ্ধেও রয়েছে একই অভিযোগ।
নানার অনিয়মের কারণে গণমাধ্যমে নিয়মিত আলোচনায় থাকা রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বিরুদ্ধেও একই রকম অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মদিবসে অনুপস্থিত থাকায় নিজ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকেরাই তার বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছেন।
এসব অভিযোগ তদন্তে ইউজিসি দুটি আলাদা কমিটি করেছে। ইউজিসি বলছে, কলিমউল্লাহর বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ, তার অধিকাংশের সত্যতা পাওয়া গেছে। এসব তদন্তে উপাচার্য সংশ্লিষ্ট আরও কয়েকজন শিক্ষক ও কর্মকর্তার নাম উঠে এসেছে। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নকাজে দুর্নীতি নিয়ে ইউজিসির যে কমিটি তদন্ত করছে সেই প্রতিবেদন কয়েকদিনের মধ্যেই কমিশনের চেয়ারম্যান দেখবেন বলেও জানা গেছে। ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক মুহাম্মদ আলমগীরের নেতৃত্বাধীন একটি কমিটি এই প্রতিবেদন তৈরি করেছে। বিশ্বজিৎ চন্দের নেতৃত্বে আরও একটি কমিটি রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য কলিমউল্লাহর বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো তদন্ত করছে।
কলিমউল্লাহ ছাড়াও গুরুতর অভিযোগের আঙুল উঠেছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য ও প্রকল্প পরিচালক হারুনর রশীদ খানের বিরুদ্ধে। তিনি দায়িত্বে থাকার সময় ভবন নির্মাণের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের টাকায় ১৪ শতাংশ জমি কেনা হয় এবং ১ কোটি ৩১ লাখ ৫২ হাজার টাকায় ভবন নির্মাণ করা হয়। যদিও ববি উপাচার্যের দাবি, এই ভবন তৈরিতে তার নিজস্ব খরচ হয়েছে। তবে ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক দিল আফরোজা বেগমের নেতৃত্বাধীন কমিটি তদন্ত করে জানিয়েছে, ট্রাস্ট ভবন নির্মাণে কারও ব্যক্তিগত টাকা ব্যয় হয়নি। তারা বলছে, ভবনটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পত্তি।
খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শহীদুর রহমান খান নিজের ছেলেকে সেকশন অফিসার হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। নিজের মেয়েকেও তিনি শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায়। অভিযোগ রয়েছে নিজের স্ত্রীকেও অধ্যাপক পদে নিয়োগ দেওয়ার চেষ্টা করেছেন তিনি। পরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপে এই নিয়োগ বন্ধ হয়। তার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ তদন্ত করছে ইউজিসির সদস্য বিশ্বজিৎ চন্দের নেতৃত্বাধীন একটি কমিটি।
টাঙ্গাইলে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আলাউদ্দিনের বিরুদ্ধে নিয়োগে অনিয়ম ও অবৈধ আর্থিক লেনদেনসহ বেশ কিছু অভিযোগ রয়েছে। নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এম অহিদুজ্জামানের বিরুদ্ধে নিয়োগে অনিয়ম করার অভিযোগ রয়েছে। তবে তার বিরুদ্ধে তদন্ত আপাতত স্থগিত আছে।
এছাড়াও ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বিরুদ্ধেও অনিয়মের অভিযোগ তদন্ত করছে ইউজিসি।
কথা বলতে অভিযুক্ত কয়েকজন উপাচার্যের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা মিডিয়ায় এসব বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি। বেরোবির উপাচার্য কলিমউল্লাহ বলেন, ইউজিসির তদন্ত চলছে, দয়া করে তার আগেই মিডিয়া ট্রায়াল করবেন না।
এ বিষয়ে অধ্যাপক মুহাম্মদ আলমগীর সারাবাংলাকে বলেন, আমরা তদন্ত করছি। দোষী চিহ্নিত করা গেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে। ইতোমধ্যেই কমিশনে কয়েকটি প্রতিবেদন জমা পড়েছে। দোষীদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সারাবাংলা/টিএস/এএম