সোনা চোরাচালানে প্রবাসী চক্র, বাহক পান টিকেট ও ৩০ হাজার টাকা
৪ মার্চ ২০২১ ২১:১১
চট্টগ্রাম ব্যুরো: মধ্যপ্রাচ্য থেকে আসা বিমানের সিটের নিচ থেকে ১৬০টি স্বর্ণের বার উদ্ধারের মামলায় একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মামলার তদন্তকারী সংস্থা সিআইডি জানিয়েছে, দুবাইয়ে অবস্থানরত বাংলাদেশী প্রবাসীদের একটি চক্র এই স্বর্ণের চালান পাচারের সঙ্গে জড়িত। টিকেটের দাম এবং মাত্র ৩০ হাজার টাকার বিনিময়ে ওই চক্র অনেক প্রবাসী বাংলাদেশিকে স্বর্ণের বার চোরাচালানে বাহক হিসেবে ব্যবহার করছে।
গতকাল বুধবার (৩ মার্চ) সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম নগরীর ষোলশহর দুই নম্বর গেইট এলাকা থেকে একজনকে গ্রেফতার করে সিআইডি। তার নাম মো. হেলাল উদ্দিন (৩৫)। গ্রেফতার হেলাল চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার জাফতনগর ইউনিয়নের ফতেপুর গ্রামের মৃত শামছুল আলমের ছেলে।
২০২০ সালের ১৫ অক্টোবর সকালে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দুবাই থেকে আসা বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে (বিজি-১৪৮) গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তল্লাশি চালান কাস্টমস কর্মকর্তারা। ফ্লাইটে তিনটি প্যাসেঞ্জার সিটের নিচ থেকে কালো টেপে মোড়ানো ৮টি প্যাকেটে ১৬০টি স্বর্ণের বার জব্দ করা হয়। এর ওজন ১৮ কেজি ৫৬০ গ্রাম। দাম প্রায় ১০ কোটি ৪০ লাখ টাকা।
তবে স্বর্ণের বারগুলো বাংলাদেশে আনার সঙ্গে জড়িত কাউকে সেসময় শনাক্ত ও আটক করতে পারেননি কাস্টমস কর্মকর্তারা। এ ঘটনায় নগরীর পতেঙ্গা থানায় দায়ের হওয়া মামলা তদন্তের দায়িত্ব পায় সিআইডি। চারমাস ধরে তদন্তের পর সিআইডি প্রথম ফটিকছড়ির হেলালকে শনাক্ত করে এবং তাকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।
সিআইডির চট্টগ্রাম অঞ্চলের বিশেষ পুলিশ সুপার মুহাম্মদ শাহনেওয়াজ খালেদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় এবং দুবাইয়ে হেলালের অবস্থান, দেশে যাওয়া-আসা, তার যোগাযোগ, সবকিছু বিশ্লেষণ করে আমরা সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে তাকে গ্রেফতার করি। গ্রেফতারের পর হেলাল স্বীকার করেন যে, ১৬০ পিস স্বর্ণের বারের মধ্যে তিনি ৪০ পিস দুবাই থেকে চট্টগ্রামে এনে ইমিগ্রেশন ও কাস্টমসের চেকপোস্ট পার করার দায়িত্বে ছিলেন। বাকি ১২০ পিসের দায়িত্বে ছিল অন্যরা। হেলাল কয়েকজনের নাম বলেছেন, তবে তদন্তের স্বার্থে আমরা সেগুলো এখনই প্রকাশ করতে পারছি না।’
হেলালকে জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে সিআইডির এই কর্মকর্তা সারাবাংলাকে আরও জানান, হেলাল ২০১১ সালে দুবাই যান। প্রায় আটবছর সেখানে একটি কোম্পানিতে তিনি চাকরি করেন। এরপর চাকরি চলে গেলে ২০১৮ সালে তিনি দেশে ফিরে আসেন। বছরখানেকের মধ্যেই তিনি আবার দুবাইয়ে যান, তবে ভালো কোনো কাজ খুঁজে পেতে ব্যর্থ হন। এসময় তিনি স্বর্ণ চোরাচালান চক্রের সঙ্গে যুক্ত হন।
হেলালকে উদ্ধৃত করে সিআইডি কর্মকর্তার দেওয়া তথ্যমতে, ওই চক্রের সবাই বাংলাদেশি এবং চক্রে ৭-৮ জন আছেন বলে হেলাল সিআইডিকে জানিয়েছেন। তাদের অধীনে বাহক আছেন বেশ কয়েকজন। দুবাই ইমিগ্রেশন এবং দেশটির কাস্টমস চেকপোস্ট পার করে দেওয়ার দায়িত্ব থাকে চোরাচালান চক্রের আর দেশে আনার পর ইমিগ্রেশন-কাস্টমসের নজর এড়িয়ে নির্দিষ্ট ব্যক্তির হাতে পৌঁছানো পর্যন্ত দায়িত্ব বাহকের।
‘১৬০ পিস স্বর্ণের বারের যে চালান আটক হয়েছিল, সেটিও ছিল হেলালের স্বীকারোক্তিতে পাওয়া চক্রটিরই। চক্রের প্রধান নেতাই হেলালকে ৪০ পিস স্বর্ণের বার দেন। তাকে টিকেটের দাম ও চালান চট্টগ্রামে আনা বাবদ ৩০ হাজার টাকা দেন। এভাবে প্রতিটি চালান চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন বিমানবন্দরে পৌঁছে বলে জানিয়েছেন হেলাল। ১৬০ পিসের চালান ধরা পড়ার পর হেলাল আরও ৪-৫ বার দুবাইয়ে গেছেন এবং ফিরে এসেছেন। তবে বড় কোনো চালান আনেননি। প্রতিবারই কাস্টমসের শুল্ক পরিশোধ করে দুই পিস বার ও গহনা এনেছেন। তবে ১৬০ পিসের চালান ধরা পড়ার আগে ৩০ পিসের একটি চালান হেলাল এনেছিলেন এবং নির্বিঘ্নে ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস চেকপোস্ট পার করতে পেরেছিলেন বলে তিনি জানিয়েছেন’, বলেন শাহনেওয়াজ খালেদ।
গ্রেফতার হেলালকে বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হলে তিনি জবানবন্দি দিয়ে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন বলে জানান সিআইডি কর্মকর্তা মুহাম্মদ শাহনেওয়াজ খালেদ।
সারাবাংলা/আরডি/এমও