Saturday 28 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

এক হাত নিয়েই মার্স্টাস পাস, মিলছে না চাকরি

লোকাল করেসপন্ডেন্ট
৭ মার্চ ২০২১ ১৭:৫১

বেনাপোল (যশোর): দুটি পা নেই, একটি হাত নেই, তাতে কী? সচল একটি হাত দিয়েই বাঁচার স্বপ্ন দেখেন শারীরিক প্রতিবন্ধী শাহিদা খাতুন। প্রতিবন্ধিতাকে জয় করে অনন্য নজির স্থাপন করেছেন তিনি। স্বপ্নপূরণের অনেকখানি এগিয়েছেন তিনি। প্রবল ইচ্ছাশক্তির ওপর ভর যেমন পাস করেছেন মাস্টার্স, তেমনি চাকরি করেও সফল হতে চান জন্ম থেকে প্রতিবন্ধী এ তরুণী।

এক সময় প্রতিবেশীরা তার জন্মকে ‘পাপের ফল’ বলতেও কার্পণ্য করেনি। আজ তারা শাহিদাকে মেনে নিয়েছেন বিপদের বন্ধু হিসেবে। যেকোনো দরকারে তারা শাহিদার কাছে ছুটে আসেন। শাহিদাও এখন কারও করুণা নন, নিজের পায়ে দাঁড়াতে চান। তিনি জানান, তার এখন প্রয়োজন একটি চাকরি।

বিজ্ঞাপন

যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার শিমুলিয়া গ্রামের মুদি দোকানি রফিউদ্দিনের ছয় সন্তানের মধ্যে শাহিদা চতুর্থ। ১৯৯১ সালে শাহিদার জন্ম হলে গোটা পরিবারে যেন আঁধার নেমে আসে। কারণ, মেয়েটির একটি হাত ও দুটি পা নেই। শাহিদার মা শিমুলিয়ার খ্রিষ্টান মিশনে কাজ করার সময় নিয়ে যেতেন শাহিদাকে। সেখানে মিশনের সিস্টার জোসেফ মেরি তাকে পড়ালেখার হাতেখড়ি দেন।

শাহিদার বয়স পাঁচ বছর হলে সেন্ট লুইস প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করতে নিয়ে যান তার মা। কিন্তু প্রতিবন্ধী হওয়ায় স্কুলের শিক্ষকরা তাকে ভর্তি করতে অস্বীকৃতি জানান। পরে মিশনের জোসেফ মেরির বদৌলতে সুযোগ হয় স্কুলে পড়ার। কখনো মা-বাবা, কখনো ভাই-বোনের কোলে চড়ে স্কুলে যাতায়াত শুরু হয় শাহিদার। রোদ, বৃষ্টি, ঝড় কোনো কিছুই তাকে স্কুল থেকে দূরে রাখতে পারেনি। এভাবেই ২০০৭ সালে সেন্টলুইস হাই স্কুল থেকে এসএসসি ও ২০০৯ সালে শিমুলিয়া ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। সর্বশেষ যশোর এমএম কলেজ থেকে ২০১৬ সালে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতক পাস করেন। শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে দূরে ঠেলে সবশেষ মাস্টার্স পাস করেও সরকারি চাকরি না মেলায় হতাশ হয়ে পড়েছেন শাহিদা।

বিজ্ঞাপন

নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে শাহিদা বলেন, জন্মের পর থেকেই আমি শারীরিক প্রতিবন্ধী। দুটি পা অচল। দিনের পর দিন কষ্ট-সংগ্রাম করে লেখাপড়া শিখেছি। কয়েক বছর আগে ঝিকরগাছার রঘুনাথনগরের বাবর আলী সরদার বিশেষ বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী স্কুলে শিক্ষকতা করছি। কিন্তু স্কুলটিরই এমপিওভুক্তি হয়নি। এখন তার সরকারি চাকরির বয়স আর চার-পাঁচ মাস আছে। এর মধ্যে জীবনের অবলম্বনের জন্য একটি চাকরি দরকার।

তিনি আরও বলেন, আমার মতো প্রতিবন্ধীরা সমাজের চোখে অবহেলিত হিসেবে বিবেচিত। আমি সমাজের চোখে বোঝা হয়ে বাঁচতে চাই না, নিজের কর্মপ্রচেষ্টার মাধ্যমে একজন আত্মনির্ভরশীল মানুষ হিসেবে বাঁচতে চাই। তবে এলাকার বিত্তবান বা সরকারি কোনো সহায়তা পেলে তার ই-উদ্যোক্তা হওয়ার ইচ্ছা রয়েছে। স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি কাজ করতে চান অন্যদের জন্যও।

 

শাহিদার জন্মের পর অনেকে অনেক কটু কথা বলেছে। অনেকে মেরে ফেলতেও বলেছেন। তারপরও অনেক কষ্ট করে মেয়েকে বড় করেছেন জানিয়ে শাহিদার মা জোহরা বেগম বলেন, কখনো মা-বাবা, কখনো ভাই-বোনের কোলে চড়ে স্কুলে যাতায়াত করতো শাহিদা। রোদ, বৃষ্টি, ঝড় কোনো কিছুই তাকে স্কুল থেকে দূরে রাখতে পারেনি।

পড়াশোনার প্রতি আন্তরিক ও অদম্য আগ্রহের কারণে শিক্ষকরাও পরে শাহিদার প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে ওঠেন। এভাবেই নিজের অদম্য ইচ্ছাশক্তিবলে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হয়েছেন শাহিদা। লেখাপড়ার পাশাপাশি শাহিদা হ্যান্ডিক্রাফট, সেলাইসহ বিভিন্ন হাতের কাজও করতে পারেন। কিন্তু এখন তিনি তার ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত। তাই শাহিদার মা বলেন, আমরা আর কত দিন বাঁচব। মরার আগেও যদি তার একটা গতি করে যেতে পারি, তাহলে মরেও শান্তি পেতাম।

শাহিদার বাবা রফিউদ্দিন জানান, শাহিদার একটি চাকরি হলে সমাজের আর দশটা প্রতিবন্ধী ছেলে-মেয়েও তাকে অনুসরণ করতে পারবে। তারাও লেখাপড়া শিখে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করবে, সমাজের বোঝা হবে না। আর শাহিদার কষ্টের মূল্য দেবেন প্রধানমন্ত্রী এমনটাই স্বপ্ন শাহিদার বাবার।

ঝিকরগাছা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম বলেন, শাহিদা এই সমাজের জন্য অনুকরণীয় হয়ে থাকবে। শাহিদা শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হয়েছে। তাকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য উপজেলা পরিষদ থেকে আমরা চেষ্টা করছি।

২০১২ সাল থেকে সরকারি চাকরির জন্য ছুটছেন শাহিদা। সমাজসেবা, প্রাথমিক শিক্ষক নিবন্ধন, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন জায়গায় একাধিকবার পরীক্ষাও দিয়েছেন। কিন্তু মেলেনি চাকরি। শাহিদা ও তার পরিবারের ইচ্ছা, চাকরির বয়স শেষ হওয়ার আগে যদি একটা গতি হতো।

সারাবাংলা/এনএস

প্রতিবন্ধী শাহিদা খাতুন

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

উর্মিলার সংসার ভেঙে যাওয়ার কারণ
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২১:০২

নতুন পরিচয়ে কুসুম সিকদার
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২০:৫৭

সম্পর্কিত খবর