‘কর্তৃত্ববাদী শাসনে’র অবসান ঘটিয়ে জাতীয় সরকার চায় গণফোরাম
৯ মার্চ ২০২১ ১৯:৩২
ঢাকা: বর্তমান সরকার ব্যবস্থাকে ‘কর্তৃত্ববাদী শাসন’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন গণফোরামের একাংশের নেতারা। তারা এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে ‘জাতীয় সরকার’ গঠন অপরিহার্য বলে মনে করছেন। এর জন্য মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের অন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তোলার অঙ্গীকার করেছেন।
মঙ্গলবার (৯ মার্চ) দুপুরে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব, সম্পাদক, বার্তা সম্পাদক ও গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে এক মতবিনিময় অনুষ্ঠানে গণফোরাম নেতারা এসব কথা বলেন। রাজধানীর বাংলামোটরে রূপায়ন ট্রেড সেন্টারে এই মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
মতবিনিময়ে গণফোরামের একাংশের মুখপাত্র ও সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মোহসীন মন্টু, গণফোরাম নেতা অধ্যাপক আবু সাইয়িদসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব ও সাংবাদিক নেতা মনজুরুল আহসান বুলবুল, বাংলাদেশ খবরের সম্পাদকসহ প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সিনিয়র সাংবাদিকরা অংশ নেন।
আরও পড়ুন- ‘জনগণের মালিকানা কেড়ে নিয়ে তাদের গোলাম করা হয়েছে’
জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় গণফোরামের মতবিনিময় সভা। এরপর লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন আ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী। পরে মোস্তফা মোহসীন মন্টু বক্তৃতা দেন। তবে এই সময়ের মধ্যে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম একবারও উচ্চারণ করা হয়নি।
এরপর বক্তব্য রাখতে গিয়ে মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, সাংবাদিকরা জানতে আসেন, বক্তব্য দিতে আসেন না। তবু বলি, জাতির জনককে বাদ দিয়ে সুবর্ণজয়ন্তীর কোনো আয়োজন করা যায় না। অথচ আপনারা তার নাম উল্লেখ করেননি। আপনাদের দলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ড. কামাল হোসেনসহ দলীয় এমপিরা এখানে অনুপস্থিত। এই বিষয়গুলো খোলাসা করা উচিত।
জবাবে গণফোরামের এই অংশের নেতা মোস্তফা মোহসীন মন্টু সরকারের সমালোচনা করে বলেন, এই সরকারের একটি নির্বাচনের সময় আপনি ফলাফলের কমেন্টারি করছিলেন। এক পর্যায় আপনি অনুষ্ঠান থেকে উঠে চলে গেছেন। হয়তো ওখানে কোনো হস্তক্ষেপ ছিল। এসময় তিনি সাংবাদিকদের অধিকার, সাগর-রুনি হত্যা ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের সমালোচনা করেও বক্তব্য দেন।
পরে মনজুরুল আহসান বুলবুল আরও বলেন, ওইটা একটা টকশো ছিল। সময় শেষ হলে উঠে যেতে তো হবেই। তবে সাগর-রুনীর হত্যার বিচার চেয়ে গণফোরামকে কখনো রাজপথে দেখিনি। এমনকি সাংবাদিকদের পাশেও কখনো এই গণফোরাম দাঁড়াতে দেখিনি। সাংবাদিকদের দাবি-দাওয়া বা তাদের বিষয় নিয়ে যদি আলোচনা করতে চান, তাহলে জাতীয় প্রেস ক্লাবে আসুন। এক কাপ কফি পান করবেন এবং সাংবাদিকদের বিষয় নিয়ে সাংবাদিক নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করবেন।
পরে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন মোস্তফা মোহসীন মন্টু। ড.কামাল হোসেনের অনুপস্থিতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ড. কামাল হোসেন অসুস্থ। তিনি গণফেরামে আমাদের সঙ্গে থাকবেন কি না, সে বিষয়ে আগামী সম্মেলনে কাউন্সিলররা সিদ্ধান্ত নেবেন।’
আপনারা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে আছেন কি না— এমন প্রশ্নের জবাবে মন্টু বলেন, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট এখন অকার্যকর। এই ফ্রন্টে আমরা থাকব কি না, সেটিও জাতীয় সম্মেলনে কাউন্সিলররা সিদ্ধান্ত নেবেন। তবে আমাদের লক্ষ্য, স্বাধীনতার পক্ষের বিভিন্ন সংগঠন ও রাজনৈতিক দল এবং সাংবাদিকসহ অন্যান্য পেশাজীবীদের নিয়ে একটি প্ল্যাটফর্ম গড়ে তোলা।
অনুষ্ঠানে গণফেরামের লিখিত বক্তব্যে আরও উল্লেখ করা হয়, স্বাধীনতার ৫০ বছরেও জাতি কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন করতে পারেনি। জাতীয় সংসদকে স্বৈরতান্ত্রিক কাঠামোতে পরিণত করা হয়েছে। জনগণের মালিকানা কেড়ে নিয়ে তাদের গোলাম করা হয়েছে।
গণফোরাম বলছে, আর্থিক খাতে লুটপাট চলছে। ঘুষ-দুর্নীতি চলছে। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নেই। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সবকিছু দলীয়করণ করা হয়েছে। এর থেকে বাঁচতে জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। বর্তমান অরাজক অবস্থা থেকে জাতিকে নিষ্কৃতি দিতে জাতীয় সরকার অপরিহার্য হয়ে গেছে।
সারাবাংলা/এএইচএইচ/টিআর
অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী গণফোরাম মতবিনিময় মনজুরুল আহসান বুলবুল মোস্তফা মোহসীন মন্টু