সিন্ডিকেটের কারণে এখনো চালু হচ্ছে না মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার
১১ মার্চ ২০২১ ২১:৪৫
ঢাকা: সরকারিভাবে (জি-টু-জি পদ্ধতি) কর্মী পাঠানোর প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশের ১০ প্রতিষ্ঠান (সিন্ডিকেট) দুর্নীতি করায় ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর থেকে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে কর্মী নিয়োগ স্থগিত রয়েছে। এরপর গত আড়াই বছরে এই শ্রমবাজার খুলতে বারবার চেষ্টা করেছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে মালয়েশিয়ার বিভিন্ন পর্যায় থেকে অন্তত পাঁচ বার ইতিবাচক ঘোষণাও এসেছে। কিন্তু কাজ হয়নি। প্রতিবারই ওই সিন্ডিকেটের তৎপরতায় তা শেষ পর্যন্ত ভেস্তে গেছে।
এদিকে, ওই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে দৃস্তান্তমূলক কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার কোনো ঘটনাও চোখে পড়েনি। সারাবাংলা’র অনুসন্ধানে জানা গেছে, উল্টো ওই ১০ প্রতিষ্ঠানকে জনশক্তি রফতানিতে আরো সুযোগ দিতে চায় প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়।
মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারের সঙ্গে যুক্ত ওই ১০ প্রতিষ্ঠান হলো— ইউনিক ইস্টার্ন প্রাইভেট লিমিটেড, প্যাসেজ অ্যাসোসিয়েটস, সানজারি ইন্টারন্যাশনাল, আল ইসলাম ওভারসিজ, ক্যারিয়ার ওভারসিজ, রাব্বী ইন্টারন্যাশনাল, ক্যাথারসিস ইন্টারন্যাশনাল, আমিন ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস, প্রান্তিক ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরিজম ও এইচএসএমটি হিউম্যান রিসোর্স।
প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সবশেষ গত ফেব্রুয়ারিতে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার চালুর বিষয়ে দুই দেশের মধ্যে যৌথ ওয়ার্কিং কমিটির দুই দিনব্যাপী এক বৈঠক হয়। ওই বৈঠকেও সিন্ডিকেট সংক্রান্ত বিষয়ে দুই দেশ একমত হতে না পারায় আরও একবার নিভে যায় আশার আলো।
প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান বিষয়ক মন্ত্রী ইমরান আহমদ বলেন, কয়েকটি ইস্যুতে আমরা একমত হতে পারিনি। তাই দুই দেশে নিজেদের মধ্যে এই বিষয়ে অভ্যন্তরীণ আলোচনা চলছে। শিগগিরই বিষয়টির সুরাহা হবে।
সূত্রগুলো বলছে, মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারের সঙ্গে যারা জড়িত, তারা বাংলাদেশ-মালয়েশিয়া দুই দেশের সরকারের মধ্যেই ব্যাপক শক্তিশালী। মূলত এই সিন্ডিকেটের কারণেই শ্রমবাজার চালু হওয়ার শেষ মুহূর্তে গিয়েও আটকে যাচ্ছে।
কুয়ালালামপুরের বাংলাদেশ হাইকমিশন জানিয়েছে, মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ বিষয়ক মন্ত্রী দাতুক সেরি এম সারাভানান’র সঙ্গে বৃহস্পতিবার (১১ মার্চ) সকালে বৈঠক করেন হাইকমিশনার মো. গোলাম সারওয়ার। ওই বৈঠকে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি নতুন কর্মী নিয়োগের জন্য বিদ্যমান সমঝোতা স্মারকটি সংশোধনে প্রটোকল চূড়ান্ত করতে হাইকমিশনার মালয়েশিয়ার মানবসম্পদমন্ত্রীর সহযোগিতা কামনা করেন।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, মালয়েশিয়ায় প্রবাসী কর্মীদের প্রচুর কাজের সুযোগ রয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ নিজেরাই দুর্নীতি করে নিজেদের পথ আটকে দিয়েছে। স্থগিত হওয়া শ্রমবাজার চালুর বিষয়ে দুই দেশের মধ্যে এখনো আলোচনা চলছে, যা এখনো চূড়ান্ত সমাঝোতা হয়নি, মাঝামাঝি অবস্থানে রয়েছে।
এর আগে, দীর্ঘ সাত বছর বন্ধ থাকার পর ২০১৬ সালে সরকারিভাবে (জি-টু-জি) বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় কর্মী নিয়োগ চালু হয়। ওই সময় বাংলাদেশের ১০ প্রতিষ্ঠান অবৈধভাবে দুই দেশের সরকারি বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে যোগসাজশ করে মালয়েশিয়ায় কর্মী নিয়োগের একচেটিয়া সিন্ডিকেট গড়ে তোলে।
ওই সময় দুই দেশের সমঝোতা অনুযায়ী সরকারিভাবে মালয়েশিয়ায় কর্মী নিয়োগে খরচ হওয়ার কথা ছিল সর্বোচ্চ ৩৭ হাজার টাকা। তবে ওই ১০ সিন্ডিকেট প্রত্যেকের কাছ থেকে কমপক্ষে চার লাখ টাকা করে নেয়। এতে করে কমবেশি দুই লাখ কর্মী মালয়েশিয়ায় পাঠাতে ওই সিন্ডিকেট আনুমানিক সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকা অবৈধভাবে হাতিয়ে নেয়।
পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, ওই ১০ সিন্ডিকেটের দুর্নীতির কারণে শেষ পর্যন্ত মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার এখনো বাংলাদেশিদের জন্য স্থগিত আছে। আর এর প্রভাব পড়ছে রেমিট্যান্সে।
সারাবাংলা/জেআইএল/টিআর
১০ প্রতিষ্ঠানের সিন্ডিকেট প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার শ্রমবাজার সিন্ডিকেট