হংকংয়ে নতুন নির্বাচনি ব্যবস্থার প্রস্তাব, যুক্তরাষ্ট্রের নিন্দা
১২ মার্চ ২০২১ ১৫:০৬
হংকংয়ের নির্বাচনি ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর আড়ালে হস্তক্ষেপের পরিকল্পনা করছে চীন। এমন অভিযোগ তুলে এই প্রচেষ্টার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। বৃহস্পতিবার (১১ মার্চ) হোয়াইট হাউজ থেকে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে এ কথা জানানো হয়েছে। খবর রয়টার্স।
এর আগে, বৃহস্পতিবার একটি হংকংয়ের নির্বাচনি ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর একটি খসড়া সিদ্ধান্ত অনুমোদন করেছে চীনের পার্লামেন্ট। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে হংকংয়ের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে গণতান্ত্রিক প্রতিনিধিত্ব আরও কমে যাবে। এছাড়াও, হংকংয়ের রাজনীতিবিদদের ওপর বেইজিংয়ের কতৃর্ত্ব প্রতিষ্ঠা সম্ভব হবে।
২০২০ সালের জুনে হংকংয়ের ওপর জাতীয় নিরাপত্তা আইন চাপিয়ে দিয়েছিল বেইজিং। যে আইনটিকে বিরোধী মতামত দমনের হাতিয়ার হিসেবে দেখা হচ্ছে।
এদিকে, চীনের পার্লামেন্টে ২৮৯৫-০ ভোটে হংকংয়ের নির্বাচনপদ্ধতি পরিবর্তনের খসড়া আইনটি পাস হয়। ব্যাপক করতালির মাধ্যমে এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানান চীনা আইনপ্রণেতারা। এই আইনের মাধ্যমে হংকংয়ে নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে বিরোধিতার পথ প্রায় বন্ধ করা সম্ভব হবে। এছাড়াও, হংকংয়ের আইনসভার আকার ও গঠনে আসবে আমূল পরিবর্তন।
নতুন আইন অনুসারে, বেইজিংপন্থিদের মধ্যে থেকে একজনকে প্রধান নির্বাহী হিসেবে নির্বাচিত করবে নির্বাচক কমিটি। হংকংয়ের অনেক প্রতিনিধি নির্বাচনের ক্ষমতাও এ কমিটিকে দেওয়া হবে। প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রেও নতুন পদ্ধতি ঠিক করা হবে।
অন্যদিকে, আইনসভার সদস্যসংখ্যা ৭০ থেকে বাড়িয়ে ৯০ করা হবে এবং নির্বাচক কমিটির আকার ১ হাজার ২০০ থেকে বেড়ে দেড় হাজার হবে। বর্তমানে আইনসভার অর্ধেক সদস্য সরসরি ভোটে নির্বাচিত হন। বাকি অর্ধেক নির্বাচিত হন বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠান, ইউনিয়ন ও পেশাজীবীদের মধ্য থেকে। যারা প্রধানত আসেন চীনপন্থিদের মধ্যে থেকে। এখন নতুন পদ্ধতি প্রয়োগ হলে সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হয়ে কারা আসবেন, তা ঠিক করে দিতে পারবে নির্বাচক কমিটি।
প্রসঙ্গত, গণতন্ত্রের দাবিতে ২০১৯ সাল থেকে টানা বিক্ষোভ করে আসছে হংকংয়ের অধিবাসীরা । ওই বিক্ষোভকে চীন জাতীয় নিরাপত্তার হুমকি হিসেবে বিবেচনা করছে। বিক্ষোভ দমনে চীন হংকংয়ের প্রভাবশালী অনেক গণতন্ত্রপন্থি নেতা এবং আন্দোলনের কর্মীকে হয় কারাগারে পাঠিয়েছে, নয়তো নির্বাসিত করেছে।
এক বিবৃতিতে হংকংয়ে বেইজিংয়ের লিয়াজোঁ অফিস জানায়, ইতিবাচক উদ্দেশ্য থেকেই কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষ নতুন এই পদক্ষেপ নিয়েছে। দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে সাধারণ মানুষ এই আইন সংশোধনে সমর্থন দেবে বলে তারা আশা প্রকাশ করেছেন।
পৃথক এক বিবৃতিতে হংকংয়ের প্রধান নির্বাহী ক্যারি লাম এ খসড়া সিদ্ধান্তের প্রতি দৃঢ় সমর্থনের কথা ঘোষণা করেন। সেই সঙ্গে এমন সিদ্ধান্তের জন্য বেইজিংয়ের প্রতি তার আন্তরিক কৃতজ্ঞতাও প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, নির্বাচন ব্যবস্থা পুনঃগঠনের মাধ্যমে সঠিক পথে ফিরে আসবে হংকং।
এ ব্যাপারে ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডমিনিক রাব বলেন, হংকংয়ের নির্বাচনপদ্ধতি পাল্টে দিতে প্রস্তাবিত এ আইন চীনের প্রতি আন্তর্জাতিক আস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে। তিনি বলেন, হংকংয়ে গণতান্ত্রিক আলোচনার জায়গা নষ্ট করতেই বেইজিং এ পদক্ষেপ নিয়েছে।
উল্লেখ করা যায় যে, ১৯৯৭ সালে ব্রিটিশ উপনিবেশ থেকে চীনা শাসনে অন্তর্ভুক্ত হয় হংকং। তখন থেকে হংকং ‘এক দেশ, দুই নীতি’ পদ্ধতির আওতায় স্বায়ত্তশাসনের মর্যাদা ভোগ করে আসছে। হংকং চীনের স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল হলেও নিজস্ব বিচার বিভাগ, আইনসভা ও নিরাপত্তা বাহিনী রয়েছে।
সারাবাংলা/একেএম