Friday 11 Oct 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

পুলিশের আপত্তিতে চসিকের ৫৫ কাউন্সিলরের সংবর্ধনা বাতিল

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১২ মার্চ ২০২১ ২৩:৪৯

চট্টগ্রাম ব্যুরো: পুলিশের আপত্তির কারণে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নবনির্বাচিত ৫৫ কাউন্সিলরকে সংবর্ধনার অনুষ্ঠান হতে পারেনি। প্রথমে অনুমতি দিলেও আগের রাতে পুলিশের পক্ষ থেকে অনুষ্ঠান না করার মৌখিক নির্দেশনা দেওয়া হয়। কী কারণে হঠাৎ অনুষ্ঠান বন্ধ রাখার জন্য পুলিশ নির্দেশনা দিয়েছে, সে বিষয়ে আয়োজকরা কিছু জানাতে পারেনি।

এতে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা ছিল। তবে বর্তমান মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী সংবর্ধেয় বা অতিথির তালিকায় ছিলেন না। সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন যে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি, সে অনুষ্ঠান পুলিশ বন্ধ করে দেওয়া নিয়ে চট্টগ্রামে আলোচনা সৃষ্টি হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

শুক্রবার (১২ মার্চ) বিকেলে নগরীর পাঁচলাইশ থানার ষোলশহরে বিপ্লব উদ্যানে চসিকের ৪১ জন সাধারণ ও ১৪ জন সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলরকে সংবর্ধনা দেওয়ার কথা ছিল। ‘শহীদ মাহফুজ স্মৃতি সংসদ’ নামে একটি সংগঠন এই সংবর্ধনার আয়োজন করেছিল, প্রতিষ্ঠাতাকাল থেকে যার সভাপতি হিসেবে দায়িত্বে আছেন আ জ ম নাছিরের অনুসারী যুবলীগ নেতা ওয়াহিদুল আলম শিমুল।

জানতে চাইলে ওয়াহিদুল আলম শিমুল সারাবাংলাকে বলেন, ‘১৯৯৭ সালের ২৭ নভেম্বর চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার আগমন ঠেকাতে গিয়ে সন্ত্রাসীদের হামলায় নিহত হয়েছিলেন ছাত্রলীগ নেতা মাহফুজ। ওই মামলায় যুদ্ধাপরাধী সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীও অতিথি ছিলেন। আমরা শহীদ মাহফুজের নামে একটি সংগঠন করেছি এবং এর ব্যানারে প্রায় প্রতিমাসেই নানা কর্মসূচি আমরা করি। এবার আমরা চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নবনির্বাচিত কাউন্সিলরদের সংবর্ধনার আয়োজন করেছিলাম বিপ্লব উদ্যানে। প্রধান অতিথি করা হয়েছিল আমাদের সংগঠনের প্রধান পৃষ্ঠপোষক সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন ভাইকে।’

বিজ্ঞাপন

‘পুলিশ প্রশাসনের কাছ থেকে আমরা অনুষ্ঠানের অনুমতি নিই। সংবর্ধনা উপলক্ষে মঞ্চ তৈরি, সাজসজ্জা, কাউন্সিলর ও অতিথিদের দাওয়াতপত্র পাঠানো সবকিছু শেষ হওয়ার পর গত (বৃহস্পতিবার) পুলিশের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা আমাকে ফোন করে অনুষ্ঠান বন্ধ রাখতে বলেন। আমি কারণ জানতে চাইলে তারা কখনো উপরের নির্দেশ, আবার কখনো সিএমপি কমিশনার স্যারের নির্দেশ বা অনুরোধ- এমন কথা বলেছেন। যেহেতু পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আমরা রাতে ফোন করে অতিথি ও কাউন্সিলরদের অনুষ্ঠান বাতিলের বিষয়টি জানিয়ে দিই’, বলেন ওয়াহিদুল আলম শিমুল।

পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কাশেম ভূঁইয়া সারাবাংলাকে বলেন, ‘বিপ্লব উদ্যানে এ ধরনের কোনো অনুষ্ঠান আয়োজনের কথা আমার জানা ছিল না।’

জানতে চাইলে নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (উত্তর) বিজয় কুমার বসাক সারাবাংলাকে বলেন, ‘অনুষ্ঠানে অনুমতি দেয় সিটি এসবি (নগর বিশেষ শাখা)। তাদের সঙ্গে কথা বলে দেখতে পারেন।’

সিএমপির বিশেষ শাখার কোনো কর্মকর্তা নাম প্রকাশ করে কথা বলতে রাজি হননি। ঊর্দ্ধতন এক কর্মকর্তা সারাবাংলাকে বলেন, ‘উনারা ব্যাপক জনসমাগমের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কোভিড পরিস্থিতিতে আমরা সেটা অ্যালাউ করতে পারি না। সামনে জাতির জনকের জন্মবার্ষিকী, স্বাধীনতা দিবসের প্রোগ্রাম আছে। এর আগে আরেকটা প্রোগ্রাম আমরা চাইনি।’

জানতে চাইলে চসিকের ২১ নম্বর জামালখান ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমন সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের অনুষ্ঠানে দাওয়াত করা হয়েছিল কিন্তু পরে আবার জানানো হয়েছে পুলিশ হঠাৎ করে অনুষ্ঠান স্থগিত রাখতে বলেছে। তাদের আয়োজন অনেক বড় ছিল। ৫৫ জন কাউন্সিলর সংবর্ধনা দেওয়ার আয়োজন ছিল। তবে রেজাউল ভাইকে সেখানে অতিথি করা হয়নি। সম্ভবত সাবেক মেয়রকে প্রধান অতিথি করায় প্রটোকলের কারণে সেটা করা হয়নি।’

চসিকের কয়েকজন কাউন্সিলরের সঙ্গে কথা বলে জানান, ১৮ মার্চ প্যানেল মেয়র নির্বাচনকে সামনে রেখে আকস্মিকভাবে আ জ ম নাছির উদ্দীনকে প্রধান অতিথি করে ৫৫ জন কাউন্সিলরের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানকে অনেক কাউন্সিলরই ইতিবাচকভাবে নেননি। তারা ভেবেছিলেন, চসিকের প্যানেল মেয়র নির্বাচনকে সামনে রেখে একটি মেরকরণের আশায় ওই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এজন্য নাছিরের অনুসারী ছাড়া বাকি কাউন্সিলরদের অধিকাংশই ওই অনুষ্ঠানে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।

আয়োজক ওয়াহিদুল আলম শিমুল সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের কোনো রাজনৈতিক চিন্তা ছিল না। আমরা সম্ভবত রাজনৈতিক বিরোধিতার মধ্যে পড়েছি। আমরা বর্তমান মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীকেও সংবর্ধনার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে প্রধান অতিথি করে সেটা করার পরিকল্পনা করেছিলাম।’

সারাবাংলা/আরডি/এমও

কাউন্সিলরের সংবর্ধনা পুলিশের আপত্তি সংবর্ধনা বাতিল

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর