এক হাতেই সব ‘কারবার’ রুবেলের
১৩ মার্চ ২০২১ ২০:০০
চট্টগ্রাম ব্যুরো: দুর্ঘটনায় ডান হাত হারিয়েছিলেন আব্দুর শুক্কুর রুবেল। এক হাত নিয়েই প্লাস্টিক কারখানায় ১২ ঘণ্টা কাজ করেন তিনি। চট্টগ্রাম নগরীর একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে চুরির পর সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করে পুলিশ বলছে, সেই রুবেলই ওই দোকানে চুরি করেছেন। রুবেল জানিয়েছেন, ১২ ঘণ্টা পরিশ্রমের ধকল সইতে না পেরে একটি দোকান দেওয়ার টাকা সংগ্রহ করতেই তিনি চুরিতে নেমেছেন।
শুক্রবার (১২ মার্চ) রাতে নগরীর কোতোয়ালি থানার বলুয়ার দিঘীর পাড় এলাকা থেকে রুবেলকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
গ্রেফতার আব্দুর শুক্কুর রুবেল (২৪) কুমিল্লা জেলার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার উত্তর চান্দলা গ্রামের মৃত আমির হোসেনের ছেলে। বাসা চট্টগ্রাম নগরীর বাকলিয়া থানার অছি মিয়া রোডে মরিয়ম ভবনে।
কোতোয়ালি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আইয়ূব উদ্দিন সারাবাংলাকে জানান, গত বুধবার গভীর রাতে নগরীর কোরবানিগঞ্জ এলাকায় মেসার্স গোল্ডেন ক্যান নামে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে চুরি হয়। এ ঘটনায় ওই প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক মহিউদ্দিন আলম খোকন বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় মামলা দায়ের করেন। ওই মামলা তদন্তে নেমে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ভেতর ও সড়কে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে পুলিশ। ফুটেজে দেখা যায়, একজন যুবক ওই প্রতিষ্ঠানে ঢুকে চুরি করেছেন। তাকে শনাক্ত করে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতার রুবেলকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটি সেমিপাকা। রুবেল প্রতিষ্ঠানটির চালায় উঠে প্রথমে টিন ও বেড়া কাটে। এরপর লোহার সিলিং ধরে নিচে নামে। নগদ টাকা, পেন ড্রাইভসহ আরও বিভিন্ন সামগ্রী নিয়ে আবারও সিলিং ধরে চালায় উঠে বেরিয়ে যায়। সে জানিয়েছে, কয়েক বছর আগে কারখানায় দুর্ঘটনায় তার ডান হাত কনুই থেকে কেটে ফেলতে হয়। এক হাত নিয়েই কিন্তু সে এই চুরি সংঘটিত করেছে।’
গ্রেফতার রুবেল সাংবাদিকদের জানান, তিনি বলুয়ার দিঘীর পাড়ে একটি প্লাস্টিক কারখানায় দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে চাকরি করেন। তিনি বলেন, ‘আমাকে দিনে ১২ ঘণ্টা চাকরি করতে হয়। এক হাত নিয়ে এত পরিশ্রম করতে কষ্ট হয়। সেজন্য ভেবেছিলাম একটা দোকান দেবো। কিন্তু আমার কাছে টাকা নেই। দোকান দেওয়ার জন্য চুরি করতে নেমেছিলাম।’
রুবেল পুলিশের কাছে দাবি করেছেন, এর আগে তিনি আর কখনো চুরি করেননি। প্রথমবার চুরি করতে নেমেই তিনি ধরা পড়েছেন।
তবে এস আই আইয়ূব উদ্দিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘যদিও রুবেল আর কখনো চুরি করেননি বলে দাবি করছে, কিন্তু ওই এলাকায় গত কয়েকদিনে আরও কয়েকটি ছোটখাটো চুরি হয়েছে। সেগুলোর সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা আছে কি না, সেটা খতিয়ে দেখছি।’
শারীরিক প্রতিবন্ধকতা থাকায় গ্রেফতারের পর রুবেলকে সতর্কতার সঙ্গে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন এই পুলিশ কর্মকর্তা।
গ্রেফতার রুবেলকে শনিবার বিকেলে আদালতে হাজিরের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
সারাবাংলা/আরডি/টিআর