Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

জনকণ্ঠের চাকরিচ্যুত সাংবাদিকদের প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
১৬ মার্চ ২০২১ ১৫:১৩

ঢাকা: অন্যায়ভাবে চাকরিচ্যুত হওয়া জনকণ্ঠের সাংবাদিক-কর্মচারীরা চাকরি ফিরে পেতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করছেন। মঙ্গলবার (১৬ মার্চ) জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলন করে তারা প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ক্ষপ কামনা করেন।

এদিকে অন্যায়ভাবে চাকরিচ্যুত সাংবাদিকদের চাকরি ফিরিয়ে না দিলে জনকণ্ঠে আর কখনও কলাম লিখবেন না বলে ঘোষণা দিয়েছেন বিশিষ্ট সাংবাদিক ও কলামিস্ট আবদুল গাফফার চৌধুরী। এছাড়া আগামী ২০ মার্চ পর্যন্ত জনকণ্ঠের চাকরিচ্যুত সাংবাদিকদের আন্দোলন স্থগিত রাখার ঘোষণা এসেছে। এ সময়ের মধ্যে সমাধান না হলে ভবিষ্যতে আরও কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন সাংবাদিক নেতারা।

মঙ্গলবার প্রেস ক্লাবের সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে জনকণ্ঠের সিনিয়র রিপোর্টার ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের দৈনিক জনকণ্ঠ ইউনিট চিফ রাজন ভট্টাচার্য বলেন, ‘এখানে (জনকণ্ঠ) আমরা যারা কাজ করি তারা সবাই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আর্দশের সৈনিক ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী। আমাদের যেকোনো বিপদে-আপদে প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছে যাওয়া ছাড়া কোনো পথ খোলা নেই। করোনা মহামারির মধ্যে একসঙ্গে এত মানুষের কর্মসংস্থান আসলে সম্ভবও নয়। এই পরিপ্রেক্ষিতে আমরা আপনাদের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। তিনি আমাদের সহায়তা না করলে আমাদের পক্ষে আর কিছু করা সম্ভবও নয়। আমরা আশা করছি, তিনি আমাদের বিষয়টি অনুধাবন করে একটি ব্যবস্থা নেবেন।’

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ‘দৈনিক জনকণ্ঠে গণছাঁটাই শুরু হয়েছে। আমরা বেশ কিছুদিন ধরে শুনে আসছিলাম কর্তৃপক্ষ সাংবাদিক-কর্মচারীদের ছাঁটাই করতে চান। সোমবার তার প্রথম দফা বাস্তবায়ন হয়েছে। প্রথম দিন ৬০ জনের ছাঁটাইয়ের তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছিল। সকালে এর মধ্যে ২৬ জনকে টার্মিনেশন লেটার ই-মেইল করা হয়েছে। বিকেলে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের নেতৃত্বে দৈনিক জনকণ্ঠের সামনে সমাবেশ করে এই ঘটনার প্রতিবাদ করলে কর্তৃপক্ষ বাকিদের আর টার্মিনেশন লেটার দিতে সাহস করেননি।’

তিনি বলেন, ‘গত আট বছর ধরে দৈনিক জনকণ্ঠে কোনো পদোন্নতি, ইনক্রিমেন্ট হয় না। এখানে অধিকাংশ সাংবাদিক-কর্মচারী ওয়েজবোর্ড পান না। আট বছর ধরে একই বেতনে কাজ করতে গিয়ে আমাদের সংসার চলে না। আট বছর আমরা অপেক্ষা করেছি। এখন সকলের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সম্পূর্ণ নিয়মতান্ত্রিকভাবে ট্রেড ইউনিয়ন আইনের মধ্যে থেকে আমরা সকলের ওয়েজবোর্ড বাস্তবায়ন, পদোন্নতি ও ইনক্রিমেন্টের দাবি করেছিলাম। পরিতাপের বিষয় হচ্ছে দাবি মানা তো দূরের কথা, উল্টো আমাদের ছাঁটাই করে দেওয়া হলো।’

রাজন ভট্টাচার্য বলেন, ‘এই কাজটি করার জন্য এমন এটি সময় বেছে নেওয়া হয়েছে যখন গোটা জাতি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নিচ্ছে। যখন ঢাকা শহরে সবধরনের সমাবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এরপরও আমরা সোমবার জনকণ্ঠের সামনে সমাবেশ করেছি। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ এটি মেনে নিয়েছেন। এজন্য পুলিশ ভাইদের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।’

তিনি বলেন, ‘সোমবার আমরাও সকারের নানা মহলে যোগাযোগ করেছি। রাত ১২টায় আমরা ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি কুদ্দুস আফ্রাদ এবং সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম খান তপুর নেতৃত্বে স্বারাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে প্রায় দেড় ঘণ্টা বৈঠক করেছি। সেখান থেকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী-তথ্যমন্ত্রীর সঙ্গে একাধিকবার টেলিফোনে কথা বলেছেন। আমাদের বলা হয়েছে, আগামী ২০ তারিখ সরকার, মালিকপক্ষ এবং সাংবাদিক ইউনিয়ন ত্রিপক্ষীয় বৈঠক করে এ বিষয়ে একটি সমাধানে পৌঁছানোর চেষ্টা করবেন। আমরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং তথ্যমন্ত্রীর আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে ২০ তারিখ পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিত করেছি।’

এদিকে চাকরিচ্যুত সাংবাদিকদের চাকরি ফিরিয়ে না দিলে আর কখনও জনকণ্ঠে কলাম লিখবেন না বলে ঘোষণা দিয়েছেন বিশিষ্ট সাংবাদিক আবদুল গাফফার চৌধুরী। জনকণ্ঠের চাকরিচুত্য সাংবাদিকদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে লন্ডন থেকে পাঠানো এক চিঠিতে তিনি লিখেছেন, ‘সংবাদ পেলাম দৈনিক জনকণ্ঠ আবার পত্রিকার চল্লিশজনের মতো সাংবাদিক ও অন্যান্য স্টাফকে অন্যায়ভাবে বরখাস্ত করেছেন। তাদের অপরাধ- তারা তাদের ন্যায্য বেতন ভাতা দাবি করেছেন। এই দুর্দিনে পরিবার-পরিজন নিয়ে এই চাকুরিচ্যুত সাংবাদিকেরা এখন অনাহারের সম্মুখীন। এখন তারা এই অন্যায়ের প্রতিবাদে আন্দোলনে নেমেছেন এবং দেশের সাংবাদিক সমাজ তাদের বাঁচার লড়াইয়ে সমর্থন জানাচ্ছেন। আমি জনকণ্ঠে দীর্ঘকাল ধরে কলামিস্ট। পত্রিকাটির নীতি ও আদর্শের প্রতি আমি শ্রদ্ধাশীল। কিন্তু পত্রিকার কর্তৃপক্ষের এই অন্যায়ের প্রতিবাদ না জানিয়ে পারছি না। আমি আমার সংগ্রামী ভাইদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করছি এবং এই সিদ্ধান্ত জানাচ্ছি, তাদের প্রতি আচরিত দারুণ অন্যায়ের প্রতিকার অবিলম্বে করা না হলে জনকণ্ঠে আমি আর ভবিষ্যতে কলাম লিখব না।’

এর আগে সোমবার (১৫ মার্চ) সাংবাদিক-কর্মচারীদের ই-মেইলে টার্মিনেশন লেটার পাঠাতে থাকে জনকণ্ঠ কর্তৃপক্ষ। বিকেল থেকে ভবনটির সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন জনকণ্ঠের সাংবাদিক-কর্মচারী ও সাংবাদিক নেতারা। সন্ধ্যা থেকে রাস্তা অবরোধ করে আন্দোলন করতে থাকেন বিক্ষুব্ধরা। পরে রাত একটার দিকে আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা আসে। প্রায় শ’খানেক সাংবাদিক-কর্মচারীদের চাকরিচুত্য করার কথা বলা হলেও জনকণ্ঠ কর্তৃপক্ষ আনুষ্ঠানিকভাবে জানায়, তারা ২৬ জনকে চাকিরচুত্য করতে বাধ্য হয়েছেন।

সারাবাংলা/ইএইচটি/পিটিএম

জনকণ্ঠ টপ নিউজ সংবাদ সম্মেলন সাংবাদিক ছাঁটাই


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর