Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

চট্টগ্রামে জন্মদিনে বঙ্গবন্ধুকে গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১৭ মার্চ ২০২১ ১৪:০৬

চট্টগ্রাম ব্যুরো: যে চট্টগ্রামে লালদিঘীর ময়দান থেকে ছয় দফার ঘোষণা দিয়ে স্বাধীনতার সংগ্রামকে প্রকাশ্যে এনেছিলেন, ধাপে ধাপে সেই আন্দোলনকে চূড়ান্ত রূপ দিয়ে যিনি জাতিকে মুক্তিযুদ্ধে নিয়ে গিয়েছিলেন, সেই ক্ষণজন্মা ‍পুরুষ, বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করছে বন্দরনগরীর আপামর মানুষ।

১০১তম জন্মবার্ষিকীর দিনে বুধবার (১৭ মার্চ) সকালে চট্টগ্রামের বিভিন্ন সরকারি অফিসে, রাজনৈতিক-সামাজিক বিভিন্ন সংগঠনের কার্যালয়ে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে চট্টগ্রামের সরকারি অফিস-আদালত, বিভিন্ন ভবনে আলোকায়ন করা হয়েছে। ৭ মার্চের সেই কালজয়ী ভাষণ, মুক্তিযুদ্ধের গান, সভা-সমাবেশ-শোভাযাত্রা, ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতাসহ নানান আয়োজনে স্মরণ করা হচ্ছে জাতির জনককে।

বিজ্ঞাপন

সকালে চট্টগ্রামের শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণে স্থাপিত বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আনোয়ার হোসেন, সিএমপি কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর, বিভাগীয় কমিশনার এবিএম আজাদ, জেলা প্রশাসক মোমিনুর রহমান, পুলিশ সুপার রাশেদুল হকসহ প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।

শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বিভাগীয় কমিশনার এবিএম আজাদ বলেন, শিশুদের সামনে বঙ্গবন্ধুর জীবনাদর্শ তুলে ধরতে হবে। কারণ আগামী দিনে তারাই একেকজন যাতে নিজেদের বঙ্গবন্ধুর মতো করে গড়ে তুলতে পারেন। আমাদের জাতির পিতার আজীবন লালিত স্বপ্ন এই বাংলার মানুষের মুক্তি। তার প্রথম স্বপ্ন ছিল রাজনৈতিক মুক্তি। সেই মুক্তি তিনি আমাদের দিয়েছেন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে, নিজে ১৩-১৪ বছর জেলখানায় অমানুষিক কষ্ট সহ্য করে। এরপর অর্থনৈতিক মুক্তি। দুর্ভাগ্যজনকভাবে সেটা আমরা উনার নেতৃত্বে করতে পারিনি। এদেশের একদল দুষ্টচক্র তাঁকে হত্যা করায় আমরা পারিনি। বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে অর্থনৈতিক মুক্তিতে তিনি নেতৃত্ব দিতেন। কিন্তু তিনি আমাদের সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন দেখিয়ে গেছেন এবং কাজ শুরু করে দিয়ে গেছেন।’

বিজ্ঞাপন

‘কিন্তু বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাত্র ১০-১১ বছর নেতৃত্ব দিয়ে আমাদের উন্নয়নশীল দেশের কাতারে পৌঁছে দিয়েছেন। এরপর আমাদের দ্বিতীয় স্বপ্ন হচ্ছে ২০৪১ সালে একটি সমৃদ্ধ দেশ। এর আগে ২০৩০ সালের মধ্যে আমরা একটি উন্নত দেশে পরিণত হওয়া। এর জন্য প্রয়োজন সঠিক নেতৃত্ব। আমরা মনে করি, আমরা যদি নিজেরা-নিজেরা কোন্দলে লিপ্ত না হই, তাহলে জাতির জনকের কন্যার নেতৃত্বে আমরা নিশ্চয় একটি সমৃদ্ধশালী দেশের দিকে এগিয়ে যাব দুর্বার গতিতে। স্বপ্ন বাস্তবায়নের রূপরেখা আমাদের সামনে পরিস্কার। স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যও আমাদের সামনে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। আমাদের অঙ্গীকার হোক, আগামী প্রজন্মের জন্য আমরা প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি সমৃদ্ধশালী দেশ গঠনে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে যাব।’ বলেন বিভাগীয় কমিশনার।

চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মোমিনুর রহমান বলেন, ‘যে দেশকে তিনি স্বাধীন করেছেন, সেই দেশের ঘাতকরা তাঁকে নির্মমভাবে হত্যা করতে পারে, তিনি এটা ঘূর্ণাক্ষরেও বুঝতে পারেননি। আমরা এখন ভিআইপি সিকিউরিটি, ভিভিআইপি সিকিউরিটি- নানা ধরনের সিকিউরিটি দেখি রাষ্ট্রপ্রধানসহ ভিআইপিদের জন্য। বঙ্গবন্ধু কিন্তু তাঁর ৩২ নম্বরের বাড়িতে কোনো সিকিউরিটি নিয়ে বসবাস করতেন না। যে দেশকে তিনি স্বাধীন করেছেন, যে দেশের তিনি জাতির পিতা, সেই দেশের কেউ তাকে হত্যা করতে পারেন এটা তিনি কখনও ভাবেননি। সেজন্য যারা তাকে হত্যা করতে গিয়েছিল, তাদের তিনি বলেছিলেন- এই তোরা কারা ? বঙ্গবন্ধু আমাদের রাজনৈতিক স্বাধীনতা দিয়েছেন, অথনৈতিক স্বাধীনতার সূচনাও তিনি করে গিয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত কাজ শুরু করেছেন।’

এর আগে সিএমপি কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর এবং জেলা পুলিশ সুপার রাশেদুল হক নিজ নিজ কার্যালয়ে সহকর্মীদের নিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।

এদিকে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে জাতির জনকের জন্মদিন উদযাপন করা হয়েছে। এতে শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান প্রদীপ চক্রবর্তী বলেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শে উজ্জীবীত হয়ে স্বপ্নের সোনার বাংলা নির্মাণের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে বাংলাদেশ। শুধু বাংলাদেশ নয়, পৃথিবীর অনেক দেশের সরকার প্রধানরা আজ বঙ্গবন্ধুর রাষ্ট্রদর্শন অনুসরণ করছেন। সংকটে, সংগ্রামে প্রেরণার নাম বঙ্গবন্ধু।

কলেজ পরিদর্শক জাহেদুল হকের সভাপতিত্বে ও উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক নারায়ণ নাথের সঞ্চালনায় সভায় আরও বক্তব্য রাখেন শিক্ষাবোর্ডের সচিব আবদুল আলীম, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক নারায়ণ চন্দ্র নাথ, বিদ্যালয় পরিদর্শক বিপ্লব গাঙ্গুলি, উপ-সচিব মোহাম্মদ বেলাল হোসেন।

চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়েও বঙ্গবন্ধুর ১০১ তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন করা হয়েছে। এ উপলক্ষে আয়োজিত সেমিনারে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ইসমাইল খান বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর নীতি-আদর্শ, দেশপ্রেম অনুসরণ করলেই তাঁকে প্রকৃতভাবে শ্রদ্ধা জানানো হবে। আমরা আমাদের কর্মে ও চেতনায় সেটার প্রতিফলন করতে পারলেই দেশের প্রতি দায়িত্ব পালন করা হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ধারণ লালন ও কর্মক্ষেত্রে প্রতিফলন করার মাধ্যমে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।’

আলোচনায় আরও অংশ নেন বিআইটিআইডি এর পরিচালক অধ্যাপক ডা. এম এ হাসান, চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দেলোয়ার হোসেন, পরিচালক (অর্থ) মাসুদুর রহমান, ভারপ্রাপ্ত রেজিস্টার হাসিনা নাসরিন, উপ-পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) বিদ্যুৎ বড়ুয়া।

সারাবাংলা/আরডি/এএম

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর