নওগাঁ বিশ্ববিদ্যালয়— স্থান নিয়ে জটিলতা কাটেনি, একাডেমিক কার্যক্রমের দেখা নেই
৪ নভেম্বর ২০২৪ ০৮:০৫ | আপডেট: ৪ নভেম্বর ২০২৪ ০৪:১৪
নওগাঁ: নওগাঁবাসীর দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা পূরণের ঘোষণা এসেছিল গত বছরের শুরতেই। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয় বিল পাস হওয়ার মধ্য দিয়ে দেশের উত্তরাঞ্চলের এই জেলার বাসিন্দাদের নিজ জেলাতেই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্ন পূরণের সুযোগ দোরগোড়ায় চলে আসে।
এরপর পার হতে চলে প্রায় দুই বছর। কিন্তু সেই স্বপ্ন আর পূরণ হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হয়েছে নামেই। উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া হলেও একাডেমিক কার্যক্রমের কোনো আভাসই নেই এখনো। শহরে একটি ভবন ভাড়া করে দাফতরিক কার্যক্রম চললেও বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের জায়গা নিয়েই কাটেনি জটিলতা।
বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের জন্য সংসদে আইন পাস হলেও তা বাস্তবায়নের এমন ধীরগতিতে এলাকাবাসীর মধ্যে হতাশা ভর করেছে। তাদের চাওয়া, বিশ্ববিদ্যায়টির কার্যক্রম কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ না রেখে বাস্তবে কার্যকর করা হোক।
নওগাঁবাসীর একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবি দীর্ঘদিনের। ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগের এক জনসভায় ওই সময়কার প্রধানমন্ত্রী (বর্তমানে ক্ষমতাচ্যুত) শেখ হাসিনা নওগাঁয় একটি পূর্ণাঙ্গ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দেন। তবে সেই প্রতিশ্রুতি রাতারাতিই আলোর মুখে দেখেনি।
নথিপত্র বলছে, প্রতিশ্রুতির চার বছর পর বিশ্ববিদ্যালয়টি আলোর মুখ দেখার প্রক্রিয়া শুরু করে। ২০২২ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি মন্ত্রিসভা ওই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বিলের খসড়ায় অনুমোদন দেয়। এরও প্রায় এক বছর পর ২০২৩ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদে পাস হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয় বিল। নওগাঁয় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের সব বাধা এর মধ্য দিয়ে কেটে যায়।
বিল পাসের চার মাস পর ৮ জুন রাষ্ট্রপতির অনুমোদনে ড. আবুল কালাম আজাদকে প্রথম উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় এই বিশ্ববিদ্যালয়ে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সূত্র ধরে ক্ষমতার পালাবদলের পর গত ৭ অক্টোবর এই বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন উপাচার্য হিসেবে যোগ দিয়েছেন ড. মো. হাছানাত আলী।
উপাচার্য ছাড়াও কয়েকজন কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়েছে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে। এর বাইরে বিশ্ববিদ্যালয়ের আর কোনো কার্যক্রম নেই বললেই চলে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব অবকাঠামো কোন স্থানে গড়ে তোলা হবে, তা নিয়ে জটিলতা কাটেনি। স্থানই নির্ধারণ করা যায়নি এখন পর্যন্ত। এ অবস্থায় প্রায় কোনো কার্যক্রমেই না থাকা বিশ্ববিদ্যালয়টির দাফতরিক কাজ শহরের বালুডাঙ্গা এলাকায় ভাড়া নেওয়া একটি ভবনে কোনোমতে পরিচালনা করা হচ্ছে।
এদিকে উপাচার্য চলতি শিক্ষাবর্ষে একাডেমিক কার্যক্রম চালুর বিষয়ে কথা বলেছেন। তবে বাস্তবে এর সম্ভাবনা ক্ষীণ বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। কারণ উচ্চ মাধ্যমিকের ফলাফল প্রকাশ হয়ে গেলেও একাডেমিক কার্যক্রম শুরু করার জন্য যে প্রস্তুতি প্রয়োজন, তার কোনোটিই এখন পর্যন্ত নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ভবন তো দূরের কথা, পাঠদানের মতো নিজস্ব শিক্ষক নিয়োগ তো দূরের কথা, পর্যন্ত নেই।
শিক্ষাবিদসহ স্থানীয় শিক্ষার্থী ও বাসিন্দারা বিশ্ববিদ্যালয় পেয়েও এর কার্যক্রমের শ্লথ গতি নিয়ে স্পষ্টতই হতাশা জানিয়েছেন। তারা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষা কার্যক্রম চালু হলে নওগাঁ জেলার শিক্ষার্থীদের জন্য উচ্চ শিক্ষার নতুন দ্বার উন্মোচন হবে। এর আশপাশের জেলাগুলোর অনেক শিক্ষার্থীর জন্যও তৈরি হবে নতুন সুযোগ। শুধু তাই নয়, বিশ্ববিদ্যালয় ঘিরে নওগাঁর অর্থনীতিতে নতুন গতি সঞ্চার হবে। সব সম্ভাবনাই থমকে রয়েছে এটি কোনো কার্যক্রমে না থাকায়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম শুরু না হওয়ায় স্থানীয় শিক্ষার্থীরা ক্ষোভ জানাচ্ছেন। নওগাঁ সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীরা মুনিরুল ইসলাম বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরু হলে উচ্চ শিক্ষার জন্য আমাদের আর বাইরে কোথাও যেতে হবে না। তাতে আমাদের জেলার বা আশপাশের জেলাগুলোর অসচ্ছল বা প্রান্তিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের অনেক উপকার হবে। কিন্তু যে অবস্থা, তাতে মনে হয় না আমরা কেউ এখানে পড়ার সুযোগ পাব। বাধ্য হয়ে এলাকা ছাড়তে হবে।’
আরেক শিক্ষার্থী গোলাম রাব্বানী রিপন বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে গেছে, সে প্রায় দুই বছর হতে চলল। কিন্তু এখন পর্যন্ত এর কোনো কার্যক্রমই চোখে পড়েনি। না কোথাও কোনো ভবন হচ্ছে, তা শুরু হয়েছে পড়ালেখা। এটা নামেই শুধু বিশ্ববিদ্যালয়।’
নওগাঁ সরকারি কলেজের উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক মোজাফ্ফর হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন পাওয়ার পর নওগাঁবাসী আশান্বিত ছিল যে এখান থেকে শিক্ষার্থীরা উচ্চ শিক্ষার সুযোগ পাবে নিজ জেলায় বসেই। তবে এখন পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো কার্যক্রম নেই। আমাদের প্রত্যাশা, প্রতিবন্ধকতা যাই থাকুক, সব কাটিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টি দ্রুত কার্যক্রমে আসুক। কারণ একটি বিশ্ববিদ্যালয় কেবল এলাকার শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার সুযোগই করে দেয় না, গোটা এলাকার চিত্রেই পালটে দিতে সক্ষম হয়।’
জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়টির নবনিযুক্ত উপাচার্য ড. মো. হাছনাত আলী বলেন, আমি মাত্রই এখানে কাজে যোগ দিয়েছি। সবটুকু বুঝে ওঠার চেষ্টা করছি। কিছু সীমাবদ্ধতা তো রয়েছেই। তারপরও ইউজিসির (বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন) কাছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর জন্য আবেদন করেছি। আশা করছি ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষেই শিক্ষা কার্যক্রম চালু করা সম্ভব হবে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রমে গতি আনতে উপাচার্য নওগাঁবাসীর সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেছেন।
সারাবাংলা/এমপি
ইউজিসি নওগাঁ নওগাঁ বিশ্ববিদ্যালয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান