শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের বর্ষপূর্তি: কী ভাবছেন শিক্ষার্থীরা?
১৯ মার্চ ২০২১ ১০:১৮
ঢাকা: করোনার টালমাটাল সময়ে টানা এক বছর ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। দেশের সব স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের এক বছর পূর্ণ হলো আজ শুক্রবার (১৯ মার্চ)। এই দীর্ঘসময় পড়াশোনা ও বন্ধু-বান্ধব থেকে বিচ্ছিন্ন শিক্ষার্থীরা। হাতে-কলমের শিক্ষা আবদ্ধ হয়েছে অনলাইনের মোবাইল-ল্যাপটপে। চলছে অনলাইনে পরীক্ষা আবার, সম্প্রতি পরীক্ষার জন্য আন্দোলনও হয়েছে। এই দীর্ঘ সময় কিভাবে কেটেছে? সময়টুকু কিভাবে কাজে লাগিয়েছে শিক্ষার্থীরা সেসব কথা জানার চেষ্টা করেছেন নিফাত সুলতানা মৃধা।
বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থী জুনাইদ আল হাবিব বলেন, ‘ক্যাম্পাস থেকে ফিরেছি সেই কবে! এরপর আর ক্যাম্পাসে ফেরা হয়নি। কলেজ থেকে ভার্সিটিতে ক্লাস শুরু করলাম মাত্রই। নতুন বন্ধু-বান্ধব পেলাম। তাদের সঙ্গে সম্পর্কটা খুব ঘনিষ্ঠ হওয়ার আগেই করোনা আমাদের দূরে ঠেলে দিল। মেসেঞ্জারে হয়তো অনেকের সঙ্গেই কথা হয়। কিন্তু তেমন দেখাদেখি হয় না। এ সময়টাতে এক প্রকার মোবাইল আসক্ত হয়ে পড়ছি। অবসরে সময় কাটানোর জন্য ফেসবুকের নিউজফিডটা খুবই টানে। যদিও আমার গল্পটা আরেকটু ব্যতিক্রম। সামাজিক কাজ করেছি অনেক। লেখালেখি করেছি খুব। কিছু বই পড়াও হলো। এর বাইরেও বিভিন্ন ভিডিও রিপোর্ট করেছি। ডকুমেন্টারি করেছি।
এতো কিছুর পরেও একটা শূন্যতার জায়গা তৈরি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন হাবিব। তিনি আরও বলেন, নিজের যোগ্যতা, দক্ষতা, ক্যারিয়ারের চেয়ে পড়াশোনাতে পিছিয়ে পড়ছি। যে ছেলেটা সামনে স্নাতক তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষা দিতো, সে এখনো প্রথম বর্ষের পরীক্ষাটা দিতে পারে নাই। আর ক্লাসে আসা-যাওয়া না হলে, শিক্ষকদের সান্নিধ্যে না আসলে, পড়াশোনার প্রতি এক ধরনের আগ্রহ মরে যায়। যেটা আমার কাছে একটি জাতীয় সমস্যা বলেই মনে হয়। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, সবই চলছে। আমাদের বেলায় আসলে ক্যাম্পাস খোলা উচিত নয়, নানান বাহানা। এ পরিস্থিতি থেকে দ্রুতই মুক্তি পেতে সমাধান খোঁজা জরুরি। নাহলে একটা প্রজন্ম মেধা শূন্য যেমনটা হবে, তেমনি ধ্বংস হবে।
শিক্ষার্থী মামুন সোহাগ বলেন, বন্ধুরা কেউ কাউকে ঠিকমতো বিদায় বলেও যেতে পারেনি। টানা এক বছরের বেশি সময় বন্ধ থাকবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, এটা কখনো কল্পনাও করিনি। দিনের পুরো সময় কলেজে আনন্দ উৎসব করতাম। ক্লাস-আড্ডায় সময় কাটতো। সেখানে এখন ঘুমে সময় কাটে। ভুলে যাচ্ছি ক্লাসে বসে ক্লাস করার আনন্দ। এর মধ্যে পড়াশোনা জীবন নিয়ে চিন্তা তো আছেই। সবমিলিয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাসটুকু নেই। তাই চাওয়া পৃথিবী শান্ত হোক। আবারও ক্যাম্পাসে বন্ধুদের নিয়ে একসঙ্গে হাসবো, গাইবো, টেকনাফ-তেতুলিয়া ট্যুর দেব।
লেখাপড়া নিয়ে একটা আশঙ্কা থাকার পাশাপাশি প্রায় সব শিক্ষার্থীই কথা বলার সময় আবেগী হয়েছেন ক্যাম্পাসের বন্ধু-বান্ধব নিয়ে। শারমিন সুলতানা আফরিন নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, লকডাউনের সময়টা ভোলার মতো না। মনে হয়েছে প্রতিনিয়ত মৃত্যু হাতছানি দিয়ে ডাকছে। বন্ধু-বান্ধব আত্মীয় স্বজনের দেখাটা পাবো এই আশাও ফিঁকে হয়ে যাচ্ছিল। পড়াশোনা লেশমাত্রও হয়নি। ক্যাম্পাসে বান্ধবীদের প্রতিনিয়ত মিস করতাম। ক্যাম্পাসের অলিগলি মনের ক্যানভাসে ভাসতো। স্যার-ম্যামদের ক্লাস আড্ডা আর হৈ হুল্লোড় এই স্মৃতিগুলো প্রতিনিয়ত তাড়া করে বেড়াত। আস্তে আস্তে পরিবেশ শান্ত হলেও শান্ত হয়নি মন। এক বছর ক্লাস করতে পারি না। এখন একটায় আশা, ক্যাম্পাস খু্লবে। সহপাঠীরা একসঙ্গে হবো। নিত্যদিনের মতো আড্ডা হবে।
মাহমুদা হক মনিরা বলেন, সত্যি বলতে ক্লাস, বন্ধুদের আড্ডা ছাড়া সময়টা একদমই কাটছে না। তাছাড়া পড়াশোনার চাপ না থাকায় পড়ার দিকে মনোযোগও কম। এটা আমাদের জন্য এক বিরাট ক্ষতি।
সারাবাংলা/এএম