বিবর্ণ সময়েও জাগুক বইয়ের উৎসব
১৯ মার্চ ২০২১ ১৯:০১
ঢাকা: গত এক বছরে নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড ১৯) মহামারি আকারে ছড়িয়েছে গোটা দুনিয়ায়। এই ভাইরাস থমকে দিয়েছে জীবনযাত্রার নানা ছন্দকে। ভাইরাসের কবলে পড়ে ভাই হারিয়েছে তার বোন, বোন হারিয়ে ভাই, মা-বাবা হারিয়েছে সন্তান, সন্তান হারিয়েছে প্রিয় বাবা-মাকে। মৃত্যুর মিছিল বয়ে বেড়াতে বেড়াতে এই পৃথিবী হয়েছে বিবর্ণ, ধূসর। তাই বলে থেমে থাকা আর কতকাল, কতদিন?
বিবর্ণ পৃথিবীর বিরূপ রং-রূপকে উপেক্ষা করে একসময় তো উৎসবে শামিল হতেই হয়। এই বোধ থেকেই এবার বোধহয় শুরু হয়েছে বাংলা একাডেমি আয়োজিত অমর একুশে বইমেলা। মৃত্যু-জরা-ব্যাধি তো থাকবেই তাই বলে উৎসবে কেন শামিল নয়!
গতবারের চেয়ে এবারের বইমেলা আলাদা বাস্তবতায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে। করোনাভাইরাসের কারণে মেলার পরিসর বেড়েছে, মানতে হচ্ছে স্বাস্থ্যবিধি। মেলার প্রবেশমুখে তাপমাত্রা পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বাধ্যতামূলক করা হয়েছে হ্যান্ডস্যানিটাইজার ব্যবহার। এতকিছুর পরও শঙ্কা রয়েছে লোকসমাগম নিয়ে, বেচাবিক্রি নিয়ে।
শুক্রবার ছিল মেলার দ্বিতীয় দিন। ছুটির দিন হওয়ায় সকাল ১১টা থেকে সর্বসাধারণের জন্য মেলা প্রাঙ্গণ খুলে দেওয়া হয়। মেলায় আসা দর্শনার্থীদের টুকিটাকি আনাগোনা থাকলেও এখনও বিক্রি ওভাবে জমে ওঠেনি। বড় বড় প্যাভিলিয়নগুলোতে টুকিটাকি বেচাকেনা শুরু হলেও ছোট ছোট স্টলের ক্রেতাদের মুখ মলিন। কারও কারও আশঙ্কা করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে এবার বেচাকেনায় ভাটা পড়বে।
জোয়ার-ভাটা যাই-ই আসুক না কেন মেলা তো শুরু হয়েছে। বিবর্ণ সময়কে কটাক্ষ করে চাঞ্চল্যে ভরপুর হয়ে উঠছে প্রাণের বইমেলা। প্রতিকূল সময়কে পেছনে ফেলে মেলার উদ্দেশ্য পূরণ হবে এমনটি আসা প্রকাশক কিংবা স্টল মালিকদের।
মেলায় শুক্রবার দুপুরে বই কিনতে এসেছিলেন সাংবাদিক জাকির হোসেন আজাদী। তিনি বলেন, ‘করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ গত কয়েকদিনের তুলনায় বেড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে মেলা হবে কি হবে না সংশয় ছিল। তবে সব শঙ্কা দূরে ফেলে এবার সত্যি সত্যি মেলা হচ্ছে।’
জাকির আরও বলেন, ‘মেলায় এসে ভালো লাগছে তবে লোকজনের উপস্থিতি কম দেখতে পাচ্ছি। আশা করি মেলায় উপস্থিতি বাড়বে, বেচাকেনাও বাড়বে।’
করোনাভাইরাসের কারণে গত বছরে প্রকাশকরা ছিলেন লোকসানের মুখে। এই বইমেলায় সেই লোকসান কাটিয়ে ওঠার আলো জ্বেলেছে। মেলায় বেচাকেনার মাধ্যমে করোনার ক্ষত কিছুটা হলেও লাঘব হবে বলে আশা সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে গ্রাফোসম্যানের বিক্রয়কর্মী আবদুর রহমানের। তিনি বলেন, ‘এখনও বেচাকেনা শুরু হয়নি, আশা করি বাড়বে।’
মেলায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৭ নম্বর স্টলে বিক্রয়কর্মী হিসেবে কাজ করছেন মেরিনা ইব্রাহীম। তিনি বলেন, ‘মেলার প্রথম দিকে বেচাকেনা কম থাকে। দুই-একদিন পর বেচাকেনা আরম্ভ হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সুবিধা-অসুবিধা থাকবেই, তাই বলে কি উৎসব থেকে থাকবে? প্রাণের উৎসব এই বইমেলা আগের মতোই সফল হবে।’
বইমেলার স্টলগুলো সাজগোছ শুরু করলেও লিটল ম্যাগাজিন প্রাঙ্গণ এখন জমে ওঠেনি। অধিকাংশ স্টল ফাঁকা দেখে গেছে। স্টলে বসেছিলেন চিহ্ন পত্রিকার বিক্রয়কর্মী আল-আমিন। মেলার সার্বিক অবস্থা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘সময়টা আসলে অস্বাভাবিক।’
লিটল ম্যাগাজিন দেশলাইয়ের সম্পাদক রাহুল হরিৎ বলেন, ‘বই মেলা হচ্ছে না, এটি হচ্ছে পুলিশ মেলা। মেলায় স্বতস্ফূর্ততা নেই। সব নিয়তিতে হচ্ছে, মেলায় কোনো প্রাণ নেই।’
মেলায় প্রকাশ পেয়েছে লেখক জামশেদ নাজিমের কবিতার বই জোছনার কফিন। প্যাভিলিয়ন-৫ এ শুক্রবার উপস্থিত ছিলেন তিনি। মেলার আয়োজন সম্পর্কে জামশেদ নাজিম বলেন, ‘মেলা হচ্ছে। আশা করি মেলা ভালো হবে। তবে অব্যবস্থাপনা আছে। সে সব অব্যবস্থাপনা দূর করার উদ্যোগ নিতে হবে।’
সারাবাংলা/একে
অমর একুশে বইমেলা নভেল করোনাভাইরাস বইমেলা ২০২১ বইমেলার আয়োজন বাংলা একাডেমি