হাইব্রিড সামলান, আওয়ামী লীগের প্রতি মোমেন
২১ মার্চ ২০২১ ২১:৩৮
চট্টগ্রাম ব্যুরো: বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে এসে মৌলবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করাকে দুর্ভাগ্যজনক হিসেবে মন্তব্য করেছেন একুশে পদকপ্রাপ্ত কবি ও সাংবাদিক আবুল মোমেন। তিনি দলের ভেতরে হাইব্রিডদের বিষয়ে সচেতন হওয়ার জন্য আওয়ামী লীগ নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
সুনামগঞ্জের শাল্লায় ধর্মীয় সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর বাড়িঘরে হামলা-লুটপাটের প্রতিবাদে রোববার (২১ মার্চ) বিকেলে চট্টগ্রাম নগরীর চেরাগি চত্বরে আয়োজিত ‘নাগরিক মানববন্ধনে’ আবুল মোমেন এসব কথা বলেন। ‘রুখো সাম্প্রদায়িকতা, রুখো মৌলবাদ, জাগাও বিবেক’ স্লোগানকে সামনে রেখে ‘সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী তরুণ উদ্যোগ’ এ মানববন্ধনের আয়োজন করে।
আবুল মোমেন বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধে আমরা অংশ নিয়েছিলাম জাতি-ধর্ম-বর্ণ এবং নারী-পুরুষ নির্বিশেষে। সেই লড়াইয়ের ফসল বাংলাদেশ। অসাম্প্রদায়িক উত্তরাধিকার বহন করে বাংলাদেশের জন্ম। বঙ্গবন্ধু এমন একটি সংবিধান করেছিলেন যাতে ধর্মের ভিত্তিতে রাজনীতি হওয়ার কথা ছিল না। কিন্তু, এখন সবচেয়ে বেশি বলতে হয় ধর্মের কথা। আমাদের অত্যন্ত দুর্ভাগ্য বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে এসে আমাদের দাঁড়াতে হচ্ছে মৌলবাদের বিরুদ্ধে। বাংলাদেশ চিরকাল ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লড়াই করেছে।’
অর্থনৈতিক অগ্রগতি হলেও আদর্শিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশ পিছিয়ে গেছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘আমরা এমন বাংলাদেশ চেয়েছিলাম যেখানে সংখ্যালঘু বলে কেউ বঞ্চনার শিকার হবে না। কোনো মানুষ বঞ্চনার শিকার হবে না। অথচ সেই সমাজ-রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ের প্রতিষ্ঠানগুলো আজ সঠিকভাবে পরিচালিত হচ্ছে না, এটা অত্যন্ত দুঃখের বিষয়। খোদ সরকারি দলের সাধারণ সম্পাদক বলেছেন তার দলে হাইব্রিডের কথা। তিনি যাদের হাইব্রিড বলছেন তাদের বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে।’
সভাপতির বক্তব্যে বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী নুরুল আবছার বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর কথা আজ বারবার চলে আসে। যে বাঘা যতীনের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখেছিলেন সেই বাঘা যতীনের ভাস্কর্য কে ভাঙল? দিরাই শাল্লা নাসিরনগরে কারা হামলা করল? তারা কারা? কেন এসব হামলায় সরকারি দলের লোকের নাম আসে? শাল্লার ঘটনায় দেড় হাজার লোককে কেন আসামি করা হলো?এতে প্রকৃত অপরাধীরা তো পার পেয়ে যাবার আশঙ্কা থাকে।’
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি চট্টগ্রাম জেলার সাধারণ সম্পাদক অশোক সাহা বলেন, ‘যাদের হাতে রাষ্ট্রক্ষমতা তাদের আশ্রয়েই এসব ঘটনা ঘটছে। রাজনীতির সাথে ধর্ম মেশালে এমন ঘটনা ঘটে। ক্ষমতায় থাকতে যাকে তাকে কোলে তুলে নিলে মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ থাকবে না। আজ কম্পিটিশন চলে পশুশক্তিকে কে বেশি আদর করতে পারে। এই বাংলাদেশ আমরা চাইনি।’
বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর যারা আপনাদের দলে ঢুকেছে তাদের চিহ্নিত করে বহিস্কার করুন। ডিজিটাল আইনে বিভ্রান্তিকর ওয়াজকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন।’
ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির চট্টগ্রামের সভাপতি দেলোয়ার মজুমদার বলেন, ‘মামুনুল হক বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভেঙে দেবে বলার পরও সারাদেশে ওয়াজ করে বেড়াচ্ছে। নারী বিদ্বেষী সাম্প্রদায়িক ওয়াজ যারা করছে তাদের বিরুদ্ধে ৫৭ ধারা নেই। এই বাংলাদেশ তো আমরা চাইনি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, দয়া করে নিজের দলের দিকে তাকান। সাম্প্রদায়িক লোকে দল ভরে গেছে। বঙ্গবন্ধুর কন্যা যদি বঙ্গবন্ধুর আদর্শে না থাকেন, দেশ পরিচালনা না করেন, তাহলে আমরা বঙ্গবন্ধুর কন্যার বিরুদ্ধে দাঁড়াতে দ্বিধা করব না।’
উদীচী চট্টগ্রামের সংগঠক শীলা দাশগুপ্ত বলেন, ‘ধর্মীয় পরিচয়ের কারণে শুধু হামলার শিকার হচ্ছে তাই নয়, রাষ্ট্রও ডিজিটাল আইনের ফাঁদে ফেলে নির্যাতন করছে। সত্য বললে ডিজিটাল আইনে মামলা হয়। শাল্লার ঘটনার পর পুলিশ বলছে, হামলাকারীদের আমরা মানা করেছি। এটা কেমন কথা? সর্বত্র সাম্প্রদায়িক শক্তির আস্ফালন। ঘর না গোছালে সে আক্রমণ সবার উপর হতে পারে।’
সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী তরুণ উদ্যোগের যুগ্ম আহ্বায়ক ইউসুফ সোহেলের সঞ্চালনায় সমাবেশে সংহতি জানিয়ে আরও বক্তব্য রাখেন নারীনেত্রী নুরজাহান খান, উদীচী চট্টগ্রামের সংগঠন বীর মুক্তিযোদ্ধা অমল কান্তি নাথ, কবি ও সাংবাদিক ওমর কায়সার, চবি শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি ড. বেণু কুমার দে বলেন, জনস্বাস্থ্য অধিকার রক্ষা পরিষদের সদস্য সচিব ডা.সুশান্ত বড়ুয়া, খেলাঘর চট্টগ্রাম মহানগরী কমিটির সহসভাপতি কবি আশীষ সেন, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক আহমেদ মুনির, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ওমর ফারুক রাসেল, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড চট্টগ্রামের আহ্বায়ক শাহেদ মুরাদ সাকু, কেন্দ্রীয় কমান্ডের সদস্য সরওয়ার আলম চৌধুরী মনি, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের প্রচার সম্পাদক আলীউর রহমান, তরুণ উদ্যোগের যুগ্ম আহ্বায়ক প্রীতম দাশ, আবৃত্তি শিল্পী সাংবাদিক অনুপম শীল, ছাত্র ইউনিয়ন চট্টগ্রাম জেলার সভাপতি এ্যানি সেন, চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি মাহমুদুল করিম, মহসীন কলেজ ছাত্রলীগের যুগ্ম আহবায়ক মায়মুন উদ্দিন মামুন।
সারাবাংলা/আরডি/এমআই