স্কুলছাত্রী আত্মহত্যার নেপথ্যে ভিডিও ভাইরালের হুমকি, গ্রেফতার ১
২৪ মার্চ ২০২১ ১৬:০১
রংপুরের বদরগঞ্জে নবম শ্রেণির ছাত্রী আত্মহত্যার ঘটনার নেপথ্যে ছিল শারীরিক সম্পর্কের ভিডিও ধারণ করে ভাইরালের হুমকি। গত জানুয়ারিতে ঘটে এ ঘটনা। যদিও ভিডিও ভাইরালের আগেই লোকলজ্জার ভয়ে ওই ছাত্রী আত্মহত্যা করেন।
কিন্তু, আত্মহত্যার এক মাসে পরেই ভিডিওটি ভাইরাল করে দেয় অভিযুক্তরা। এ ঘটনায় জড়িত মূল অভিযুক্ত হাফিজুর রহমানকে (৪০) গ্রেফতার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। দুই স্ত্রী পরিত্যক্ত হাফিজুর কোতোয়ালীর ইউনিয়নের মেম্বর ইউনুস আলীর ছেলে।
বুধবার (২৪ মার্চ) রাজধানীর মালিবাগে সিআইডির মিডিয়া সেন্টারে রংপুর খুলনা বিভাগের ডিআইজি শেখ নাজমুল আলম এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানান। গত মঙ্গলবার (২৩ মার্চ) রাতে হাফিজুরকে আশুলিয়া থেকে গ্রেফতার করে সিআইডি।
এ বিষয়ে নাজমুল আলম বলেন, বদরগঞ্জে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী গত ৫ জানুয়ারি বিষপানে আত্মহত্যা করে। এই ঘটনার কয়েকদিন পর বিভিন্ন গণমাধ্যমের বরাতে আমরা জানতে পারি, স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর তিনি আত্মহত্যা করে। এই ঘটনায় কোতোয়ালী থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়। এরপর সিআইডি ঘটনাটি তদন্ত শুরু করে।
ডিআইজি শেখ নাজমুল আলম বলেন, হাফিজুর মেয়েটিকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে ধর্ষণ করে এবং তার সহযোগী বিপুল চন্দ্রকে (২৬) দিয়ে মুঠোফোনে ধর্ষণে ভিডিও ধারণ করেন তিনি। এই ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে একাধিকবার স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণ করে হাফিজুর রহমান।
তিনি বলেন, ভিডিওটি ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়ার পর স্কুলছাত্রী বিষপান করে। মেয়েটিকে বদরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নেওয়ার পর সেখানকার চিকিৎসকেরা তাকে রংপুর মেডিকেল হাসপাতালে নিতে বলেন এবং রংপুর মেডিকেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
তিনি বলেন, ভিডিওটি ওই এলাকায় ভাইরাল হলে স্কুলছাত্রীর পরিবার লোকলজ্জার ভয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে পুলিশ ইউডি মামলা করে। সিআইডি ছায়া তদন্ত করে প্রধান আসামি হাফিজুরকে গ্রেফতার করার পর মামলাটিরও তদন্তভার নিয়েছে।
এ সময় সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মুক্তা ধর বলেন, ধর্ষণের ভিডিও ধারণ করেছিল বিপুল চন্দ্র। হাফিজুর তাকে দিয়ে গোপনে এই ভিডিও করিয়েছে। তাকে গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তাকে গ্রেফতার করতে পারলে ঘটনার আরও বিস্তারিত জানা যাবে।
তবে হাফিজুর ধর্ষণ ও ভিডিও ধারণের কথা বিস্তারিত স্বীকার করেছে। তাকে আজকেই খুলনার সিআইডির কাছে হস্তান্তর করা হবে বলেও জানান তিনি।
মুক্তা ধর আরও বলেন, গত জানুয়ারির ৫ তারিখে ওই স্কুল ছাত্রী বিষ পানে আত্মহত্যা করে। এরপর ২২ ফেব্রুয়ারি ওই ছাত্রীর অশ্লীল ভিডিও ভাইরাল হয়ে পড়ে সর্বত্র। পরে ঘটনাটি তদন্ত করে স্থানীয় পুলিশ। কিন্তু কোনো আসামি গ্রেফতার না হওয়ায় তারা এগুতে পারেনি। এরপর পুলিশ হেডকোয়াটার্স থেকে গতকাল সিআইডির কাছে মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়। দায়িত্ব পেয়েই আমরা অভিযানে নেমে মূল অভিযুক্ত হাফিজুরকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হই। তবে অপর অভিযুক্ত বিপুল চন্দ্রকে গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
সারাবাংলা/এসএইচ/এনএস