Thursday 05 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

পরীক্ষিত নিরাপদ সিরিঞ্জে চলছে ভ্যাকসিন প্রয়োগ কার্যক্রম

সৈকত ভৌমিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
২৮ মার্চ ২০২১ ১৩:০৩

ঢাকা: নানা রকমের শঙ্কা ও গুজব কাটিয়ে দেশে ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয়েছে ভ্যাকসিন প্রয়োগ কার্যক্রম। এরই মধ্যে দেশের অর্ধ কোটিরও বেশি মানুষ এই ভ্যাকসিন নিয়েছেন। এই ভ্যাকসিন প্রয়োগে সিরিঞ্জের ব্যবহার নিয়ে কিছু প্রশ্ন রয়েছে অনেকেরই। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আমাদের দেশে করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন প্রয়োগের জন্য যে সিরিঞ্জ ব্যবহার করা হচ্ছে, সেটির গুণগত মান ও নিরাপত্তা নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই।

সিরিঞ্জের নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ও স্বাস্থ্য অধিদফতর বলছে, করোনা ভ্যাকসিন প্রয়োগের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হচ্ছে একটি বিশেষ ধরনের উন্নতমানের সিরিঞ্জ, যাকে বলা হয়ে থাকে অটো ডিজেবল সিরিঞ্জ। কোভিড-১৯ মহামারি সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে ভ্যাকসিন প্রয়োগে প্রায় পুরো বিশ্বেই এই সিরিঞ্জ ব্যবহার করা হচ্ছে। এর অন্যতম বৈশিষ্ঠ্য হলো- এটি দিয়ে একবার ভ্যাকসিন প্রয়োগের পরে তা আর ব্যবহার করা যায় না। আর এ কারণে এটিকে নিরাপত্তার মানদণ্ডে নিরাপদ বলেও স্বীকৃতি দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

বাংলাদেশে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন প্রয়োগে যে সিরিঞ্জ ব্যবহার করা হচ্ছে সেগুলো সরবরাহ করছে দেশীয় প্রতিষ্ঠান জেএমআই সিরিঞ্জেস অ্যান্ড মেডিকেল ডিভাইসেস লিমিটেড। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমতিক্রমে দেশের একমাত্র অটো ডিজেবল সিরিঞ্জ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান হিসেবে তারা এটি সরবরাহ করছে। এই ধরনের সিরিঞ্জ বিশ্বের অল্প সংখ্যক কোম্পানি উৎপাদন করে থাকে। একইসঙ্গে প্রায় সকল দেশে ভ্যাকসিন প্রয়োগ কার্যক্রম শুরু হওয়ায় বিশ্বব্যাপী এই সিরিঞ্জের চাহিদা বাড়ছে। যদিও বাংলাদেশ সরকার ইতোমধ্যেই জেএমআই সিরিঞ্জেস অ্যান্ড মেডিক্যাল ডিভাইসেস লিমিটেডকে তিন কোটি ৩০ লাখ অটো ডিজেবল সিরিঞ্জ সরবরাহের ক্রয়াদেশ দিয়েছে।

তবে এই সিরিঞ্জ বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো ব্যবহার হচ্ছে না। ধারাবাহিক ভ্যাকসিন প্রয়োগ কার্যক্রমেও এই সিরিঞ্জ ব্যবহার করা হয়ে থাকে। দেশে ভ্যাকসিন বিতরণ কমিটির সদস্য ও এমএনসিঅ্যান্ডএএইচ অপারেশনাল প্ল্যানের লাইন ডিরেক্টর ডা. মো.শামসুল হক সারাবাংলাকে বলেন, ‘বাংলাদেশে ভ্যাকসিন প্রয়োগ কার্যক্রম কিন্তু নতুন না। পুরো বছর নানা সময়ে আমরা ভ্যাকসিন প্রয়োগ করে থাকি ইমিউনিজেশন কার্যক্রমের অংশ হিসেবে। সে সময়েও জেএমআই’র সিরিঞ্জ ব্যবহার করা হয়ে থাকে। আর আমাদের দেশের স্বাস্থ্যকর্মীরা ভ্যাকসিন প্রয়োগ কার্যক্রমে এই সিরিঞ্জ ব্যবহারে অভ্যস্ত। তাই কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনেও আলাদাভাবে ভয়ের কিছু নেই। কারণ এটি নিরাপদ।’

জেএমআই হসপিটাল রিক্যুইজিট ম্যানুফ্যাকচারিং লিমিটেডের চেয়ারম্যান আবদুর রাজ্জাক সারাবাংলাকে বলেন, ‘বাংলাদেশে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন প্রয়োগে যেটা ব্যবহার করা হচ্ছে সেটাকে বলে অটো ডিজেবল সিরিঞ্জ (এডি)। এটা একটা ভিন্ন ম্যাকানিজমে তৈরি। একবার কারো শরীরে এটা পুশ করা হলে দ্বিতীয়বার আর এটা ব্যবহার করা যায় না। এই সিরিঞ্জের প্যাকেট খোলারও কিন্তু আলাদা নির্দেশনা আছে। প্রশিক্ষিতরা ছাড়া যে কেউ চাইলেই এটা ব্যবহার করতে পারবেন না। প্যাকেট থেকে এটা খোলার পরে ভ্যাকসিন পরিমাণ মতো নেওয়ার পরে সেটি প্রয়োগ করা হয়। এই প্রয়োগ শেষে সেটি আর কেউ চাইলেই ব্যবহার করতে পারবেন না। কারণ ওই সিরিঞ্জে আর তখন ভ্যাকসিন নেওয়া যাবে না।’

তিনি বলেন, ‘বিশ্বের ১০ থেকে ১২টি দেশে এই সিরিঞ্জ ব্যবহার করা হয়। এগুলোর আলাদা প্যাটার্ন রাইট থাকে। একইসঙ্গে এটা শুধুমাত্র সরকারের ইমিউনিজেশন ও কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন প্রয়োগের ক্ষেত্রেই ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এটা ব্যবহার বা উৎপাদনের জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রি-কোয়ালিফিকেশন সনদ থাকতে হয়। পিকিউএস সনদ ছাড়া কেউ চাইলেই উৎপাদন করতে পারবে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘২০০৭ সালে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একটা প্রোজেক্টের আওতায় এটি আমরা ডেভেলপ করি। সেই সময় থেকে দেশে একদিন বয়স থেকে শুরু করে ১৪ দিন বয়সী বাচ্চাদের ভ্যাকসিন দেওয়া হয়। ওই ভ্যাকসিন কার্যক্রমেও এই সিরিঞ্জ ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এটির কারিগরি সহযোগিতায় ছিল যুক্তরাজ্যের স্টার সিরিঞ্জ। এই প্রতিষ্ঠানটি কোরিয়া, জাপান ও বাংলাদেশের তিনটি কোম্পানির যৌথ উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত।’
আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে স্বাস্থ্য অধিদফতরের কাছ থেকে তিন কোটি ৩০ লাখ অটো ডিজেবল সিরিঞ্জের ক্রয়াদেশ পেয়েছি। একইসঙ্গে সরকারের নিয়মিত ভ্যাকসিন প্রয়োগ কর্মসূচির (ইপিআই) জন্য ৭ কোটি ১০ লাখ সিরিঞ্জের ক্রয়াদেশ দেওয়া হয়েছে আমাদের।’

এই সিরিঞ্জের চাহিদা দেশের বাইরেও আছে জানিয়ে জেএমআই হসপিটাল রিক্যুইজিট ম্যানুফ্যাকচারিং লিমিটেডের চেয়ারম্যান বলেন, ‘ইতোমধ্যেই আমরা ১৫ মিলিয়ন (দেড় কোটি) সিরিঞ্জ ইন্দোনেশিয়ায় পাঠিয়েছি। এছাড়া আরও চার থেকে পাঁচ মিলিয়নের মতো অর্ডার পেয়েছি। এমনকি ইউনিসেফও আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছে এই সিরিঞ্জ নেওয়ার জন্য।’

এদিকে জেএমআইকে তিন কোটি ৩০ লাখ সিরিঞ্জ সরবরাহের কার্যাদেশ দেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন ভ্যাকসিন বিতরণ কমিটির সদস্য ও এমএনসিঅ্যান্ডএএইচ অপারেশনাল প্ল্যানের লাইন ডিরেক্টর ডা. মো. শামসুল হক।

সারাবাংলা/এসবি/পিটিএম

করোনা ভ্যাকসিন প্রয়োগ কোভিড-১৯ নভেল করোনাভাইরাস নিরাপদ সিরিঞ্জ


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর