Friday 06 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

হঠাৎ মারমুখী বিএনপির সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ, শাহাদাতসহ আটক ১৬

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২৯ মার্চ ২০২১ ১৯:০৬

ফাইল ছবি: চট্টগ্রামে বিএনপির সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ

চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম নগরীর নাসিমন ভবনের সামনে সড়ক দখলে নিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশকে কেন্দ্র করে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে গুলি ছোঁড়ে। সংঘর্ষে ৬ পুলিশ সদস্যসহ অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। পুলিশ চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক শাহাদাত হোসেনসহ ১৬ জনকে আটক করেছে।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, সমাবেশে যোগ দিতে আসা ছাত্রদলের একটি মিছিল থেকে হঠাৎ পুলিশের ওপর আক্রমণ শুরু হয়। এরপর সড়কে মোটর সাইকেলসহ বিভিন্ন সরঞ্জামে আগুন দেয় বিএনপির কর্মীরা। অন্যদিকে বিএনপি নেতারা অভিযোগ করেছেন, পুলিশ বিনা উসকানিতে প্রথমে মিছিলে বাধা দেয় এবং পরে গুলিবর্ষণ শুরু করে তাদের সমাবেশ ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছে।

সোমবার (২৯ মার্চ) বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে নগরীর কোতোয়ালি থানার নূর আহমদ সড়কে নাসিমন ভবনের সামনে শুরু হওয়া এ সংঘর্ষের কারণে একঘণ্টারও বেশি সময় ধরে ওই এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের প্রতিবাদে হেফাজতে ইসলামের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে সংঘাতে সারাদেশে হতাহতের ঘটনায় বিএনপি দেশের সকল মহানগরে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিলের কর্মসূচি পালন করে। চট্টগ্রামে নাসিমন ভবনের সামনে সমাবেশের আয়োজন করা হয়।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিকেল তিনটার দিকে নাসিমন ভবনের সামনে কাজীর দেউড়িমুখী সড়কের একপাশ বন্ধ করে সমাবেশ শুরু করে নগর বিএনপি। কেন্দ্রীয় চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম এবং নগর কমিটির সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্করের নেতৃত্বে প্রায় হাজারখানেক নেতাকর্মীর একটি মিছিল ওই সমাবেশে যোগ দেয়। বিপুল উপস্থিতির কারণে ওই সড়ক দিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ানের নেতৃত্বে একটি মিছিল কাজীর দেউড়ির দিক থেকে সমাবেশে আসতে থাকে। নাসিমন ভবনের পাশে এস এ পরিবহনের কাউন্টারের সামনে পুলিশ তাদের সড়ক ছেড়ে ফুটপাত দিয়ে হেঁটে যাওয়ার নির্দেশ দেয়। এসময় মিছিল থেকে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাথর, ডাবের খোসা নিক্ষেপ শুরু হয়। পুলিশ তাদের ধাওয়া দেয়। শুরু হয় ধাওয়া, পাল্টা-ধাওয়া। অন্যদিকে সমাবেশ থেকেও পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ শুরু হয়। ফুটপাতে একটি মোটরসাইকেল, সড়কে কাঠের বাক্স এনে সেগুলোতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এছাড়া পুলিশ সদস্যদের হেলমেট ভাংচুর এবং জ্যাকেট ইউনিফর্মে আগুন দেওয়ারও অভিযোগ পাওয়া গেছে। কাজির দেউড়ির মোড়ে ট্রাফিক পুলিশের একটি বক্সে ভাংচুর চালানো হয়েছে। বিক্ষোভকারীদের কয়েকজনের হাতে ছোরা দেখা গেছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন।

একপর্যায়ে অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে। বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে পুলিশ কয়েক রাউন্ড শটগানের গুলি ও রাবার বুলেট ছোঁড়ে। নেতাকর্মীরা আশপাশের বিভিন্ন অলিগলি দিয়ে ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। সমাবেশ ভণ্ডুল হয়ে যায়। প্রায় একঘণ্টা পর পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে আসে।

ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেছে, নাসিমন ভবনের পাশে পুরাতন বিমান অফিসের গলিতে গুলির খোসা পড়ে আছে। ফায়ার সার্ভিসের একটি টিম এসে মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন সরঞ্জামে দেওয়া আগুন নেভায়। দামপাড়া পুলিশ লাইনের রিজার্ভ ফোর্সের কনস্টেবল প্রিয়াংকা মল্লিককে দ্রুত পুলিশের অ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে নিয়ে যেতে দেখা গেছে। তার মুখে মারাত্মক জখম দেখা গেছে। সেখানে দায়িত্বরত অন্য পুলিশ সদস্যরা জানিয়েছেন, বিএনপি কর্মীরা ইট দিয়ে আঘাত করে তার মুখ থেতলে দিয়েছে। আহত হয়েছেন রিজার্ভ ফোর্সের উপ-পরিদর্শক (এসআই) শেখ মোহাম্মদ ইব্রাহিম, একজন ট্রাফিক কনস্টেবলসহ অন্তত ছয় পুলিশ সদস্য।

নাসিমন ভবনের ভেতরে আশ্রয় নেওয়া রক্তাক্ত অবস্থায় একজনকে উদ্ধার করে পুলিশ হাসপাতালে নিয়ে যায়। ওই ব্যক্তি নিজেকে দিনমজুর বলে দাবি করেন। তবে পুলিশের দাবি, তিনি বিএনপির কর্মী। পুলিশ নাসিমন ভবনে দলীয় কার্যালয় ভবনে এবং পাশের একটি আবাসিক ভবনে অভিযান চালায়। সেখান থেকে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর নগর মহিলা দলের সভাপতি মনোয়ারা বেগম মণি, আঁখি সুলতানাসহ ১৫ জনকে আটক করে। এরপর সন্ধ্যায় নগরীর পাঁচলাইশে শাহাদাত হোসেনের মালিকানাধীন ট্রিটমেন্ট হাসপাতালে অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করে পুলিশ।

কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ নেজাম উদ্দিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘সড়ক অবরোধ করে বিএনপি সমাবেশ শুরু করে। এতে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। আমরা শুধু সড়ক ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধ করেছি। তারা আচমকরা ইট-পাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে। খবর পেয়ে আমি দ্রুত আসি। আমি গাড়ি থেকে নামার সঙ্গে সঙ্গে বৃষ্টির মতো ইট আর পাথর ছুঁড়তে শুরু করে তারা। তখন বাধ্য হয়ে আমরা ফাঁকা গুলি করেছি।’ পুলিশের হেলমেট ও জ্যাকেটে অগ্নিসংযোগের বিষয়ে ওসি বলেন, ‘এটা আমরা খতিয়ে দেখছি।’

নগর বিএনপির সাবেক সহ-দফতর সম্পাদক ইদ্রিস আলী সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের কেন্দ্রঘোষিত সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচি ছিল। সাড়ে তিনটার দিকে বক্কর ভাই ও শামীম ভাইয়ের নেতৃত্বে তিন পোলের মাথা থেকে স্বেচ্ছাসেবক দলের মিছিল নাসিমন ভবনের সামনে আসে। আমরা রাস্তায় সমাবেশ শুরু করি। সুফিয়ান ভাইয়ের নেতৃত্বে ছাত্রদলের একটি মিছিল আসে চট্টগ্রাম ক্লাবের সামনে থেকে। সেই মিছিল এস এ পরিবহনের সামনে আসার পর পুলিশ সামনে দাঁড়িয়ে বাধা দেয়। তারা বাধা উপেক্ষা করে এগিয়ে যেতে থাকলে পেছনদিকে পুলিশ লাঠিচার্জ শুরু করে। তখন ধাওয়া, পাল্টা-ধাওয়া শুরু হয়। প্রচুর নেতাকর্মী ছিল। পুলিশকে ধাওয়া দিয়ে লাভ লেইনের দিকে নিয়ে যায়। কিন্তু নেভাল মোড় থেকে আচমকা পুলিশ সমাবেশ লক্ষ্য করে বৃষ্টির মতো ‍গুলিবর্ষণ শুরু করে। পুলিশ আমাদের সমাবেশ ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছে।’

ইদ্রিস আলী জানান, কাজির দেউড়ির ভিআইপি টাওয়ারের সামনে থেকে নগর বিএনপির আহ্বায়ক শাহাদাত হোসেন ও যুবদলের সভাপতি মোশাররফ হোসেন দীপ্তির নেতৃত্বে যুবদলের একটি মিছিল সমাবেশের উদ্দেশে রওনা দেয়। কিন্তু ততক্ষণে সংঘর্ষ শুরু হয়ে যাওয়ায় তারা আর সমাবেশে পৌঁছাতে পারেননি। পরে শাহাদাত নগরীর পাঁচলাইশে ট্রিটমেন্ট হাসপাতালে নিজের চেম্বারে যান। পুলিশ সেখানে অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করে।

দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা মিছিল নিয়ে সমাবেশে যাচ্ছিলাম। কোনো কথা ছাড়াই পুলিশ গুলি করতে শুরু করে। আমাদের মিছিল ছত্রভঙ্গ করে দেয়। আমরা সমাবেশ পর্যন্ত পৌঁছাতে পারিনি।’

নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) এস এম মেহেদী হাসান সারাবাংলাকে বলেন, ‘কোনো কারণ ছাড়াই আচমকা তারা পুলিশের ওপর আক্রমণ শুরু করে। তাদের কর্মকাণ্ড দেখে আমাদের মনে হয়েছে, তারা সমাবেশের নামে এই অঞ্চলে অরাজক পরিস্থিতি তৈরির জন্য প্রস্তুতি নিয়ে জড়ো হয়েছিল। তাদের সঙ্গে জামায়াতের নেতাকর্মী ছিল বলেও আমরা তথ্য পেয়েছি। তাদের হঠাৎ আক্রমণে আমাদের ছয়জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। আমরা নাসিমন ভবন থেকে ১৫ জনকে আটক করেছি। পরে শাহাদাত হোসেনকে আমরা অন্য জায়গা থেকে আটক করি।’

এদিকে ‘শান্তিপূর্ণ’ কর্মসূচিতে পুলিশের অতর্কিত হামলার অভিযোগ করে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, ‘বিএনপি শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করছিল। পুলিশ সেখানে অতর্কিত হামলা চালিয়ে অনেককে আহত করেছে। বিনা উসকানিতে পুলিশ গুলি চালিয়েছে। আবার চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক শাহাদাত হোসেনসহ নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করেছে। আমরা পুলিশের এই নিপীড়ন-নির্যাতনের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। অবিলম্বে গ্রেফতার নেতাকর্মীদের মুক্তি দাবি করছি।’

সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম

আটক চট্টগ্রাম টপ নিউজ পুলিশ বিএনপি মারমুখী শাহদত সংঘর্ষ


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

সালমান শাহ্‌ স্মরণে মিলাদ মাহফিল
৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২০:০৩

নাফ নদীর মোহনায় ২ শিশুর মরদেহ উদ্ধার
৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৯:৪৯

সম্পর্কিত খবর