Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

পুলিশ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ৩২২ করোনা রোগী, খালি নেই আইসিইউ

উজ্জল জিসান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
১২ এপ্রিল ২০২১ ১০:৫২

ঢাকা: রাজারবাগের কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্ত পুলিশ সদস্যদের সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে। তবে করোনায় আক্রান্ত হয়ে যাদের অবস্থা গুরুতর, তাদের জন্য নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) সংকট দেখা দিচ্ছে। কেননা, এই মুহূর্তে একটি আইসিইউ বেডও খালি নেই পুলিশ সদস্যদের জন্য বিশেষায়িত এই হাসপাতালে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত বছর দেশে করোনা সংক্রমণ শুরু হলে সম্মুখসারির যোদ্ধা হিসেবে পুলিশ সদস্যরা একে একে আক্রান্ত হতে থাকেন করোনাভাইরাসে। তাদের চিকিৎসার জন্য একপর্যায়ে তেজগাঁওয়ের ইমপালস হাসপাতালের সঙ্গে চুক্তি হয় বাংলাদেশ পুলিশের। সেখানেই চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিল কোভিড আক্রান্ত পুলিশ সদস্যদের। পরে সংক্রমণের মাত্রা কমতে শুরু করলে ইমপালস হাসপাতালের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করা হয়। রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালেই চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে কোভিড আক্রান্ত পুলিশ সদস্যদের। মার্চ থেকে সংক্রমণের মাত্রা বাড়তে থাকলে এখন এই হাসপাতালেও চাপ বেড়েছে।

শনিবার (১০ এপ্রিল) দুপুরে রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, পুলিশ সদস্যদের করোনা পরীক্ষা অব্যাহত রয়েছে। একইসঙ্গে ভ্যাকসিন কার্যক্রমও চলছে। সেইসঙ্গে করোনা উপসর্গ দেখা দিলে পুলিশ সদস্যদের আইসোলেশনেও পাঠানো হচ্ছে।

হাসপাতালের সংশ্লিষ্টরা জানালেন, বাইরের কাউকে সচরাচর হাসপাতালে ঢুকতে দেওয়া হয় না। কঠোনা সংক্রমণ যেন না ছড়ায়, তা নিশ্চিত করতে কঠোর বিধিনিষেধও পালন করতে হয় হাসপাতালে দায়িত্বরত সবাইকে। চিকিৎসকদেরও ডিউটিও হয় পালা করে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে হাসপাতালের একজন চিকিৎসক সারাবাংলাকে বলেন, আমাদের এখানে কঠোরভাবে সবকিছু মনিটরিং করা হয়। এখানে সাধারণ বেড বেশকিছু খালি আছে। কিন্তু আইসিইউ বেড খালি নেই। একজনের বেড খালি হলে আরেকজনকে রাখতে হয়। যে পরিস্থিতি, সামনে আরও আইসিইউ বেড প্রয়োজন হতে পারে।

তিনি বলেন, আমরা হাসপাতালে রাখার চেয়ে কোয়ারেনটাইন কঠোরভাবে পালন করতে বলি। বারবার হাত ধোয়া, কারও সংস্পর্শে না যাওয়া, হ্যান্ড স্যানিটাইজ করা, আশপাশের পরিবেশ জীবাণুমুক্ত রাখা— এরকম সব স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে অনুসরণ করলে উপসর্গ থাকা ব্যক্তির কাছ থেকেও কেউ সংক্রমিত হবেন না। এসব স্বাস্থ্যবিধি সবাই মেনে চলছে সংক্রমণের হার আয়ত্তে আনা সম্ভব। পুলিশ সদস্যদের বেলায় ঠিক সেই কাজটাই করা হচ্ছে।

‘সবাই স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ না করলে হাসপাতালের বেড কত বাড়াবেন? রোগী বাড়তেই থাকলে এত চিকিৎসকই বা কোথায় পাবেন?’— প্রশ্ন রাখেন এই চিকিৎসক।

হাসপাতালের দায়িত্বপ্রাপ্ত কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, কেন্দ্রীয় এই পুলিশ হাসপাতালে মোট শয্যা সংখ্যা ৫০০০, এর মধ্যে ১৫টি আইসিইউ। বর্তমানে কেবল করোনাভাইরাসে আক্রান্তদেরই ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে এখানে। বর্তমানে তাদের সংখ্যা ৩২২ জন। এর মধ্য থেকে সংকটাপন্ন ১৫ জনকে রাখা হয়েছে আইসিইউতে। অর্থাৎ হাসপাতালে কিছু সাধারণ বেড ফাঁকা থাকলেও আইসিইউ খালি নেই একটিও।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পরিস্থিতির আরেকটু অবনতি হলেই আরও বেশি আইসিইউ প্রয়োজন হবে এই হাসপাতালে। কিন্তু এই মুহূর্তে আইসিইউ বাড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। ফলে খুব শিগগিরই হাসপাতালটিতে আইসিইউ সংকট দেখা দিতে পারে।

পুলিশের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী সবশেষ শুক্রবার (৯ এপ্রিল) ভোর পর্যন্ত প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে পুলিশ বাহিনীর ৮৯ জন সদস্যের মৃত্যু হয়েছে। এ তালিকায় রয়েছেন ৮৩ জন পুলিশ সদস্য। বাকি ছয় জন বিভিন্ন মন্ত্রণালয় থেকে এসে পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটে দাফতরিক কাজে সংযুক্ত ছিলেন।

একই সময়ে পুলিশের মোট ২০ হাজার ৭৩ জন সদস্য করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে পুলিশ বাহিনীর সদস্য ১৭ হাজার ৪৬২ জন, র্যাব সদস্য ২ হাজার ৬১১ জন। এর মধ্যে আবার ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) সদস্য রয়েছেন ৩ হাজার ৩৯০ জন। করোনায় আক্রান্ত পুলিশ সদস্যদের মধ্যে অবশ্য ১৯ হাজার ২০০ জন এরই মধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। আর হাসপাতালে ভর্তি ৩২২ জন ছাড়াও বিভিন্ন উপসর্গ নিয়ে কোয়ারেনটাইন বা আইসোলেশনে রয়েছেন আরও ২১৩ পুলিশ সদস্য।

জানতে চাইলে পুলিশ সদর দফতরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি মিডিয়া) মো. সোহেল রানা সারাবাংলাকে বলেন, করোনায় আক্রান্ত পুলিশ সদস্যদের সর্বোচ্চ চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। আর কেবল চিকিৎসা নয়, তাদের মনোবল বাড়াতেও নানা ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে এবং সেগুলো বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এখানে অন্যদের চেয়ে পুলিশ সদস্যদের বিষয় একটু আলাদা। কেননা, সাধারণ মানুষ শুধু আক্রান্ত হলে তাদের নিজের চিকিৎসার কথাই কেবল ভাবতে হচ্ছে কিন্তু পুলিশকে চিকিৎসার পাশাপাশি জনগণের সেবার কথাও ভাবতে হচ্ছে।

সোহেল রানা আরও বলেন, সরকার সামনে কঠোর লকডাউন দিতে যাচ্ছে। লকডাউন বাস্তবায়নে সেই পুলিশকেই সামনের সারিতে থেকে ভূমিকা পালন করতে হবে। নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। তার জন্য চলছে পুলিশের প্রস্তুতি। পুলিশ সবসময়ই প্রস্তুত থাকে, তারপরও মানসিক প্রস্তুতির বিষয় থাকে। সেগুলো নিয়ে কাজ চলছে।

সারাবাংলা/ইউজে/টিআর

করোনাভাইরাস পুলিশ হাসপাতাল


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর